শুক্রবার, ২৭ জুন, ২০২৫  |   ৩১ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৫:৫৭

জমি বিক্রির নামে প্রতারণা করে প্রবাসীর অর্থ আত্মসাৎ

প্রতিকার পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন প্রতিবন্ধী বাবা

শামীম হাসান
জমি বিক্রির নামে প্রতারণা করে প্রবাসীর অর্থ আত্মসাৎ
রফিকুল ইসলাম পাটওয়ারী

ফরিদগঞ্জে জমি বিক্রির নামে প্রতারণা করে কাজী শাহাদাৎ হোসেন নামে এক প্রবাসীর অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে রফিক পাটওয়ারী নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ফরিদগঞ্জ পৌরসভার কাছিয়াড়া গ্রামের।

ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, কাজী শাহাদাৎ একজন মালয়েশিয়া প্রবাসী। তিনি পৌরসভার কাছিয়াড়া গ্রামের কাজী মিজানুর রহমানের ছেলে। ২০২২ সালের শেষের দিকে ক্রয়ের জন্যে জমি অনুসন্ধান করলে বিষয়টি জানতে ফুফু খুকী বেগম ও তার স্বামী রফিকুল ইসলাম পাটওয়ারী শাহাদাতের বাড়ির কাছেই নিজেদের একটি জমি বিক্রয়ের প্রস্তাব করেন। লোকেশন এবং জমি পছন্দ হওয়ায় তারা লেনদেনে সম্মত হন। ২৪ নভেম্বর ২০২২ তারিখে তিন শত টাকার স্ট্যাম্পে তারা বায়না চুক্তিতে আবদ্ধ হন। বায়না বাবদ বিভিন্ন সময়ে তাদের মধ্যে মোট ৯ লক্ষ টাকার লেনদেন হয়। এক পর্যায়ে উল্লেখিত জমি পরিমাপ করে বুঝিয়ে দিতে গেলে জানা যায় জমিটি রফিকুল ইসলাম পাটওয়ারীর নয় বরং তার ভাই সিরাজুল ইসলাম পাটওয়ারীর। ইতোমধ্যে সিরাজুল ইসলাম পাটওয়ারীর ওয়ারিশগণ জমিটি তাদের নামে নামজারি করে নিয়েছেন এবং জমিটিতে তারা দখলে রয়েছেন। ফলে জমি না পেয়ে টাকা ফেরত দিতে চাপ দেন কাজী শাহাদাৎ ও তাঁর পিতা কাজী মিজানুর রহমান। শুরুতেই ৪ লক্ষ টাকা ফেরত দেন রফিকুল ইসলাম পাটওয়ারী। অবশিষ্ট ৫ লক্ষ টাকা ফেরত দিতে টালবাহানা করেন তিনি। টাকা ফেরতের তাগাদা দিলে আওয়ামী লীগের সক্রিয় সমর্থক হওয়ায় তিনি দলের প্রভাব খাটাতে শুরু করেন। বিষয়টি মীমাংসা করতে শাহাদাৎকেও দেশে আসতে বাধ্য করেন তিনি। এরপরও মীমাংসা না হওয়ায় বিষয়টি পৌর মেয়রের আদালতে গড়ায়। সেখানে একাধিক ধাপে শুনানি শেষে ১৪ মে ২০২৪ তারিখে দুই কাউন্সিলর জাকির হোসেন গাজী ও মোহাম্মদ হোসেনের উপস্থিতিতে অবশিষ্ট ৫ লক্ষ টাকা ফেরতের আদেশ দেন তৎকালীন পৌর মেয়র আবুল খায়ের পাটওয়ারী। আদেশ প্রদানকালে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মধ্যে বাদী-বিবাদী উভয়ের প্রতিবেশী আব্দুর রাজ্জাক বাবুল ও মো. হানিফ কাজী উপস্থিত ছিলেন। এরপরও নানান বাহানায় টাকা ফেরত দেননি রফিকুল ইসলাম পাটওয়ারী। টাকা ফেরত চাইলে উল্টো অশোভন আচরণ ও হুমকি-ধমকি প্রদান করেন তিনি।

এ বিষয়ে কাজী মিজানুর রহমান বলেন, আমি একজন প্রতিবন্ধী মানুষ। ছেলের রুজির উপরেই আমার পুরো পরিবার। আমার বোন এবং ভগ্নিপতি আত্মীয়তার সুযোগ নিয়ে জমির ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে বিভ্রান্ত করে আমার ছেলের টাকা নিয়েছে। টাকা ফেরত চাইলে আত্মীয়তার সম্পর্ক অস্বীকার করে এতোদিন আওয়ামী লীগের পাওয়ার দেখিয়েছে। এখনো টাকা ফেরত দেওয়ার কোনো তৎপরতা তার নেই। শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় দৌড়ঝাপ করা আমার জন্যে কঠিন। তারপরও সমাজের দায়িত্বশীল মহলের যাদেরকেই জানিয়েছি সমাধান করতে গিয়ে তারাই রফিকের দ্বারা অবমূল্যায়িত হয়েছেন। গালমন্দের শিকার হয়েছেন। রফিকের খুঁটির জোর কোথায় আমি জানি না। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে আমার বিনীত আবেদন, তারা যেন আমার ছেলের টাকাটা ফেরত পাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন।

ভুক্তভোগী কাজী শাহাদাৎ মুঠোফোনে সাংবাদিকদের বলেন, আত্মীয় হিসেবে তার প্রতি আস্থা রেখে আমি প্রতারিত হয়েছি। ২৪-এর গণবিপ্লবে আমরা প্রবাসীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছি। অথচ স্বৈরাচার সরকারের সমর্থক রফিক পাটওয়ারী এখনো আমার পাওনা টাকা না দিয়ে উল্টো হয়রানি করে চলছে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একজন প্রবাসীবান্ধব সরকার। আমি একজন প্রবাসী হিসেবে আমার পাওনা অর্থ ফেরত পেতে সরকারের দায়িত্বশীল মহলের সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করছি।

অভিযুক্ত রফিক পাটওয়ারীর কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনিও আমার কাছে আসেন, মিজান কাজীকেও কষ্ট করে নিয়ে আসেন। এ সময় রফিক পাটওয়ারীর স্ত্রী খুকি বেগম ফোনে বলেন, আপনি কোন্ সাংবাদিক? কী লিখবেন আপনি শুনি? আপনার জন্যও কিন্তু রিপোর্ট আছে। বাবার উপর বাবা আছে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়