প্রকাশ : ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ২২:৫৬
দশ বছরেও নিজের খরিদকৃত সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত ফরিদগঞ্জের এক ব্যবসায়ী
প্রতিদিন নিজের খরিদকৃত সম্পত্তি তথা দোকানঘরের সামনে দিয়ে হাঁটাচলা করেন। ভাড়াটিয়া দোকানে বসে চা পান করেন, নাস্তা করেন। কিন্তু নিজের দোকান বলে দাবি করতে পারছেন না। অন্তরের এই জ্বালা গত প্রায় দশ বছর ধরে বয়ে বেড়াচ্ছেন ইউছুফ মিজি নামে এক ব্যবসায়ী। অথচ নিজের পরিবারের ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা এবং আর্থিক নিশ্চয়তার কথা ভেবে চলমান দোকানঘর কিনেন ইউছুফ নামে ওই ব্যবসায়ী। ইচ্ছে ছিলো কিছু অংশে নিজে ব্যবসা করবেন এবং বাকি অংশ ভাড়া দিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে চলবেন। কিন্তু বিধিবাম! জমি রেজিস্ট্রির পর খারিজসহ সরকারি নিয়মে তার নামে রেকর্ড হলেও ওই সম্পত্তির একটি অংশ গত প্রায় ১০ বছরেও বুঝে পান নি। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে বেশ কয়েকবার সালিস এবং ফরিদগঞ্জ থানায় বৈঠক হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। তার খরিদকৃত সম্পত্তি প্রতিপক্ষরা বছরের পর বছর দখলে রেখে তাকে অধিকার বঞ্চিত করছে। ঘটনাটি ফরিদগঞ্জ উপজেলার গৃদকালিন্দিয়া বাজারের।
|আরো খবর
জানা গেছে, রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের সাহেবগঞ্জ গ্রামের ইউছুফ মিজি ২০১৫ সালে গৃদকালিন্দিয়া বাজারস্থ ৩২২নং গৃদকালিন্দিয়া মৌজাস্থিত ২১নং খতিয়ানভুক্ত বি এস ১৮৬ দাগে .৭৫ শতক ভূমি মরহুম আইউব আলী খানের ছেলে মরহুম মাহবুবুর রহমান বাবুল খানের কাছ থেকে ১০ লক্ষ টাকা দিয়ে ক্রয় করেন। গৃদকালিন্দিয়া বাজারের মূল সড়কের পাশে অবস্থিত এই সম্পত্তিতে থাকা দোকানসমূহ বুঝিয়ে দিলেও ঝামেলা বাঁধে পরবর্তীতে। ইউছুফ মিজি .২৫ শতক একটি দোকান বুঝে পেলেও একটি মহল বাকি অংশ নিজেদের দখলে নিয়ে অদ্যাবধি ভাড়া আদায় করছে।
ইউছুফ মিজি জানান, গত প্রায় ১০ বছর ধরে তিনি তার খরিদকৃত দোকানঘর বুঝে পেতে অনেক চেষ্টা করেও সফল হতে পারেন নি। অথচ ওই সম্পত্তির জমা খারিজসহ সকল কাগজপত্র সম্পূর্ণ রয়েছে। তিনি এই জমির নিয়মিত ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করেছেন। কিন্তু খান বাড়ির সোহেল খান ও আপেল খান তার খরিদকৃত সম্পত্তিটি জোরপূর্বক দখলে রেখেছেন। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্যসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে কয়েক দফা সালিস হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। কয়েক মাস পূর্বে থানায় অভিযোগ দায়েরের পর সেখানে বৈঠক হলেও প্রতিবারই প্রতিপক্ষ আপেল খানরা কালক্ষেপণ করে বা নানা টালবাহানা করে আমাকে বঞ্চিত করছে। তারা খরিদকৃত সম্পত্তিটি জবরদখল করে রেখেছে। তাদের কাছে রীতিমতো জিম্মি দেশের সকল আইনকানুন। এমনটাই তারা দেখাচ্ছেন। এদের খপ্পরে তিনি সর্বস্বান্ত হয়েছেন। ব্যবসা- বাণিজ্য সব শেষ হয়ে গেছে। এর থেকে মুক্তি পেতে তিনি প্রশাসনের লোকজনের সহায়তা কামনা করেছেন। 'কাগজ যার জমি তার' সরকারের এই নীতি হলেও তিনি কেনো গত প্রায় দশ বছরে নিজের সম্পত্তিটি দখলে নিতে পারছেন না--সেটাই প্রশ্ন। তিনি বলেন, আমার সম্পত্তি যেই দাগে সেই দাগে ওনাদের কোনো সম্পত্তি নেই। জমি ক্রয়ের পর বাবুল খান তাকে পুরো সম্পত্তি বুঝিয়ে দিলেও আপেল খানরা জোরপূর্বক দোকানঘরে তালা মেরে দেয় এবং এক পর্যায়ে নিজেরা দোকান ভাড়া দিয়ে নিজেদেরও দখলদারিত্ব বজায় রেখেছে।
বাজারের ব্যবসায়ী জিকির আহম্মেদ বলেন, দখলদাররা খান বাড়ির লোকজন হওয়ায় এবং বাজারের ওপর তাদের প্রভাব থাকায় তারা ইউছুফ মিজির সকল কাগজপত্র বৈধ থাকা সত্ত্বেও অনৈতিকভাবে দখল করে রেখেছে। নাজির আহমেদ নামে একজন সালিস জানান, গত কয়েকমাস পূর্বে আমরা থানায় বৈঠকে বসি। সকল কাগজপত্র আমরা দেখে ইউছুফ মিজির প্রতিপক্ষ আপেল খানের সাথে কথা বললে তারা নানা বাহানা দিয়ে সময় ক্ষেপন করে। পরবর্তীতে এই বিষয়ে আর বৈঠক হয়নি। ইউছুফ মিজির কাগজপত্র বৈধ থাকলেও তাকে বছরের পর সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য আবুল খায়ের খান বলেন, বাবুল খানের কাছ থেকে ইউছুফ মিজি সম্পত্তি ক্রয় করার পর ঝামেলা মুক্ত হতে আমার দ্বারস্থ হয়। আমি নিজে সকল কাগজপত্র দেখে এবং অভিযুক্তদের সাথে কথা বলি। কিন্তু তারা নিজেদের পারিবারিক বিরোধ মিটিয়ে এই সমস্যার সমাধান করবে বললেও গত কয়েক বছর যাবত সমাধানে এগিয়ে আসছে না।
এ ব্যাপারে আপেল খান জানান, বাবুল খান প্রকৃত পক্ষে যতটুকু মালিক তার চেয়ে বেশি বিক্রি করেছেন। বিএস তার নামে হলেও ইতোমধ্যেই আমরা বিএস সংশোধনীর বিষয়ে আদালতে মামলা করেছি। ইউছুফের সাথে আমাদের কোনো বিরোধ নেই। তিনি যার কাছ থেকে জমি কিনেছেন তার ওয়ারিশ থেকে সম্পত্তি বুঝে নিক।