প্রকাশ : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২২:২০
রঘুনাথপুরে চালককে খুন করে রিকশা ছিনতাই
ক্লুলেস হত্যার রহস্য উদঘাটন মডেল থানা পুলিশের
চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন রঘুনাথপুর গ্রামের রাস্তার পাশের নালায় পড়েছিল রিকশা চালক মোঃ দুলালের (৫৩) লাশ। খবর পেয়ে গত ১৪ সেপ্টেম্বর সকালে লাশ উদ্ধার করে চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ। কারা কীভাবে তাকে খুন করে ফেলে রেখে যায়- কোনো সূত্রই ছিল না পুলিশের হাতে। ঠিক এমনই একটি ক্লুলেস মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের চৌদ্দ দিনের মাথায় পুলিশ চাঁদপুর লঞ্চ ঘাটের একটি দোকানের সিসিটিভির ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তথ্য প্রযুক্তি এবং গোপন তথ্যের ভিত্তিতে মোঃ শরীফ মাঝি (২৪), পিতা হাবিবুর রহমান মাঝি, সাং চাঁদপুর সদর উপজেলার হানারচর ইউপির দক্ষিণ গোবিন্দিয়া রাজারহাট (লতিফ মাঝির বাড়ি),নামে খুনিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। আসামির স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তার বাড়ির পুকুর থেকে নিহত দুলালের ছিনতাই হওয়া ব্যাটারি চালিত রিক্সার বিভিন্ন খন্ডিত অংশগুলো উদ্ধার করা হয়। সেই সাথে রিক্সার ব্যাটারিগুলোও উদ্ধার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চাঁদপুর পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিং করে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) সুদীপ্ত রায়।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃত আসামিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসা বাদে জানা যায়, গত ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিঃ রাত ১১টায় চাঁদপুর লঞ্চঘাটে গিয়ে ভিকটিম মোঃ দুলাল(৫৩) কে বয়স্ক দেখে তার ব্যাটারি চালিত রিকশাটি চুরি করার উদ্দেশ্য সদর উপজেলা লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের জনকল্যাণ বাজারে যাবার জন্য যাত্রী হিসেবে রিকশাটি ভাড়া করে। আসামি শরীফ গন্তব্যে যাওয়ার পূর্বে মসজিদের পাশ হতে একটি ইট নিয়ে রিকশায় ওঠে। চালক গাড়ি নিয়ে রঘুনাথপুর ইয়াকুব বেপারী বাড়ির নির্জনস্থানে পৌঁছলে শরীফ চালক দুলালকে রিকশা থামাতে বলে এবং সাথে সাথে ওই ইটটি দিয়ে তাকে পিছন থেকে মাথায় দুইবার আঘাত করলে সে রিকশা থেকে পড়ে যায়।তখন ঘাতক শরীফ রিকশা হতে নেমে চালকের মাথায় আরো দুইবার আঘাত করে মাথা থেতলে দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পার্শ্ববর্তী জলাশয় মরদেহটি ফেলে নিজেই রিকশা চালিয়ে জনকল্যাণ বাজার হয়ে তার গ্রামের বাড়িতে গোবিন্দিয়া রাজার হাটে চলে যায়।পরবর্তীতে বাড়ির বাগানে রেখে তার বসত ঘরে খাওয়া দাওয়া করে।পরে রিকশা খোলার যন্ত্রপাতি নিয়ে ব্যাটারিসহ রিকশাটি আলাদা আলাদা খুলে ফেলে। শরীফ এক পর্যায় রিকশার ব্যাটারি বাগানের ভিতর লুকিয়ে রাখে এবং রিকশার আলাদা করা অংশগুলো বাড়ির পুকুরে ফেলে রাখে।
এই হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিহত রিকশা চালক দুলালের স্ত্রী অজ্ঞাত আসামি করে
চাঁদপুর সদর মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।মামলা নং ৩৭,তারিখ ১৪-৯-২০২৩ খ্রিঃ।
এই খুনের ঘটনায় পুলিশ বিভিন্নস্থানে অভিযান পরিচালনা করে হত্যাকান্ডে জড়িত আসামি শরীফ মাঝিকে ২৭ সেপ্টেম্বর বুধবার রাত ৮টায় সদর থানাধীন বাগাদী ইউনিয়নের ইচলী এলাকার জনৈক ইয়াছিনের বেকারি হতে গ্রেফতার করা হয়।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চাঁদপুরের পুরানবাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ রাজীব শর্মা বলেন, রিক্সা চালানোর টাকাতেই সংসার চালাতেন মোঃ দুলাল।তার বাবার নাম মৃত রশিদ হাওলাদার। তিনি শহরের গুনরাজদী জনৈক কাওসারের বাড়ির ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। তার পরিবারে আছে স্ত্রী কোহিনুর বেগম, এক ছেলে নাহিদ ও সুরমা, পারভীন, সাদিয়া ও সোনিয়া নামে আরো ৪ কন্যা সন্তান। এছাড়াও মুক্তা নামে আরও এক কন্যা সন্তান মারা গেছে। খুনীকে শনাক্ত করতে পারায় এই পরিবারের মাঝে কিছুটা স্বস্তি এসেছে।
প্রেস ব্রিফিংকালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল ইয়াসির আরাফাত, চাঁদপুর সদর মডেল থানার ওসি মোঃ শেখ মহসীন আলম, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুরান বাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ রাজিব শর্মাসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীগণ উপস্থিত ছিলেন।