শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬  |   ২৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে 'আল্লাহু চত্বর'
  •   চাঁদপুর কণ্ঠৈর কলামিস্ট এএসএম শফিকুর রহমানের ইন্তেকাল
  •   নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পেল সেনাবাহিনী
  •   জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে’ প্রধান উপদেষ্টার ১০০ কোটি টাকার অনুদান
  •   মেঘনায় নিখোঁজ দুই ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার

প্রকাশ : ২৫ অক্টোবর ২০২২, ২২:৫২

শোক ও শ্রদ্ধায় স্মরণ করি তাঁকে

শ্রদ্ধেয় শিক্ষক ফিরোজ স্যারের ইন্তেকাল

অ্যাডঃ মিজানুর রহমান

অনলাইন ডেস্ক
শ্রদ্ধেয় শিক্ষক ফিরোজ স্যারের ইন্তেকাল
গণি মডেল হাইস্কুলের শতবর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপির কাছ থেকে সম্মাননা ক্রেস্ট গ্রহণ করছেন মোঃ ফিরোজ মিয়া।

প্রতিটি মানুষকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে-এটা চিরন্তন সত্য। জন্মের পর থেকেই মৃত্যু মানুষের নিত্যসঙ্গী। কিন্তু কিছু মানুষের মৃত্যু আমাদের হৃদয়কে নাড়া দেয় প্রতিনিয়ত। অবশ্য স্রষ্টার অমোঘ বিধান মানতেই হবে। এই চিরায়ত নিয়মেই অনন্তলোকে চলে গেলেন আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক মোঃ ফিরোজ মিয়া বিএ, বিএড। ২৩ অক্টোবর রাতে আমাদের সকলের প্রিয় ফিরোজ স্যার ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহে---রাজিউন)।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া থানার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন ফিরোজ স্যার। কিন্তু তাঁর পুরো কর্মজীবন কেটেছে চাঁদপুরে। ৭০ দশকের শুরুতে চাঁদপুর শহরের ঐতিহ্যবাহী গণি মডেল হাই স্কুলে বাংলা বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। মূলতঃ বাংলা বিষয়ের শিক্ষক হলেও অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তিনি ইংরেজিও পড়াতেন এবং তিনি অত্যন্ত সুনামের সাথে প্রায় ৪০ বৎসর যাবৎ এই স্কুলে শিক্ষকতা জীবন শেষ করে গত ২০০৭ সালে অবসরে যান। অবসরে যাওয়ার পরেও অন্তত ১০-১২ বৎসর তিনি চাঁদপুরে থেকে যান। তাঁর শিক্ষণ পদ্ধতি ও অভিজ্ঞতা এতোই বেশি ছিল যে, চাঁদপুর শহরের অন্যান্য স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরাও লাইন ধরে ফিরোজ স্যারের কাছে পড়তো।

আমাদের সময়ে স্যার আমাদেরকে ৯ম ও ১০ম শ্রেণীতে বাংলা ১ম পত্র পড়াতেন। আমরা মনোযোগ দিয়ে তাঁর ক্লাস করতাম। সে সময়ে আমরাও স্যারের কাছে বাংলা ২য়পত্র এবং ইংরেজি ১ম ও ২য়পত্র প্রাইভেট পড়তাম। তখন একটি কথা চাঁদপুর শহরে বেশ প্রচলন ছিল যে, মেঘনা নদীর পূর্বপাড়ে বাংলা বিষয়ে ফিরোজ স্যারের মতো এতো অভিজ্ঞ পারদর্শী শিক্ষক সম্ভবত দ্বিতীয়জন নেই। মনে পড়ে, ১৯৭৮ সালে এই স্কুল থেকে এসএসসি পাস করার পর চাঁদপুর সরকারি কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হই এবং এইচএসসি পাস করার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগে ১ম বর্ষ অনার্সে ভর্তি হই। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বিভিন্ন ছুটিতে চাঁদপুর আসলে স্যারের সাথে দেখা হতো। স্যার পরম স্নেহে কাছে ডেকে নিয়ে বলতেন, বাবা ঠিকমত লেখাপড়া করো, তোমাদেরকে যে মানুষ হতে হবে, তোমরা আমাদের গর্বিত ছাত্র। একজন শিক্ষক হিসেবে তোমাদের কৃতিত্বে আমরা গর্বিত। ফিরোজ স্যারের কৃতী ছাত্ররা আজ অনেকেই দেশ-বিদেশে প্রতিষ্ঠিত। অনেকেই সিভিল প্রশাসন, পুলিশ, সশস্ত্র বাহিনী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী, শিক্ষক, ব্যবসায়ী কিংবা অন্য পেশাজীবী সংগঠনের উচ্চ শিখরে প্রতিষ্ঠিত ।

৪-৫ বৎসর হয় ফিরোজ স্যার তাঁর কর্মময় জীবনের সুদীর্ঘকাল চাঁদপুরে কাটিয়ে বয়সজনিত অসুস্থতার কারণে অবশেষে আখাউড়ার তাঁর নিজ বাড়িতে চলে যান। কিন্তু তাঁর কর্মময় জীবনের বহু স্মৃতি ও কৃতিত্ব বহন করে চলবে গণি মডেল হাইস্কুল ও তাঁর প্রিয় ছাত্ররা অনাদিকাল পর্যন্ত। সর্বশেষ গত ২০১৭ সালে গণি মডেল হাই স্কুলের শতবর্ষ পূর্তি অনুষ্ঠানে তাঁর প্রিয় শিক্ষার্থীগণ অন্যান্য প্রাক্তন শিক্ষকের পাশাপাশি তাঁকেও একজন গুণী শিক্ষক হিসাবে সম্মাননা ক্রেস্ট ও অন্যান্য উপহারে ভূষিত করেন। স্যারের কথা বেশ মনে পড়ছে।

গত ২৩ অক্টোবর রোববার রাত ৩টা ৩০ মিনিটে বার্ধক্যজনিত কারণে প্রিয় ফিরোজ স্যার হঠাৎই চলে গেলেন না ফেরার দেশে। যার শুরু আছে শেষ নেই। তাঁর এই অনন্ত যাত্রায় তাঁর প্রিয় শিক্ষার্থীগণ ও তাঁর দীর্ঘদিনের সহকর্মীগণ শোকাভিভূত এবং শ্রদ্ধাবনত। আমরা তাঁর বিদেহী রুহের মাগফেরাত কামনা করছি। মহান আল্লাহ পাক তাঁকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন। আমিন।

সূত্র : অ্যাডঃ মিজানুর রহমানের ফেসবুক আইডি থেকে নেয়া।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়