ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশে চাঁদপুর পুরাণবাজার দাসপাড়া রাধাকৃষ্ণ গোপাল মন্দিরের ১৯তম বার্ষিক ধর্মীয় উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা গত ২২ ফেব্রুয়ারি বুধবার মন্দির প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনায় সপ্তাহব্যাপী শ্রী শ্রী তারকব্রহ্ম হরিনাম যজ্ঞানুষ্ঠানের গঙ্গা আবাহনের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পলাশ কুমার নাথ। এ উপলক্ষে বিকেলে আয়োজিত ধর্মীয় আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব নাছির উদ্দিন আহমেদ। তিনি অনুষ্ঠানের সফলতা কামনা করে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সকল ধর্মের মানুষ স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রণহণ করেন এবং তাদের রক্ত ও আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, স্বাধীন দেশে সকলেই তাদের স্ব স্ব ধর্ম পালন করবে এটাই বাস্তবতা। জাতির পিতার স্বপ্ন ছিলো সুখী সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠনের। এদেশের পাকিস্তানি দোসররা জাতির পিতার সেই স্বপ্ন পূরণ হতে দেননি, তারা নির্মমভাবে হত্যা করেন জাতির পিতাসহ তার পরিবার-পরিজনকে। আজ তাদের সেই দোসররা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নস্যাৎ করার জন্য গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তারা ধর্মের দোহাই দিয়ে আমাদের মাঝে বিরাজমান সম্প্রীতি বিনাশের চক্রান্ত করছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বেঁচে থাকতে তা কখনো সম্ভব হবে না উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, সকল ধর্মের মানুষ নিশ্চিন্তে তাদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন করবে--এটা তাদের রাষ্ট্রীয় অধিকার। সেই লক্ষ্যে কাজ করছেন প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। আমরা স্ব স্ব ধর্মের প্রতি অনুগত থেকেই দেশে বিরাজমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করবো। কারণ সকল ধর্মেই মানবতার কথা বলা হয়েছে, হানাহানি আর সন্ত্রাসের কথা বলা হয়নি। মানবতাই ধর্ম, সেই ধর্ম রক্ষায় আমরা সকলেই সচেষ্ট থাকবো।

শ্রীশ্রী রাধাকৃষ্ণ গোপাল মন্দিরের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য স্বপন সরকারের সভাপতিত্বে ও সদস্য পলাশ দাস রামের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তমাল কুমার ঘোষ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিমল চৌধুরী, রোটারিয়ান গোপাল চন্দ্র সাহা, পৌর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি নেপাল চন্দ্র সাহা ও সাধারণ সম্পাদক সুমন সরকার জয়। উল্লেখযোগ্য অতিথিদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন পুরাণবাজার পুলিশ ফাঁড়ির আইসি রাজীব শর্মা, শ্রীশ্রী রাধাকৃষ্ণ গোপাল মন্দিরের সেবাইত ও প্রতিষ্ঠাতা শ্রীমতি কৃষ্ণ লীলা দাসী (মাসীমা), সাবেক পৌর কমিশনার মাহফুজ বেপারী, জেলা জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক সরকার, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের নেতা লিটন সাহা, জুয়েল কান্তি নন্দু, গোবিন্দ সাহা, দাসপাড়া কালীমন্দিরের প্রধান উপদেষ্টা দুলাল চন্দ্র দাস, দাসপাড়া দুর্গা মণ্ডপ পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক গৌতম কুমার দাস, মন্দির কমিটির অন্যতম সদস্য পংকজ কুমার দাস, দিবাস দাস, সুভাষ মেম্বার প্রমুখ।

আলোচনা সভাশেষে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শতাধিক নর-নারী বাদ্য-বাজনা সহকারে নেচে-গেয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে পুরাণবাজার কলেজ ঘাট সংলগ্ন ডাকাতিয়া নদীতে গঙ্গা আবাহন সম্পন্ন করে মন্দির প্রাঙ্গণে ফিরে আসেন।

২৩ ফেব্রুয়ারি অরুণোদয় হতে ২৮ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার দিবাগত নিশি অবসান পর্যন্ত ৪৮ প্রহর ৬ দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হচ্ছে শ্রী শ্রী তারকব্রহ্ম হরিনাম যজ্ঞানুষ্ঠান। পরদিন ১ মার্চ বুধবার শ্রীমতি রুনা দাস (ঢাকা), শ্রীমতি কল্যাণী দেবী (ভারত), শ্রীমতি জয়া বর্মন (চাঁপাইনবাবগঞ্জ)-এর পরিবেশনায় মন্দির প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে শ্রীশ্রী রাধাগোবিন্দের অষ্টকালীন লীলা কীর্তন। ২ মার্চ বৃহস্পতিবার ভোরে নামযজ্ঞ সমাপন, নগর সংকীর্তন, জলকেলী, দধিমঙ্গল ও দ্বি-প্রহরে মহাপ্রভুর ভোগরাগ অন্তে মহাপ্রসাদ বিতরণ। উৎসবে নাম সংকীর্তন পরিবেশন করবেন রামসুন্দর সম্প্রদায় (পটুয়াখালী), গীতাঞ্জলী সম্প্রদায় (কুমিল্লা), মদনমোহন সম্প্রদায় (পটুয়াখালী), রাধাগোবিন্দ সম্প্রদায় (বরিশাল), ভক্ত জয়দেব সম্প্রদায় (গোপালগঞ্জ) ও রাইধ্বনি সম্প্রদায় (বরিশাল)। সপ্তাহব্যাপী ধর্মীয় উৎসবে সকলের আন্তরিক উপস্থিতি ও সহযোগিতা কামনা করেছেন শ্রীশ্রী রাধাকৃষ্ণ গোপাল মন্দিরের সেবাইত কৃষ্ণ লীলা দাসীসহ সেবক-সেবিকাবৃন্দ। এদিন আলোচনা পর্ব শুরুর পূর্বে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সুভাষ চন্দ্র রায় অনুষ্ঠানস্থলে আসেন এবং আয়োজকদের সাথে কুশল বিনিময়পূর্বক অনুষ্ঠানের সার্বিক সফলতা কামনা করেন।

বিশ্ব শান্তিকল্পে অনুষ্ঠিত পুরানবাজার দাসপাড়া শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ গোপাল মন্দিরের ১৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আলহাজ্ব নাছির উদ্দিন আহমেদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পলাশ কুমার নাথ, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তমাল কুমার ঘোষসহ ভক্তবৃন্দ।