প্রকাশ : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০
আজ চাঁদপুর কলেজের প্লাটিনাম জুবিলি ॥ উৎসবের শহর চাঁদপুর
অপেক্ষার পালা শেষ। ‘ঐতিহ্যের উৎকর্ষে উল্লাসের ৭৫ বছর’-এ প্রতিপাদ্যে আজ শুরু হতে যাচ্ছে মেঘনা পাড়ের বাতিঘর খ্যাত চাঁদপুর কলেজের প্লাটিনাম জুবিলি তথা ৭৫ বছরপূর্তি ও পুনর্মিলনী উৎসব-২০২৩। ২৪ ও ২৫ ফেব্রুয়ারি চাঁদপুর সরকারি কলেজ ও চাঁদপুর স্টেডিয়ামে বর্ণাঢ্য ও বর্ণিল আয়োজনে দুদিনব্যাপী এ উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। উৎসবে প্রধান অতিথি থাকবেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি। উৎসব উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক হচ্ছেন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর অসিত বরণ দাশ এবং সদস্য সচিব হচ্ছেন কলেজের প্রাক্তন ছাত্র পৌর মেয়র জিল্লুর রহমান জুয়েল।
চাঁদপুর সরকারি কলেজ হচ্ছে চাঁদপুর জেলার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। এটিকে মেঘনা পাড়ের বাতিঘর বলে অভিহিত করা হয়। এ কলেজটি কার্যত বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ। ১৭টি বিষয়ে স্নাতক সম্মান, ১৬টি বিষয়ে স্নাতকোত্তর (মাস্টার্স) ডিগ্রি এবং স্নাতক পাস কোর্স ও এইচএসসিতে পড়ার সুযোগ রয়েছে কলেজটিতে। প্রায় ১৭ হাজার শিক্ষার্থীর পদচারণায় মুখরিত এ শিক্ষাঙ্গনটি চাঁদপুর জেলা ও জেলাবাসীর অনন্য অহঙ্কারের বিষয়। বাংলাদেশে মহকুমা পর্যায়ে কলেজ প্রতিষ্ঠার বিষয়টি যখন নিতান্তই স্বপ্নের পর্যায়ে ছিলো, তখন চাঁদপুর কলেজ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়েছে এখানকার বিদ্যোৎসাহী ব্যবসায়ীদের কল্যাণে।
১৮৯৯ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ প্রতিষ্ঠার ২৩ বছর পর ১৯২২ সালে নোয়াখালী জেলায় ফেনী কলেজ, ৪২ বছর পর ১৯৪১ সালে কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানায় শ্রীকাইল কলেজ ও ৪৪ বছর পর ১৯৪৩ সালে নোয়াখালীর প্রসিদ্ধ বাণিজ্য কেন্দ্রে চৌমুহনী সালেহ আহমেদ ( এসএ) কলেজ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। তারপর বৃহত্তর কুমিল্লা ও নোয়াখালী জেলার মধ্যে চতুর্থ কলেজ হিসেবে ১৯৪৬ সালে চাঁদপুর কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। তার দু বছর পর ১৯৪৮ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজ ও মাদারীপুর কলেজ, ১৯৬১ সালে লক্ষ্মীপুর কলেজ, ১৯৬২ সালে ভোলা কলেজ, ১৯৬৩ সালে নোয়াখালী কলেজ, ১৯৬৪ সালে চাঁদপুর মহিলা কলেজ ও ১৯৭৮ সালে শরীয়তপুর কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। তৎকালীন চাঁদপুর মহকুমার চারপাশে নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, শরীয়তপুর ও ভোলায় কলেজগুলোর বিলম্বিত প্রতিষ্ঠার কারণে চাঁদপুর কলেজ প্রকৃত অর্থেই মেঘনা পাড়ের বাতিঘর হিসেবে উচ্চ শিক্ষার বিস্তারে মুখ্য ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় এবং সাফল্য অর্জন করে। কুমিল্লা জেলা সদরের বাইরে চাঁদপুর কলেজের পাঁচ বছর আগে শ্রীকাইল কলেজ প্রতিষ্ঠা পেলেও শিক্ষার্থী সঙ্কটে শুরু থেকেই ভীষণ হোঁচট খায় এবং ১৯৫৭ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত কলেজটি প্রায় ৬ বছর বন্ধ থেকে ১৯৬৩ সালে পুনরায় চালু হয়। এ কলেজটি প্রাচীনত্বে কিছুটা এগিয়ে থাকলেও চাঁদপুর কলেজ থেকে শিক্ষার্থীর দিক দিয়ে অনেক পিছিয়ে। শ্রীকাইল কলেজের শিক্ষার্থী সংখ্যা এখনও দু হাজার না হলেও চাঁদপুর কলেজের শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৭ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। সেজন্যে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের পর বৃহত্তর কুমিল্লা জেলায় নিরবচ্ছিন্ন পাঠদানে সবচে' প্রাচীন ও সফল উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান হচ্ছে চাঁদপুর কলেজই। এ কলেজটিকে ১৯৮০ সালে জাতীয়করণ তথা সরকারি করা হয়।
বেসরকারি ৩৪ বছর ও সরকারি ৪১ বছর মিলিয়ে এ কলেজটির ৭৫ বছরপূর্তি হয় ২০২১ সালের ৩১ মে তারিখে। সেমতে ওই বছরের ১ জুন মাইলফলক অর্জনের উপলক্ষটিকে প্লাটিনাম জুবিলি হিসেবে সাড়ম্বরে উদযাপনের যৌক্তিকতা ছিলো। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারী করোনার কারণে সেই উদযাপন আর সম্ভব হয়নি। অবশেষে বেটার লেট দ্যান নেভার প্রবাদ বাক্যটির আনুকূল্যে এক বছর আট মাস ২৩ দিন পর আজ ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ তারিখে শুরু হচ্ছে কলেজটির ৭৫ বছরপূর্তিতে প্লাটিনাম জুবিলির দুদিনব্যাপী জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান।
উৎসবে অংশগ্রহণের জন্যে ইতিমধ্যে প্রাক্তন এবং বর্তমান ৬ হাজার ২০০ জন শিক্ষার্থী নিবন্ধন করেছে। এর বাইরেও অতিথিসহ অনেকেই আছেন। সব মিলিয়ে ৭ হাজার লোকের মিলনমেলা হচ্ছে।
কলেজ অধ্যক্ষ প্রফেসর অসিত বরণ দাশ জানান, কলেজটি প্রতিষ্ঠার পর এ অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ চাঁদপুর সরকারি কলেজ পথচলার ৭৫ বছর পার করেছে। এর আগে সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করা হয়। এবার ব্যাপক আয়োজনে ২৪ ও ২৫ ফেব্রুয়ারি ৭৫ বছরপূর্তি তথা প্লাটিনাম জুবিলি উৎসব উদযাপন করা হবে। উৎসবের দ্বিতীয় দিন তথা আগামীকাল হবে বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রা শেষে আলোচনা, স্মৃতিচারণসহ দেশের জনপ্রিয় শিল্পীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
দুদিনব্যাপী উৎসবে যেসব কর্মসূচি থাকছে : ২৪ ফেব্রুয়ারি চাঁদপুর সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণে সকাল ১০টায় শুভেচ্ছা ও উপহার বিতরণ। এরপর বিকেল ৩টায় উৎসব প্রাঙ্গণে প্রবেশ, ৪টা ৩০ মিনিটে স্ন্যাকস্ ও চা চক্রে অংশগ্রহণ, সন্ধ্যা ৬টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও রাত ৯টায় নৈশভোজ। পরদিন অর্থাৎ ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে চাঁদপুর স্টেডিয়াম অভিমুখে আনন্দ শোভাযাত্রা। তারপর যথাক্রমে সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে সকালের নাস্তা, ৯টা ৪৫ মিনিটে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, ১০টা ৪০ মিনিটে স্মরণিকা ও তথ্যপঞ্জির মোড়ক উন্মোচন, ১০টা ৪৫ মিনিটে তথ্যচিত্র প্রদর্শনী, ১০টা ৫৫ মিনিটে স্ন্যাকস্ ও চা চক্রে অংশগ্রহণ, ১১টা ২৫ মিনিটে চাঁদপুর সরকারি কলেজ নিয়ে প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের ভাবনা, ১২টায় বর্তমান শিক্ষার্থীদের প্রতিভা উপস্থাপন, দুপুর ১টা ৫ মিনিটে মধ্যাহ্নভোজ, বিকেলে যথাক্রমে ৩টায় স্মৃতিচারণ, ৪টায় র্যাফেল ড্র ও বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, ৪টা ৩০ মিনিটে স্ন্যাকস্ ও কফি, সন্ধ্যা ৬টায় সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা ও রাত ১০টা মিনিটে অনুষ্ঠানের সমাপনী।
এদিকে ৭৫ বছরপূর্তি ও পুনর্মিলনী উৎসবকে ঘিরে চাঁদপুর শহর যেনো উৎসবের শহরে পরিণত হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবারই কলেজ ক্যাম্পাস প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে। হাজারো শিক্ষার্থী কলেজ ক্যাম্পাসে এসে একত্রিত হয়। তারা একে একে চেস্ট কার্ড, কুপন, ব্যাগসহ নির্ধারিত উপকরণ সংগ্রহ করে। এ সময় বহু বছর পর সাক্ষাৎ পাওয়া প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রী একে অপরকে আলীঙ্গন করে। কুশল বিনিময় করে।