প্রকাশ : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০
অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ মোঃ মোজাম্মেল হক পাটোয়ারী স্বনামধন্য হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক। চাঁদপুরের সুপ্রতিষ্ঠিত ইসলামিয়া হোমিও হলে তিনি নিয়মিত রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করেন। পাশাপাশি হোমিও চিকিৎসাবিজ্ঞানের প্রসারে নিরলস গবেষণা ও অধ্যাপনা করছেন। তিনি চাঁদপুর আদর্শ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ। তাঁর হাত ধরে বহু শিক্ষার্থী হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার জ্ঞান আহরণ করে মানুষের সেবায় নিয়োজিত আছেন। তিনি নানা সমাজসেবামূলক কাজে জড়িত আছেন। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা প্রসারে তাঁর পরিবারের ব্যাপক সুখ্যাতি রয়েছে।
ডাঃ মোঃ মোজাম্মেল হক পাটোয়ারীর বর্ণাঢ্য শিক্ষাজীবনে চাঁদপুর সরকারি কলেজের বর্ণিল স্মৃতি রয়েছে। রয়েছে এ কলেজের শিক্ষার্থীদের প্রতি শিক্ষকদের মন উজাড় করা ভালোবাসার কথা। যে স্মৃতি ও ভালোবাসা তাঁকে আজও আপ্লুত করে। দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের ধারাবাহিক সাক্ষাৎকার পর্বে মুখোমুখি হয়ে প্রাণের কলেজের ৭৫ বছরপূর্তিতে স্মৃতিগুলো বর্ণনা করেন তিনি।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা সম্পর্কে জানতে চাই।
ডাঃ মোঃ মোজাম্মেল হক পাটোয়ারী : আমার জন্ম হাজীগঞ্জ উপজেলার ৪নং দক্ষিণ কালচোঁ ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামের ঐতিহ্যবাহী পাটোয়ারী পরিবারে। আমার পিতা আলহাজ্ব ডাঃ মোঃ শামছল হক পাটোয়ারী। শিক্ষাজীবনের শুরু হয় রামপুর প্রাইমারি স্কুলে। মুক্তিযুদ্ধকালীন পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকারদের অত্যাচার-জ্বালাও-পোড়াওয়ের কারণে আমাদের রামপুর গ্রাম ও স্কুলের ঘরটি যখন পুড়িয়ে দেয়া হয়, তখন বাবা আমাদের দুই ভাইকে মতলব উত্তর উপজেলার সুজাতপুর নিয়ে যান এবং লুধুয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করান। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পুনরায় রামপুর হাইস্কুলে ভর্তি হই। ১৯৭৮ সালে আমি রামপুর হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করি।
চাঁদপুর কণ্ঠ : কত সালে, কোন্ শ্রেণিতে চাঁদপুর সরকারি কলেজে ভর্তি হন?
ডাঃ মোঃ মোজাম্মেল হক পাটোয়ারী : ১৯৭৯ সালে আমি চাঁদপুর কলেজে ভর্তি হই। তখন অধ্যক্ষ ছিলেন মোহাম্মদ দবির উদ্দিন স্যার। স্যারের সাথে আমার বাবার পূর্ব পরিচয় ছিলো। পরে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে এসে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন এ.ডব্লিউ.এম. তোয়াহা স্যার। চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে ১৯৮১ সালে এইচএসসি পাস করে ঢাকায় চলে যাই। ভর্তি হই সরকারি তুলারাম কলেজে। পরবর্তীতে ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে ভর্তি হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম. কম পাস করি।
চাঁদপুর কণ্ঠ : সে সময় কলেজের পরিবেশ কেমন ছিলো?
ডাঃ মোঃ মোজাম্মেল হক পাটোয়ারী : সে সময় প্রেসিডেন্ট জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর জেনারেল এরশাদের সরকার ক্ষমতায় আসেন। তখন কলেজে রাজনৈতিক অস্থিরতা ছিলো প্রচুর। মিছিলে মিছিলে মুখরিত ছিলো কলেজ ক্যাম্পাস। ইংরেজির শিক্ষক এবিএম ওয়ালিউল্যাহ স্যার, আবুল বাসেত স্যার, বাংলার শিক্ষক মুহাম্মদ খলিলুর রহমান স্যার, জয়সেন স্যার, অ্যাকাউন্টিংয়ের শিক্ষক শামছুল আলম স্যার, ম্যানেজমেন্ট ও ব্যাংকিংয়ের শিক্ষক ইকবাল হোসেন স্যার পড়াতেন। ইকবাল হোসেন স্যার পরে এ কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। ইংরেজি শিক্ষকের কথা ভোলার নয়, যা স্মৃতিতে আজও নাড়া দেয়। ছাত্রদের প্রতি স্যারের কড়া দৃষ্টি ছিলো। শার্টের বোতাম খোলা থাকলে বা মাথার চুল এলোমেলো থাকলে অর্থাৎ কোনো প্রকার অনিয়ম, অসুন্দর স্যারের চোখে পড়লেই ওই ছাত্রের কাছে গিয়ে বেঞ্চের উপর দাঁড় করাতেন। স্যারের নীতি ও আদর্শ হয়তো পালন করতে পারিনি, তবে তাঁর স্মৃতি কখনো ভোলা যাবে না। বাংলা শিক্ষক জয়সেন স্যার ও তাঁর পরিবার হোমিওপ্যাথি ঔষধ পছন্দ করতেন। তিনি জানতেন আমার বাবা একজন স্বনামধন্য হোমিও চিকিৎসক। তাই তিনি আমাকে মাঝে মাঝে ডিপার্টমেন্টে যেতে বলতেন এবং তাঁর জন্যে ওষুধ এনে দিতে বলতেন। কলেজ জীবনের স্মৃতি আসলেই ভোলার মতো নয়।
চাঁদপুর কণ্ঠ : কলেজের ৭৫ বছরপূর্তিতে আপনার অনুভূতি জানতে চাই।
ডাঃ মোঃ মোজাম্মেল হক পাটোয়ারী : বিগত এমন মিলনমেলায় অংশগ্রহণ করেছি আমি। আশা করছি, ৭৫ বছরপূর্তি উদযাপনেও থাকবো। প্রাক্তন সহপাঠী ও বন্ধুদের সাথে দেখা হবে, আলাপচারিতায় সময় কাটবে, এর চেয়ে ভালো লাগার আর কী হতে পারে। হয়তো ছাত্রজীবনের পর অনেকের সাথে দেখা হয়নি, উদযাপন উপলক্ষে সবার সাথে সাক্ষাৎ হবে। তাই ৭৫ বছরপূর্তি যারা আয়োজন করেছেন তাদের অন্তরের অন্তস্থল থেকে ধন্যবাদ জানাই।
চাঁদপুর কণ্ঠ : কলেজটি নিয়ে আপনার প্রত্যাশা/স্বপ্ন কী?
ডাঃ মোঃ মোজাম্মেল হক পাটোয়ারী : কলেজটি ১৯৮০ সালে সরকারি হয়েছে। তারপর শুনেছিলাম, শীঘ্রই কলেজটি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর হবে। কলেজটির ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে এবং হচ্ছে। ভবিষ্যতে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হলেই সকলের মনের প্রত্যাশা পূরণ হবে।