প্রকাশ : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০
১৯৭১ সালে সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশে যখন সবকিছুই একেবারে নূতনভাবে সাজানো হচ্ছে, তখন কলেজে পদার্পণ করেন রোটাঃ তমাল কুমার ঘোষ। এক কথায়, শিক্ষাব্যবস্থার নূতন ধারাবাহিকতার প্রথম সারথি। একেবারে নতুন আঙ্গিকে, নতুন পরিবেশে পড়াশোনা অর্জন করেন। কলেজ জীবনে সেইসব সোনালি মুহূর্ত তার স্মৃতিপটে আজও অমলিন।
রোটাঃ তমাল কুমার ঘোষ ১৯৭১-১৯৭২ সেশনে চাঁদপুর সরকারি কলেজে ভর্তি হন। এর কিছুদিন পর তিনি ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন। জন্মভূমি চাঁদপুরের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে পড়াশোনাকালীন সোনালি স্মৃতি তিনি আজও বয়ে বেড়ান। প্রাণের কলেজের ৭৫ বছরপূর্তি উপলক্ষে দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের ধারাবাহিক সাক্ষাৎকার পর্বে সে অনুভূতি ব্যক্ত করেন তিনি।
চাঁদপুর কণ্ঠ : কত সালে, কোন্ শ্রেণিতে চাঁদপুর সরকারি কলেজে ভর্তি হন?
রোটাঃ তমাল কুমার ঘোষ : ১৯৭১-১৯৭২ সেশনে আমি সায়েন্স বিভাগে চাঁদপুর সরকারি কলেজে ভর্তি হই। আমার রোল নং ছিলো ১৪০৩। অবশ্য বেশিদিন আমি এ কলেজে পড়াশোনা করতে পারিনি। পরে আমি ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ভর্তি হই।
চাঁদপুর কণ্ঠ : সে সময় কলেজের পরিবেশ কেমন ছিলো?
রোটাঃ তমাল কুমার ঘোষ : আগেই বলেছি, ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমি এ কলেজে ভর্তি হই। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার নূতন ধারাবাহিকতায় প্রথম সারথি হই আমরা। একেবারে নতুন আঙ্গিকে, নতুন পরিবেশের মুখোমুখি হই। ফলে অন্যরকম অনুভূতি কাজ করতো। কলেজ জীবনের সোনালি সেই সুখস্মৃতিগুলো আজও অমলিন।
কলেজের পরিবেশ মধুর ছিলো। তখন চাঁদপুর সরকারি কলেজ এবং মেয়েদের জন্যে চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজ ছিলো। ফলে পুরো জেলা তো বটে, অন্য জেলা থেকেও প্রচুর শিক্ষার্থী এখানে পড়াশোনার জন্যে আসতো। সহপাঠীদের সাথে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সুসম্পর্ক ছিলো। একটি মিলনমেলার মতো পরিবেশে আমরা আনন্দ সহকারে পড়াশোনা করতাম।
আমরা পুরাণবাজার থেকে ডাকাতিয়া নদী পার হয়ে কলেজে আসতাম। মনে বেশ প্রফুল্লতা অনুভব করতাম। কেননা স্কুলজীবনে ভাবনা ছিলো, কলেজে পড়লে পড়াশোনা কম, শুধুমাত্র একটি খাতা নিয়ে গেলেই পড়াশোনা হয়ে যায়! আসলে তা কিন্তু নয়।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার প্রিয় শিক্ষক এবং সহপাঠী ছিলেন কারা? তাদের সম্পর্কে কিছু বলুন।
রোটাঃ তমাল কুমার ঘোষ : শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের মধ্যে বদিউর রহমান স্যারের কথা ভীষণ মনে পড়ে। স্যার আমাকে অত্যন্ত আদর-স্নেহ করতেন। তিনি প্রথাগত শিক্ষার বাইরেও আমাদেরকে জীবনমুখি নানা শিক্ষাদান করতেন। নীতিবোধ ও আদর্শের শিক্ষাদান করতেন। স্যারের কাছ থেকে আমি জীবনচলার পাথেয় হিসেবে মূল্যবান অনেক কিছু শিখেছি। প্রাথমিক থেকে শিক্ষাজীবনের সব শিক্ষকই আমার প্রিয় ছিলেন। শিক্ষকদের আমরা বাবার মতো পরম শ্রদ্ধা করতাম। শিক্ষকরাও আমাদেরকে সন্তানের মতো ভালোবাসতেন।
পুরাণবাজার মধুসূদন হরিসভা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে আমি মাধ্যমিক পাস করি। সে সুবাদে কলেজ জীবনের অধিকাংশ বন্ধুই ছিলো পুরাণবাজারের। সবার নাম এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না। অনেকে প্রয়াত হয়েছেন, কেউ প্রবাসে বসবাস করছেন। মৃণাল সাহা, গোলাম মোস্তফা মুকুল, প্রেমানন্দ কুণ্ডু, সেলিম মিজি, সমর সাহা প্রমুখ আমার সহপাঠী।
চাঁদপুর কণ্ঠ : কলেজের ৭৫ বছরপূর্তিতে আপনার অনুভূতি জানতে চাই।
রোটাঃ তমাল কুমার ঘোষ : প্রাণের কলেজের ৭৫ বছরপূর্তিতে অংশ নিতে অধীর আগ্রহে আছি। ছাত্রজীবনের কত স্মৃতি মনের পটে উঁকি দেয়। সেসব স্মৃতির কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা বন্ধুদের খুঁজে পাবো এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে, যা ভাবতেই ভালো লাগে।
চাঁদপুর কণ্ঠ : কলেজটি নিয়ে আপনার প্রত্যাশা/স্বপ্ন কী?
রোটাঃ তমাল কুমার ঘোষ : এ কলেজটি চাঁদপুর জেলার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। এর মর্যাদা রক্ষা করতে হবে। আমার প্রত্যাশা, কলেজটি একদিন বাংলাদেশের সেরা কলেজে উন্নীত হবে।
চাঁদপুর কণ্ঠ : উল্লেখিত প্রশ্নের বাইরে আপনার কোনো কথা থাকলে বলুন।
রোটাঃ তমাল কুমার ঘোষ : আমরা যখন এ কলেজে পড়াশোনা করেছি, তখন এর পরিধি অনেক ছোট ছিলো। এখন বিশাল পরিধি। এজন্যে বর্তমান শিক্ষার্থীদের বলতে চাই, শুধুমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নিলে হবে না, বর্তমান বিশ্বের নানামুখি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নৈতিক ও কারিগরি শিক্ষার দিকে ঝুঁকতে হবে। বর্তমানে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলা হচ্ছে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে শিক্ষার্থীদের স্মার্ট শিক্ষাগ্রহণ করতে হবে। দক্ষতা ও মননের দিক থেকে আমাদের স্মার্ট হতে হবে। কারণ চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জও এই প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের মোকাবেলা করতে হবে। সময়ের সদ্ব্যবহার করে এগিয়ে যেতে হবে। পড়াশোনায় ফাঁকি দেয়া যাবে না। কেননা পড়াশোনায় ফাঁকি দেয়া মানে নিজের সাথে ফাঁকি দেয়া, যা অদূর ভবিষ্যতে ভালো ফল বয়ে আনে না।
উল্লেখ্য, রোটাঃ তমাল কুমার ঘোষ চাঁদপুর রোটারী ক্লাবের সাবেক সভাপতি, চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির বর্তমান সহ-সভাপতি। তিনি চাঁদপুর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের পুনঃনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক। পেশাগত জীবনে প্রথমে ঢাকা ওয়াসায় কিছুদিন কর্মরত ছিলেন। পরে পৈত্রিক নিবাস চাঁদপুরের পুরাণবাজারে ফিরে বাবার ব্যবসার হাল ধরেন। এছাড়া তিনি ধর্মীয়, সামাজিক ও বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত রয়েছেন।