প্রকাশ : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০
ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মরণ করার লক্ষ্যে চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজার একুশ উদযাপন পরিষদ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। চাঁদপুর জেলা সদরের মূল কার্যক্রম সম্পন্ন হয় মূলত পুরাণবাজার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। ৫৪ বছর ধরে একুশে উদযাপনের বিরল ধারাবাহিকতায় যারা আয়োজক হিসেবে ব্যতিক্রম, তাদেরই একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, রোটারিয়ান, সংস্কৃতি সংগঠক ও সংগীতশিল্পী নাসির উদ্দিন খান।
ভাষার মাস উপলক্ষে চাঁদপুর কণ্ঠে তাঁর সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো।
দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনি পুরাণবাজারে একুশ উদযাপনের সাথে যখন জড়িত হন তখন আপনি কী করতেন? কেনো জড়িত হন?
নাসির উদ্দিন খান : একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। ১৯৫২ সালের এ দিনে সালাম, রফিক, জব্বার, বরকতেরা বুকের রক্ত দিয়ে মায়ের বাংলা ভাষাকে রক্ষা করেছিলেন, কোটি কোটি বাঙালির মনের আশা জাগিয়েছিলেন, স্বপ্নকে রাঙিয়েছিলেন রক্তের অক্ষরে। তাঁদের স্মরণে চাঁদপুরের প্রধান ব্যবসায়িক এলাকা পুরাণবাজারে বহু বছর যাবৎ একুশ উদযাপন হয়ে আসছে। আমাদের এলাকার বড় ভাইয়েরা সবসময় মাতৃভাষা দিবস ও শহীদ দিবস পালনের কর্মসূচির আয়োজন করেন।
মধুসূদন হাইস্কুলের ছাত্র হিসেবে আমি এই একুশ উদযাপনের সাথে জড়িত হই। এরপর বঙ্গজ সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর সাথে জড়িত থাকি এবং সে সুবাদে ১৯৯০ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি পালনকালে বঙ্গজের সাথে পুরাণবাজারে একুশ উদযাপনের কর্মসূচিতে প্রথম অংশগ্রহণ করি।
দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ : একই সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় তথা একই ছাতার নিচে ঐক্যবদ্ধ থেকে এতোটা দীর্ঘ সময় একুশ উদযাপনে ব্যাপক কর্মসূচি পালনের পেছনে আপনাদের উদ্দেশ্য কী? সে উদ্দেশ্য কি সাধন হয়েছে?
নাসির উদ্দিন খান : একুশের জ্বালানো দীপশিখাই একাত্তরে অধিক উজ্জ্বল হয়ে রূপ নিয়েছিলো স্বাধীনতায়। আর বিশ্বের বুকে জন্ম হয় বাংলাদেশ নামের স্বাধীন ভূখণ্ডের। সেই চেতনায় আজও আমরা বড় ভাইদের সাথে সাংগঠনিকভাবে একই ছাতার নিচে ঐক্যবদ্ধ রয়েছি। সবাইকে একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে আমাদের এই চেষ্টা। তা ধরে রাখার জন্যে এখনো কাজ করে চলেছি।
দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ : একুশে উদযাপনে পুরাণবাজারে আর কতোদিন এতোটা অবিচ্ছিন্ন থাকতে চান?
নাসির উদ্দিন খান : আল্লাহপাক যতদিন বাঁচিয়ে রাখেন। আজীবন আমাদের এই অঞ্চলের একুশ উদযাপনে অবিচ্ছিন্ন থাকতে চাই।
দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনাদের অর্জন কী?
নাসির উদ্দিন খান : একুশের ধারাবাহিকতায় আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি। একুশেতে আমাদের জীবন উৎসর্গের সূচনা।
আমাদের এই মুক্তি ও স্বাধীনতার পেছনেও একটি চেতনা সক্রিয় ছিল। সেটি ছিল একটি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত এবং সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠন করা। এ দুটো চেতনাকে ধারণ করেই আমাদের একুশ উদযাপন। এর মাধ্যমে এলাকার শিক্ষা ও সংস্কৃতি চর্চা আমরা যে ধরে রাখতে পেরেছি, এটাই আমাদের অর্জন।
উল্লেখ্য, নাসির উদ্দিন খান বিখ্যাত ব্যবসায়ী পরিবারে জন্ম নেন। স্কুল জীবনে থেকে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত। তার পিতার নাম মরহুম আব্দুল মজিদ খান। নিতাইগঞ্জে বসবাস তার। পেশায় এখন একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে জড়িত। তিনি পুরাণবাজার একুশ উদযাপন পরিষদের বর্তমান সহ-সভাপতি। এছাড়া চাঁদপুর রোটারী ক্লাবের সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং বঙ্গজ সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক।