প্রকাশ : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০
চাঁদপুর সেচ প্রকল্পভুক্ত ফরিদগঞ্জ উপজেলার পৌরসভাসহ পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন অঞ্চলে খালে পানি না থাকায় বোরো আবাদ ব্যাহত হবার ঘটনায় দ্রুত ব্যবস্থাগ্রহণের তাগিদ দিয়েছে সেচ প্রতিবন্ধকতা নিরসন কমিটি। গত মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উপস্থিতিতে বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, কৃষি বিভাগের লোকজন, পাউবো ও বিএডিসি প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে এই সিদ্ধান্ত হয়।
জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে রোরো আবাদের জন্য জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে সেচপ্রকল্পভুক্ত খালে পানি আসার কথা থাকলেও ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত উপজেলার পূর্বাঞ্চলের গুপ্টি পূর্ব, গুপ্টি পশ্চিম, রূপসা উত্তর, রূপসা দক্ষিণ এবং পৌর এলাকায় কয়েকটি ওয়ার্ডে শত শত একর ফসলি জমি তৈরির পরও পানির অভাবে ধানের চারা লাগাতে পারছে না চাষীরা। বিষয়টি গণমাধ্যম কর্মীদের মাধ্যমে উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের নজরে আসলে পানি উন্নয়নে বোর্ডকে তাগাদা দেয়। কিন্তু কোনো কিছুই না হওয়ায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে প্রতিটি ইউনিয়নে বোরো মৌসুমে সেচ ব্যবস্থাপনা ও সেচ প্রতিবন্ধকতা নিরসন কমিটি করে দেয়া হয়। তাদেরকে সরেজমিন গিয়ে খালগুলোর চিত্র তুলে ধরার সাথে সাথে প্রতিবন্ধকতা বিষয়ে রিপোর্ট করার জন্য বলা হয়। এছাড়া কোন্ খালগুলো জরুরি ভিত্তিতে খনন প্রয়োজন হলে তার তালিকা চাওয়া হয়।
সভায় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানগণ খালগুলোর বর্তমান চিত্র তুরে ধলে বলেন। দখলে ও দূষণে প্রতিটি ইউনিয়নে সেচখালগুলো অস্তিত্ব সঙ্কটে রয়েছে। তাছাড়া অনেক খাল রয়েছে বহু বছর খনন করা হয় না। এগুলো ইতিমধ্যেই ভরাট হয়ে যাওয়ায় এবং ন্যাবতা না থাকায় এই দুরবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারা এই ব্যাপারে সমন্বিত ব্যবস্থাগ্রহণের দাবি জানান। তারা বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড একদিকে খাল খনন করছে, অন্যদিকে বিএডিসিও খাল খনন করছে। কিন্তু সমন্বয় নেই। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা এবং জনপ্রতিনিধিরা যদি একত্রিত হয়ে সমস্যা চিহ্নিত করে, পরবর্তীতে উপজেলা পরিষদ, প্রশাসন, কৃষি বিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বিএডিসি একত্রিত হয়ে এসব সমস্যা নিরসনে কাজ করে, তাহলে এ বছরের মতো ভবিষ্যতে আর সমস্যা হবে না। এছাড়া জেলা পরিষদ খালেরপাড় লিজ দিলেও লিজ গ্রহীতারা খাল দখল করে বসে থাকে। ফলে খাল খনন কর্মসূচি অনেকাংশে ব্যর্থ হয়। এই বিষয়টি জরুরিভাবে দেখা উচিত।
সেই প্রেক্ষিতে ৭ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডঃ জাহিদুল ইসলাম রোমানের উপস্থিতিতে ইউএনও তাসলিমুন নেছার সভাপতিত্বে তালিকা দেখে দ্রুত এই ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সেচখালে পানি সরবরাহ নিশ্চিতে প্রয়োজনে স্বেচ্ছাশ্রমে খাল খনন কর্মসূচি গ্রহণের জন্য জনপ্রতিনিধিদের অনুরোধ করা হয়। এছাড়া সামনের ৪০ দিনের কর্মসূচিসহ টিআর কাবিখার প্রকল্পকে কাজে লাগানোর বিষয়ে আলোচনা হয় সভায়।
এ ব্যাপারে বুধবার বিকেলে উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নুরে আলম জানান, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে পানি উন্নয়ন বোর্ড পানি না ছাড়ায় এই সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। এখন বোরো আবাদের জন্য এই পর্যন্ত ৬০৮টি সেচপাম্প চালু রয়েছে। ফলে খালে যে পরিমাণ পানি রয়েছে তা দিয়ে সেচপাম্পগুলো চলার কারণে পূর্বাঞ্চলে খালগুলোতে পানি যাচ্ছে না। তবে মঙ্গলবারের সভার পর খালে পানি সরবরাহ বাড়ায় আশা করছি দ্রুত সঙ্কট নিরসন হবে। এছাড়া আমরা খাল খননের জন্য তালিকা তৈরি করছি। দ্রুত তা উচ্চপর্যায়ে প্রদান করা হবে।
এদিকে ভুক্তভোগীরা জানান, একমাসের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও খালে পানি না থাকায় তারা বোরো আবাদ থেকে বঞ্চিত। হয়তবা তাদের জমিগুলো এবছর আবাদশূন্য থাকতে পারে।