প্রকাশ : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০
ফরিদগঞ্জে গ্রামীণ সড়ক নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগে কাজ বন্ধ রয়েছে। ঘটনাাটি উপজেলার ৪নং সুবিদপুর পশ্চিম ইউনিয়নের শোল্লা বাজার সংলগ্ন।
সুবিদপুর পশ্চিম ইউনিয়নে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস থেকে কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) প্রকল্পের গ্রামীণ সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়। এই বরাদ্দ দিয়ে ২৬০ ফুট রাস্তা নির্মাণের কথা ছিলো। এই প্রকল্পের কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। নামমাত্র কাজ করায় স্থানীয় লোকজনের চাপের মুখে কাজ বন্ধ করে চলে যায় চেয়ারম্যানের মনোনীত লোকজন। এ নিয়ে গত ৩১ জানুয়ারি মঙ্গলবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ দাখিল করেন ভুক্তভোগীরা। এ সময় কাজের গুণগত মান নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন স্থানীয়রা।
জানা যায়, সুবিদপুর পশ্চিম ইউনিয়নের শোল্লা পাটওয়ারী বাজার সড়কের জানে আলমের বাড়ির সামনে থেকে বেপারী বাড়ি অভিমুখে রাস্তার ফ্ল্যাট সলিং করে সিসি ঢালাই করার প্রকল্প রয়েছে। কিন্তু উক্ত কাজে কোনো নিয়মণ্ডনীতির তোয়াক্কা না করে মাটির উপর নিম্নমানের মালামাল দিয়ে ঢালাই কাজ শুরু করে। এ সময় স্থানীয় লোকজন বাধা দিলে তাদের উপর চড়াও হন চেয়াম্যানের ভাই ইমাম হোসেনসহ কয়েকজন। পরে স্থানীয় লোকজনের চাপের মুখে কাজ বন্ধ করতে বাধ্য হন তারা।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা যায়, ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকার কাবিটা প্রকল্পের কাজ এটি। রাস্তাটি ২৬০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৭ মিটার প্রস্থ করার কথা রয়েছে। প্রকল্পের সভাপতি করা হয় ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সৈকত মোল্লাকে। কাজের প্রথম ধাপের ৬০ হাজার টাকা উত্তোলন করা হলেও প্রকল্পের সভাপতি নিজেও জানেন না কবে থেকে কাজ শুরু হয়েছে। কাজটি পরিচালনা করেন ইউপি চেয়ারম্যানের ছোট ভাই ইমাম হোসেন।
স্থানীয় বাসিন্দা আলমগীর হোসেন, ইয়ামিন, ফয়সাল ও আবু তাহের বলেন, এই কাঁচা রাস্তাটি উপরে কোনো প্রকার কাজ না করে নিম্নমানের ইটের কনা দিয়ে ঢালাই শুরু করা হয়। পাশের এজিন পর্যন্ত লম্বা করে দিয়ে কোনো রকম দায়সারাভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা বাধা দিলে তারা আমাদের উপর চড়াও হয়। আমরা বাধ্য হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দিয়েছি। আমরা চাই সঠিকভাবে রাস্তার কাজটি সম্পন্ন হোক।
স্থানীয়রা আরো জানান, ইতিপূর্বে ইউনিয়ন পরিষদের অধিনে যতগুলো উন্নয়ন কাজ হয়েছে, একটা কাজেরও গুণগত মান সঠিক হয়নি এবং যতগুলো রাস্তার সলিং করা হয়েছে, বেশি সংখ্যক রাস্তার অস্তিত্ব পাওয়া যাবে না।
প্রকল্পের সভাপতি ও স্থানীয় মেম্বার সৈকত মোল্লা বলেন, আমি প্রকল্পের সভাপতি, আমি জানি না কবে থেকে কাজ শুরু করেছে। স্থানীয় লোকজন বলেছে কাজে অনিয়ম হচ্ছে। এ কথা শুনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি দায়সারাভাবে কাজ করছে চেয়ারম্যানের ছোট ভাই ইমাম হোসেন। আমি হট্টগোল দেখে ঘটনাস্থল থেকে চলে আসি।
চেয়ারম্যানের ছোট ভাই ইমাম হোসেনের কাছে মোবাইল ফোনে কাজের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেভাবে উপজেলা থেকে কাজ করতে বলেছে সেভাবে কাজ করছি। কোনো কিছু জানার থাকলে আমার ভাই চেয়ারম্যান ও ইউপি সচিবের কাছ থেকে জানেন। তিনি আরো বলেন, কাজ করার সময় ইউপি সচিব আমির ভাই দেখে গেছেন। আমার কাজে কোনো ধরনের অনিয়ম হয়নি।
এ বিষয়ে জানার জন্য চেয়াম্যান মহসিন হোসেনকে তার অফিসে গিয়ে না পেয়ে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার মিল্টন দস্তিদার বলেন, কাজ করার পূর্বে এই কাজ বাবদ ৬০ হাজার টাকা দিয়েছি। তিনি (চেয়ারম্যান) কাজ করার পূর্বে আমাকে জানালে আমি আমার অফিসের লোক পাঠাতাম। কিন্তু তিনি কাজে অনিয়ম করার জন্য আমাদের রাখেন নি। কীভাবে কাজ করার কথা জানতে চাইলে তিনি জানান, প্রথমত রাস্তা খুঁড়ে দু’পাশে ইট খাড়া করে এজিন দিবে। এরপর বালু ও ইট দিয়ে সম্পূর্ণ রাস্তা সলিং করবে এবং সিমেন্ট, বালু ও কংক্রিট দিয়ে ৩ ইঞ্চি ঢালাই দেয়ার কথা রয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাছলিমুননেছা বলেন, অভিযোগ পেয়েছি এবং আগামীকাল ঘটনাস্থলে গিয়ে সড়কটি দেখবো।