শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

নিম্নবেতনভুকদের খোঁজ নেন ক’জন?
পর্যবেক্ষক ॥

একটি কলেজের নিম্নবেতনভুক কর্মচারীর মেয়ে, দশম শ্রেণীর ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। পিতা বলেছেন, তার মেয়ের দীর্ঘদিনের পেট ব্যথাজনিত সমস্যা ছাড়া অন্য সমস্যা ছিল না। তার মেয়ে কারো দ্বারা প্ররোচিত হয়ে আত্মহত্যা করতে পারে এমনটি পিতা বিশ্বাস করেন না। সেজন্যে তিনি ময়না তদন্ত ছাড়া লাশ দাফনের জন্যে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট আবেদন করেছেন।

যদি মেয়েটি পেট ব্যথার কষ্ট সহ্য করতে না পারার কারণে আত্মহত্যা করে থাকে, তাহলে প্রশ্ন : তার দরিদ্র পিতা অর্থাভাবে মেয়েটিকে বড়ো ডাক্তারের প্রাইভেট চেম্বারে দেখাতে না পারেন, সরকারি হাসপাতালে গিয়ে কি বিনা ফিতে বড়ো ডাক্তার দেখানো ও বিনামূল্যে ঔষধ গ্রহণের সুযোগ পাননি? মেয়েটি কি বাবা বা পরিবারের অন্য সদস্যের প্রতি অভিমান করে আত্মহত্যা করলো? যদি তা-ই হয়ে থাকে, তাহলে সেটা বেদনাদায়ক।

এই কর্মচারীটি যে কর্মকর্তার অধীনে, তিনি যদি মাঝেমধ্যে তাঁর অধীন কর্মচারীটির খবর নিতেন, তাহলে তিনি হয়তো জেনে যেতেন মেয়ের পেট ব্যথার সমস্যা এবং নিজের পকেট থেকে, সহকর্মী সহ শিক্ষার্থীদের থেকে অর্থ জোগাড় করে মেয়েটির সুষ্ঠু চিকিৎসায় অবদান রাখতে পারতেন। কথা হলো, প্রতিটি কর্মক্ষেত্রে নিম্নবেতনভুক কর্মচারীর প্রতি তার বস কতোটা মানবিক? তিনি কি এমন কর্মচারীর পারিবারিক সমস্যা জানার সুযোগ পান?

একটি কলেজে একটি সংগঠন রাতে আয়োজন করলো একটি জমকালো অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানশেষে নৈশভোজ চলছিল। আয়োজকদের একজন প্যান্ডেলে জায়গা না পেয়ে অধ্যক্ষের রুমে বসে খাচ্ছিলেন। তাকে খাবার এনে দেয়া নিম্নবেতনভুক এমএলএসএসকে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি খেয়েছ? জবাবে সে বললো, স্যার, খাবো না, খাবার বাসায় নিয়ে যাবো। আমার মেয়েটি ক’দিন পর এসএসসি পরীক্ষা দিবে। পড়ালেখায় সে ভীষণ আন্তরিক ও পরিশ্রমী। কিন্তু তাকে মাছ-মাংস দূরে থাক, ডিমও খাওয়াতে পারি না। আজ কলেজ-ডিউটিতে আসার সময় সে বাসায় ফিরতে আমার রাত ১০-১১টা বাজবে শুনে কারণ জানতে চাইলো। আমি আপনাদের অনুষ্ঠানের কথা ও রাতে ভালো খাওয়াদাওয়া হবে সে কথা বললাম। তখন সে আবদারের স্বরে বললো, বাবা! আমার জন্যে সেখান থেকে কি একটু ভালো খাবার আনতে পারবেন? আমি মাথা নেড়ে বাসা থেকে এসেছি। মেয়েটি তাই রাতে না খেয়ে ভালো খাবার খেতে আমার ফিরার অপেক্ষায় থাকবে।

এমন কথা শুনে আয়োজক খাওয়া থামিয়ে ওই এমএলএসএসকে বললেন, আমার সামনে বাটিতে মাছ-মাংস যা আছে, তা আমার আর লাগবে না। আপনি কি নেবেন? বলতে না বলতেই সে দ্রুত একটি পলিথিন এনে তাতে সেই মাছ-মাংস ঢোকালো। তখন ওই আয়োজক বললেন, তুমি কিন্তু তোমার জন্যে বরাদ্দকৃত খাবার খাবে কিংবা নিয়ে যেতে ভুলবে না।

এই নিম্নবেতনভুকের পরিবারের খবর নেয়ার সুযোগ নিশ্চয়ই তার বসের হয় না। সে বসকে এবং বসের সহকর্মীদেরকে, অতিথিদেরকে মাঝে মধ্যে ভালো খাবার পরিবেশন করেন। কিন্তু সে নিজে খেতে পারে না। আর বাসায় স্ত্রী-সন্তানদের খাওয়ানোর সামর্থ্যও তার নেই। তার মতো এমন অবস্থা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নিম্নবেতনভুকদেরও। কিন্তু তাদের প্রতি মানবিক, সংবেদনশীল এবং তাদের পরিবারের খোঁজ নেয়ার ফুরসত অনেকেরই হয় না। এটা ঠিক নয়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়