প্রকাশ : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০
হাইমচর উপজেলার বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চল নীলকমল ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রামে একাধিক উঠোন বৈঠক ও মতবিনিময় সভা করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। গতকাল শুক্রবার এসব উঠোন বৈঠক ও মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এসব সভা অনুষ্ঠিত হয়। এসব উঠোন বৈঠকে নারী-পুরুষের ঢল নামে। গ্রামের মেঠো পথ হেঁটে শত শত বয়োবৃদ্ধ, বৃদ্ধা এবং নারীরা এসব উঠোন বৈঠকে অংশ নেন। ডাঃ দীপু মনি তাদের ভালোবাসায় সিক্ত হন। গ্রামের সাধারণ নারীরা দীপু মনিকে কাছে পেয়ে জড়িয়ে ধরেন এবং তাদের নিজেদের হাতে বানানো বিভিন্ন ধরনের ফুলের মালা তাঁকে পরিয়ে দেন। এ সময় দীপু মনি আবেগাপ্লুত হন।
উঠোন বৈঠক ও মতবিনিময় সভায় দীপু মনি আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, আমি আজকে একটি স্লোগান আপনাদের মাঝে শুনেছি। আপনারা স্লোগান দিয়েছেন- হাইমচরবাসী ধন্য, দীপু মনির জন্য। কিন্তু না। আমি বলবো- দীপু মনি ধন্য, হাইমচরবাসীর জন্য। আপনারা হাইমচরবাসী আমাকে ভোট দিয়েছেন বলেই বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আমাকে আজকের দীপু মনি তৈরি করেছেন। পর পর তিনবার আপনাদের ভোটে শেখ হাসিনা দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন, আমি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছি, এখন শিক্ষামন্ত্রী। তাই আমি আপনাদের কাছে ঋণী, শেখ হাসিনা আপনাদের কাছে ঋণী।
দীপু মনি বলেন, আজকে হাইমচরের চরাঞ্চলের চেহারা পাল্টে গেছে। মেঘনা নদী যেই উপজেলাটিকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে, সেই বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান পাল্টে গেছে। আজকে নীলকমল ইউনিয়নে এসে দেখলাম এখানে বিদ্যুৎ আছে। যা কয়েক বছর আগেও ছিল না। এই চরাঞ্চলে কোনোদিন বিদ্যুৎ আসবে তা বিশ্বাস করতে পারি নাই। আর এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই বিদ্যুৎ সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে নদীর তলদেশ দিয়ে শরীয়তপুর থেকে আনা হয়েছে। বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলে আজ বিদ্যুৎ দেখা যাচ্ছে, এটাই শেখ হাসিনার উন্নয়ন। দীপু মনি তাঁর বক্তৃতাকালে আবেগাপ্লুত হয়ে অনেকটা কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার পৈত্রিক বাড়ি চাঁদপুরে। বাবা-মায়ের সাথে চাঁদপুরে আসা-যাওয়া থাকলেও নদী ভাঙ্গন আগে কখনো দেখিনি। কিন্তু আমি যখন ২০০৮ সালে নির্বাচনী গণসংযোগে এই হাইমচরে এসেছি, তখন দেখেছি হাইমচরের নদী ভাঙ্গন। নদী ভাঙ্গনের সেই ভয়াবহ দৃশ্য দেখে তখন আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে বলেছিলাম আল্লাহ যদি কখনো আমাকে সুযোগ দেন, প্রথমে আমি এই হাইমচরের জনপদকে মেঘনার ভাঙ্গন থেকে রক্ষা করবো।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের সময় শেখ হাসিনা হাইমচরবাসীকে কথা দিয়েছিলেন যদি তারা নৌকা মার্কায় ভোট দেন, আর আওয়ামী লীগ যদি সরকার গঠন করতে পারে, তাহলে হাইমচরবাসীর দুঃখ নদী ভাঙ্গন থেকে তাদেরকে রক্ষা করা হবে। শেখের বেটি যে কথা দিয়েছেন সে কথা রেখেছেন। হাইমচরে স্থায়ী বাঁধ দেয়া হয়েছে। দীপু মনি বলেন, শেখ হাসিনা শুধু হাইমচরকে নদী ভাঙ্গন থেকে রক্ষা করা নয়, এখনো পর্যন্ত তিনি তাঁর প্রতিটি ওয়াদা রক্ষা করে চলেছেন। হাইমচরে অর্থনৈতিক জোনের কাজ এগিয়ে চলছে। নীলকমল ইউনিয়নের গাজীপুরের চর থেকে মধ্যচরের মাথা পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার বাঁধও ইনশাআল্লাহ হবে। দীপু মনি উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে বলেন, যেই শেখ হাসিনার সরকার এতোসব উন্নয়ন কাজ করছেন, সামনে নির্বাচনে আপনারা কাকে ভোট দিবেন? তখন সকলে সমস্বরে বলেন আমরা সবাই নৌকায় ভোট দিবো।
গতকাল শুক্রবার প্রথমে উঠোন বৈঠক হয় হাইমচরের নীলকমল ইউনিয়নের সাহেবগঞ্জ বাজারের বাচ্চু সরকারের বাড়িতে। সেখানে শত শত নারী অংশ নেন। এরপর দুপুরের পরে পুরাণ বাংলাবাজারের ওসমান প্রধানিয়া বাড়ি ও সৈয়দ মেম্বারের বাড়িতে অনুষ্ঠিত হয় উঠোন বৈঠক। বিকেলে নতুন সাহেবগঞ্জ বাজারে অনুষ্ঠিত হয় মতবিনিময় সভা। এই মতবিনিময় সভায় কয়েক হাজার নারী-পুরুষ অংশ নেন। এসব উঠোন বৈঠক ও মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন হাইমচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নূর হোসেন পাটওয়ারী। জেলা নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডাঃ জেআর ওয়াদুদ টিপু, সাংগঠনিক সম্পাদক তাফাজ্জল হোসেন এসডু পাটোয়ারী, অ্যাডভোকেট মজিবুর রহমান ভূঁইয়া, উপদেষ্টা এসএম সালাউদ্দিন, জেলা জজকোর্টের পিপি অ্যাডঃ রনজিত রায় চৌধুরী, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী অধ্যাপিকা মাসুদা নূর খান, সদস্য ও সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আবিদা সুলতানা, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জহির উদ্দিন মিজিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। এছাড়া হাইমচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হুমায়ুন প্রধানিয়াসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ, ইউপি চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান পাটওয়ারীসহ বিভিন্ন ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।