প্রকাশ : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০
ফরিদগঞ্জ উপজেলা সদরে প্রবেশের প্রায় সবক’টি সড়কেই অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। ফলে বর্তমানে ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধ নিয়ে প্রবেশ করতে হয় ফরিদগঞ্জ শহরে। ১৮ বছর পূর্বে প্রতিষ্ঠিত পৌরসভায় এখন পর্যন্ত গড়ে ওঠেনি বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। ফরিদগঞ্জ শহরে প্রবেশের সব পথেই রাস্তার পাশে যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে সরকারি কর্মকর্তা, স্কুল-কলেজে পড়ুয়া হাজার হাজার শিক্ষার্থীসহ পৌরবাসী। ময়লার দুর্গন্ধে নাক চেপে শহরে ঢুকতে হয় সকলকে। এই দুর্গন্ধ দিয়েই যেন স্বাগত জানানো হয় অফিস পাড়ায় ও শহরে আগতদের।
শহরের উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের পাশে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের একটি পুকুর পরিপূর্ণ হয়েছে ময়লা-আবর্জনায়। এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন পাশর্^বর্তী রামগঞ্জ উপজেলা ও ফরিদগঞ্জ উপজেলার লোকজনসহ উপজেলা সদরের অফিসপাড়ায় মানুষ চলাচল করে। এছাড়াও সব ময়লার ভাগাড়ের পাশেই রয়েছে বহু মানুষের বসবাস। ময়লা-আবর্জনা অন্যত্র ফেলার জন্যে বার বার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না তারা।
পৌরসভা সূত্র জানা যায়, ২০০৫ সালে ফরিদগঞ্জ পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯ দশমিক ৭৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ পৌরসভায় প্রায় ৫০ থেকে ৫৫ হাজার মানুষের বসবাস। ১৮ বছরের এই পৌরসভায় ২ বার ক্ষমতাসীন দলের মেয়র নির্বাচিত হলেও আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা তো দূরের কথা, নির্দিষ্ট ভাগাড় পর্যন্ত নির্মাণ করা হয়নি আজও। সব আবর্জনা ফেলা হচ্ছে শহরে প্রবেশের বিভিন্ন সড়কের পাশে।
বিগত ৫-৬ বছরেরও বেশি সময় ধরে ফরিদগঞ্জ শহরের আবর্জনা ফেলা হচ্ছে দক্ষিণ-পূর্ব দিক দিয়ে পৌর এলাকার প্রবেশমুখে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের পাশে। আর দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের ময়লা ফেলা হচ্ছে পৌর এলাকার আরেক প্রবেশমুখ চাঁদপুর-লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে অবস্থিত নবনির্মিত উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের সামনে। এতে ক্ষুণœ হচ্ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে নির্মিত এ ভবনটির সৌন্দর্য। পশ্চিমণ্ডউত্তর অংশের ময়লা ফেলা হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মরদেহ দাহ করার স্থান মহশ্মশানের পাশে ডাকাতিয়া নদীতে। এতে দূষিত হচ্ছে নদীর পানি, বিলুপ্ত হতে বসেছে নদীর মৎস্য সম্পদ। আশেপাশের মানুষের দুর্ভোগতো আছেই। উত্তর-পূর্ব অংশের ময়লা ফেলা হচ্ছে কেরোয়া ব্রীজের পাশ দিয়ে ডাকাতিয়া নদীতে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন বলেন, ময়লার গন্ধে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করাই আমাদের দায় হয়ে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা হোসেন গাজী বলেন, এই ময়লার গন্ধে আমার বাড়িতে কোনো ভাড়াটিয়া পাই না। দুর্গন্ধে নিজেরাও থাকতে পারি না। নিজের বাড়ি ফেলে যেতে পারি না, তাই কষ্ট হলেও বসবাস করছি।
ফরিদগঞ্জ এআর পাইলট মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজের বেশ ক’জন শিক্ষার্থী বলেন, ময়লার ভাগাড়ের পাশ দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করি। অনেক সময় আমাদের বমি আসে। আমাদের দাবি, পৌরসভা খুব দ্রুত এই ময়লা অন্যত্র সরিয়ে নিবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আশরাফ আহাম্মেদ চৌধুরী বলেন, খোলা জায়গায় ময়লা ফেলা আইন পরিপন্থি কাজ। ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকায় যে পরিমাণ ময়লা খোলা জায়গায় ফেলা হচ্ছে, এতে প্রচুর পরিমাণ মিথেন গ্যাস তৈরি হচ্ছে, যা মানব দেহের জন্য খুবই বিপজ্জনক। যে কোনো সময়ে আশেপাশে বসবাসকারীদের বড় ধরনের রোগ বালাই হতে পারে।
ময়লা আবর্জনার পাশে বসবাসকারী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা আকতার রুমা বলেন, আমাদের অফিসে আগত মৎস্য খামারিদেরসহ অফিস স্টাফদের অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এ ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধে। শুধু তাই নয়, আমাদের ফিশারীর মাছের পোনারও অনেক ক্ষতি হচ্ছে। এ বিষয়ে আমাদের পক্ষ থেকে বার বার পৌর কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানালেও কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি।
ফরিদগঞ্জ পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র আব্দুল মান্নান পরান বলেন, বিষয়টি আমাদেরও দৃষ্টিগোচর হয়েছে। বর্তমানে আমরা ময়লা-আবর্জনা পুড়িয়ে ফেলছি। আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি, জায়গা পেলে যাতে ময়লা রি-সাইকেল করা যায়।
এদিকে নিজ উপজেলার পৌর এলাকায় এমনটা জানতে পেরে স্থানীয়দের অনুরোধে ময়লার স্থান পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব হাবিবুর রহমান।