প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২:৩০
সারা বছর মাঠ ব্যবহারে আগ্রহ ও পরিকল্পনা নেই স্কুল কর্তৃপক্ষের

সুস্থ, সুন্দর ও আনন্দময় জীবনের জন্যে খেলাধুলার কোনো বিকল্প নেই। এর জন্যে প্রয়োজন খেলার উপযোগী সুন্দর মাঠ ও ভালো পরিবেশ। বালক-কিশোর, তরুণ, বালিকা-কিশোরী ও তরুণীদের খেলাধুলা চর্চার প্রতি ভালোবাসার কোনো কমতি নেই। তারা খেলাধুলা করতে চায়, অংশ নিতে চায়। কিন্তু তাদের সুযোগ নেই।
চঁাদপুর জেলা শহরের ব্যবসায়িক এলাকা পুরাণ বাজার। এখানে রয়েছে শতবর্ষের ঐতিহ্যবাহী মধুসূদন (হরিসভা) উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ। খেলাধুলার কর্মকাণ্ডে একটা সময় মুখর থাকতো এই মাঠ। কিন্তু সারা বছর এই মাঠ ব্যবহারে আগ্রহ ও পরিকল্পনা নেই স্কুল কর্তৃপক্ষেরÑএমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
স্থানীয় সূত্র জানায়, মধুসূদন হাই স্কুল মাঠ ব্যবহারের প্রধান দায়িত্ব স্কুল কর্তৃপক্ষের। সারা বছর সকল ক্রীড়া চর্চা তারা তাদের এই নিজস্ব মাঠে করবে, মাঠ ব্যবহারের বার্ষিক একটি কর্মপরিকল্পনাও থাকবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, তারা তাদের বার্ষিক ক্রীড়া কর্মসূচি শুধুমাত্র বার্ষিক ক্রীড়ানুষ্ঠানের মাঝে সীমাবদ্ধ রাখছে। নামকাওয়াস্তে টুকটাক খেলাধুলা ছাড়া বছরের প্রায় ১২ মাস তারা তাদের স্কুলের মাঠটি ব্যবহার করছে না। সারা বছর মাঠটি অন্যরা ব্যবহার করে টুর্নামেন্ট বা একদিনের প্রতিযোগিতা আয়োজন করছে।বর্ষাকালের অসময়ে বৃষ্টির মধ্যে খেলাধুলা করে মাঠটি নষ্ট করছে। এই মাঠের সুষ্ঠু ব্যবহারে স্কুল কর্তৃপক্ষের আগ্রহ নেই। অথচ খেলাধুলা খাতে শিক্ষার্থীদের থেকে টাকা নেয়া হয়। বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ছাড়া মাঠে তেমন কোনো খেলাধুলার চর্চা দূরে থাক, মাঠটি সংরক্ষণ করে রাখার দায়িত্বটুকুও পালন করছে না স্কুল কর্তৃপক্ষ। এই সুযোগে অন্যরা মাঠ ব্যবহার করছে।
অযত্ন-অবহেলার কারণে এক পাশে স্থায়ী ঝোপ জঙ্গল, উঁচু-নিচু খেলার অনুপযোগী মাঠ। স্থানীয় পর্যবেক্ষক মহল এটিকে বেওয়ারিশ গরুর মাঠ হিসেবে দেখছেন। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মধুসূদন হাই স্কুল মাঠ এখন মাদকসেবী, বখাটে ও কিশোর গ্যাং এবং গরুর মাঠে পরিণত হয়েছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করবে তা স্বাভাবিক নিয়ম। কিন্তু মধুসূদন উচ্চ বিদ্যালয়ের সুপরিসর খেলার জায়গা বা মাঠ থাকা সত্ত্বেও গ্রীষ্মকালীন ও শীতকালীন
ফুটবল, ক্রিকেট, হ্যান্ডবল, কাবাডি, অ্যাথলেটিকস্, ব্যাডমিন্টন, ভলিবল, বাস্কেটবল এসব খেলাধুলা চর্চা করার কোনোটারই আলামত এ মাঠে কারোরই চোখে পড়ছে না। লেখাপড়া, খেলাধুলা এবং স্কাউটিংÑএ তিনটি বিষয় খুবই অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। এদের একটিকে বাদ দিলে অপরটি পূর্ণতা পায় না। আমাদের দেশে জাতীয়ভাবে সাধারণত আন্তঃস্কুল, কলেজ খেলাধুলা অনুষ্ঠিত হয়। একটি গ্রীষ্মকালীন অপরটি শীতকালীন। এখন প্রশ্ন হলো, এই খেলাধুলাগুলো এই স্কুল মাঠটিতে কতোটুকু গুরুত্বের সাথে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে? সাধারণত এই স্কুল মাঠটি ব্যবহারেই বা কতোটুকু গুরুত্ব দেয়া হয়?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী এবং অভিভাবক জানান, নতুন শিক্ষা বছরের শুরুতে ভর্তির সময় খেলাধুলার ফি নেওয়া হয়। বছরে একবার বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠানের সময় কিছু খেলাধুলা সীমিত সময়ের জন্যে হয় আর খেলাধুলা হয়ে উঠে না। ইন্টার স্কুল ফুটবল ও ক্রিকেটের সময় ক্রীড়া শিক্ষকের দ্বারা বাছাই করে দল গঠন করা হয়। অন্য মাঠে গিয়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া ছাড়া নিজেদের মাঠ পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে ব্যবহার করা হয় না।এমনকি স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার সময়ও স্কুলের বড়ো মাঠ ব্যবহার করা হয় না।এজন্যে ফঁাকা মাঠ পেয়ে অন্যরা টুর্নামেন্ট ছাড়ে, প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। স্কুল মাঠের বেহাল দশা সম্পর্কে কর্তৃপক্ষ অবগত থাকলেও তারা সেদিকে নজর দিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। এর ফলে শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা ও অন্যান্য কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে, যেমনÑমাঠ পানিতে ডুবে থাকা, আবর্জনা, ঝোপ জঙ্গল, উঁচু-নিচু মাঠ বা গর্তে ভরা থাকা। শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে স্কুল মাঠের দুরবস্থার কারণে। এই সমস্যার সমাধানে স্কুল কমিটি ও প্রধান শিক্ষককে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক গণেশ চন্দ্র দাস বলেন, আমরা সবসময় স্কুলের নিজস্ব বড়ো মাঠ ব্যবহারে খুবই আন্তরিক। পাশাপাশি বিদ্যালয় অভ্যন্তরের মাঠটিও ব্যবহার হচ্ছে। এলাকার একমাত্র খেলার বড়ো মাঠ পেয়ে উন্মুক্তভাবেই সবাই এটিকে ব্যবহার করছে। কাকে কী বলবো! দীর্ঘদিন থেকে মাঠটি উন্নয়ন বঞ্চিত। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর এই মাঠটি সংস্কারের জন্যে স্থানীয়ভাবে যারা উদ্যোগ নিয়েছে, স্কুল কর্তৃপক্ষ তাদেরকে ২৫ হাজার টাকা দিয়েছে। মাঠ স্কুলের হলেও কাউকে কিছু বলতে পারছি না। স্কুল মাঠ ব্যবহারে কর্তৃপক্ষের কাছে কোনো অনুমতি পর্যন্ত নেয়ার প্রয়োজন মনে করা হয় না।
ক্রীড়া শিক্ষক ওয়াহিদুর রহমান লাবু জানান, ফুটবল, ক্রিকেট, দাবা, অ্যাথলেটিক্সহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় আমাদের বিদ্যালয় অনেক ট্রফি অর্জন করেছে। খেলাধুলা চর্চা হয় বিধায় আমরা ফুটবল ও ক্রিকেট সহ অন্যান্য ইভেন্টে সাফল্য পাচ্ছি। ফুটবল-ক্রিকেটের বাছাইপর্ব এবং প্রস্তুতি ম্যাচ আমরা এ মাঠেই করছি। বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার অ্যাথলেটিক্স ইভেন্টও বড়ো মাঠেই করা হয়।সুতরাং মধুসূদন হাই স্কুল মাঠ স্কুল কর্তৃপক্ষ ব্যবহার করছে।
কথায় বলে, স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। সুস্থ দেহে সুন্দর মন। রোগমুক্ত জীবনযাপন করতে হলে খেলাধুলার কোনো বিকল্প নেই। শৈশব এবং কৈশোর জীবনে খেলাধুলার গুরুত্ব অনেক। খেলাধুলা ছাড়া শিক্ষার্থীরা শারীরিক ও মানসিকভাবে বিকাশ লাভ করতে পারে না। খেলাধুলা শুধু শরীরকে সুস্থ রাখে না, এটি ছাত্র-ছাত্রী তথা মানুষকে শারীরিক ও মানসিকভাবে বিকাশ লাভের মাধ্যমে সুনাগরিক করে তোলে।
অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা আশা করেন, খেলাধুলার প্রসারে উপযুক্ত মাঠের ব্যবস্থা করে বর্তমান প্রজন্মকে সুস্থ সবল ও কর্মক্ষম হিসেবে গড়ে তুলতে স্কুল কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ নেবে।








