রবিবার, ১৮ মে, ২০২৫  |   ২৫ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে নেতাকর্মীদের ঢল

প্রকাশ : ১৭ মে ২০২৫, ১৯:১৪

MLAR-এর পথে বাংলাদেশ: আমিরাত থেকে পাচারকৃত হাজার কোটি টাকা ফেরত আনার চ্যালেঞ্জ

আরব আমিরাতে ছয় শিল্পগ্রুপ ও সাবেক শাসকগোষ্ঠীর পাচারকৃত হাজার কোটি টাকার সম্পদের সন্ধান, দেশে ফেরাতে আইনি অভিযানে নামছে বাংলাদেশ সরকার

বিশেষ প্রতিবেদক: মো জাকির হোসেন
MLAR-এর পথে বাংলাদেশ: আমিরাত থেকে পাচারকৃত হাজার কোটি টাকা ফেরত আনার চ্যালেঞ্জ
ছবি : প্রতীকী

আরব আমিরাতে অর্থপাচার: ৬ শিল্পগ্রুপ ও সাবেক শাসকদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু

শত কোটি টাকার সম্পদের খোঁজ, টাস্কফোর্সের তৎপরতা জোরদার

সংযুক্ত আরব আমিরাতে ছয়টি প্রভাবশালী শিল্পগ্রুপ ও সাবেক ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের শীর্ষপর্যায়ের ব্যক্তিদের নামে বিপুল পরিমাণ অর্থপাচারের প্রমাণ মিলেছে। নাম-বেনামে ফ্ল্যাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শেল কোম্পানি ও লগ্নি করা মূলধনের ওপর ভিত্তি করে দুর্নীতির জাল উন্মোচনে নেমেছে একাধিক সংস্থা। এসব সম্পদ দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকার গঠন করেছে আন্তঃসংস্থা টাস্কফোর্স এবং শুরু হয়েছে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট (MLAR) পাঠানোর প্রক্রিয়া।

তদন্তে বেরিয়ে আসা ৬ শিল্পগ্রুপ ও ব্যক্তিদের নাম

১. আরমিট গ্রুপ ও সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ:
সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও আরামিট গ্রুপের কর্ণধার সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদের নামে ও পরিবারের সদস্যদের নামে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাওয়া গেছে ২২৮টি অভিজাত ফ্ল্যাট। তিনি সেগুলো পুনরায় বেশি দামে বিক্রি করে পাচার অর্থ বৈধ করার চেষ্টাও করেছেন।

২. বেক্সিমকো গ্রুপ ও সালমান এফ রহমান:
তাঁর বিরুদ্ধে ৮ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার পাচারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব অর্থে শেল কোম্পানি গঠন করে আমিরাতে ব্যবসা পরিচালনার প্রমাণ মিলেছে।

৩. ওরিয়ন গ্রুপ ও ওবায়দুল করিম:
আলবেনিয়ার নাগরিকত্ব গ্রহণ করে সেই পরিচয়ে ইউএইতে বিনিয়োগ করেছেন। মালিকানা আড়াল রাখতে শেল কোম্পানি ব্যবহার করা হয়েছে।

৪. জেমকম গ্রুপ (প্রয়াত কাজী শাহেদ আহমেদের পরিবার):

আমিরাতে তাদের নামে ফ্ল্যাট, শোরুমসহ একাধিক ব্যবসায়িক স্থাপনার হদিস মিলেছে।

৫. নাসা গ্রুপ ও নজরুল ইসলাম মজুমদার:

পরিবারের সদস্যদের নামে একাধিক শেল কোম্পানি গঠন করে আমিরাতে ব্যবসার তথ্য পাওয়া গেছে।

৬. আরও একটি অনামিকা শিল্পগোষ্ঠী:
সংযুক্ত আরব আমিরাতের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহরে ১২ কোটি ৪০ লাখ টাকার বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের মালিকানা মিলেছে। ধারণা করা হচ্ছে, আরও সম্পদ রয়েছে অংশীদারদের নামে।

শেখ হাসিনার পরিবারের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়র সম্পদ

প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদে প্রভাবশালী এক আত্মীয়ের বিরুদ্ধেও পাচারকৃত অর্থে আমিরাতে সম্পদ অর্জনের প্রমাণ মিলেছে। রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সম্পদের একাংশ 'বেনিফিশিয়ারি' হিসেবে ব্যবহার করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজন।

তদন্ত সংস্থার তালিকা ও তাদের অগ্রগতি

  • বাংলাদেশ ব্যাংক
  • বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (BFIU)
  • দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)
  • বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (BSEC)
  • সিআইডি
  • জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR)

এই ছয়টি সংস্থা একযোগে তদন্ত চালাচ্ছে এবং তাদের প্রতিবেদন ভিত্তিতে ইতোমধ্যেই আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে।

সম্পদ উদ্ধারে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স চুক্তি (MLAT)

বাংলাদেশ ইতিমধ্যে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে MLAT সম্পাদন করেছে। এছাড়া ইউএইসহ আরও ১০টি টার্গেট দেশের সঙ্গে চুক্তির প্রচেষ্টা চলছে। আমিরাতের সঙ্গে চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে।

BFIU ও আন্তর্জাতিক সংস্থার ভূমিকা

BFIU এখন পর্যন্ত ৮১টি দেশের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করেছে। এর ফলে UAE-FIU থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য পাওয়া সম্ভব হচ্ছে।

সরকারের কূটনৈতিক ও আইনি পদক্ষেপ

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও টাস্কফোর্স প্রধান ড. আহসান এইচ মনসুর বর্তমানে ইউএই-তে অবস্থান করছেন। তিনি ইউএই-এর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অর্থপাচার দমন সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করছেন সম্পদ ফেরত আনার আইনগত ভিত্তি তৈরির লক্ষ্যে।

বিশ্লেষকদের মতামত

ড. মাহফুজ কবির বলেন: “এই উদ্যোগ একমাত্র কার্যকর হবে যদি সরকার এই মামলা ও তদন্তকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখতে পারে। না হলে পূর্বের মতোই ধামাচাপা পড়বে।”

সাইফুজ্জামান চৌধুরীর নামে ২২৮টি ফ্ল্যাটের হদিস মিলেছে। এটাই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় একক সম্পদ তালিকা।

ডিসিকে/এমজেডএইচ

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়