রবিবার, ০৪ মে, ২০২৫  |   ২৯ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ০৪ মে ২০২৫, ১২:৪৮

পরাক্রমশালী" প্রসিকিউটরের পতন?

ভুয়া পিএইচডি, ক্ষমতার অপব্যবহার, উত্তরার বাড়ি দখলের লড়াই—ব্যারিস্টার তুরিন

বিশেষ প্রতিবেদনক: মো. জাকির হোসেন
পরাক্রমশালী
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর এবং আলোচিত আইনজীবী ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ।ছবি সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটরের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ

আলোচিত আইনজীবী ও সাবেক প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ আবারো বিতর্কের কেন্দ্রে। একদিকে ভুয়া পিএইচডি ডিগ্রির অভিযোগে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে, অন্যদিকে নিজের মা ও ভাইকে উত্তরার বাসভবন থেকে উচ্ছেদ করে ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’-এর জোরালো অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে।

ভুয়া ডিগ্রির বিস্ফোরণ: সিডনির বিশ্ববিদ্যালয়ের লিখিত জবাব

সিডনির ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলস (UNSW) কর্তৃপক্ষ লিখিতভাবে নিশ্চিত করেছে, তুরিন আফরোজের নামে কোনো পিএইচডি ডিগ্রি বা ছাত্রত্বের রেকর্ড নেই। এই চিঠি রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে একটি বাড়ি-সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে উপস্থাপন করেছে।

প্রশ্ন উঠেছে—গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনের সময় কীভাবে তিনি এমন ভুয়া ডিগ্রি ব্যবহার করেছিলেন?

“পরাক্রমশালী প্রসিকিউটর”: বাড়ি থেকে মা ও ভাইকে উচ্ছেদ

৪ এপ্রিল আপিল বিভাগে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনীক আর হক বলেন, “তুরিন আফরোজ প্রসিকিউটর থাকা অবস্থায় ক্ষমতার সবরকম অপব্যবহার করেছেন। এক মুহূর্তেই মাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন।”

আইনজীবীদের লড়াই: হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের রায়

২০২৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি মো. সেলিমের একক বেঞ্চ রায় দিয়ে বলেন, তুরিন আফরোজের মা ও ভাইয়ের ওই বাড়িতে বসবাসে আর কোনো আইনগত বাধা নেই। পরবর্তীতে আপিল বিভাগেও এই অবস্থান বহাল থাকে।

পটভূমি: এক বাড়ির মালিকানার জটিল লড়াই

রাজধানীর উত্তরায় পাঁচতলা বাড়ি ঘিরে পারিবারিক ও আইনি লড়াই চলে আসছে বহুদিন ধরে। ২০০২ সাল থেকে বসবাস করা শামসুন্নাহার বেগম ও শাহনেওয়াজকে ২০১৭ সালে উচ্ছেদ করেন তুরিন আফরোজ। এরপর উভয়পক্ষ দেওয়ানী মামলা দায়ের করেন এবং স্থিতাবস্থার আদেশের মধ্য দিয়ে লড়াই চলে হাইকোর্ট পর্যন্ত।

হেবা দলিল বনাম আসল মালিকানার প্রশ্ন

তুরিন আফরোজ দাবি করেন, তার বাবা তসলিম উদ্দিন ১৯৯৪ সালে তাকে হেবা করেন। তবে মা ও ভাই দাবি করেন, ১৯৯৭ সালে শামসুন্নাহার ছেলেকে হেবা দেন এবং পরবর্তীতে নামজারি ও ঋণ নিয়ে বাড়ি নির্মাণ করা হয়

ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন

আইনজীবী ও বিশ্লেষকদের মতে, এমন পরিবারবিরোধী আচরণ ও ভুয়া ডিগ্রির অভিযোগ একজন রাষ্ট্রীয় প্রসিকিউটরের জন্য মারাত্মক। এতে রাষ্ট্রীয় নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তৈরি হয়।

তুরিন আফরোজের নীরবতা ও ভবিষ্যৎ আইনি পথচলা

এখনো গণমাধ্যমে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি তুরিন আফরোজ। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভুয়া পিএইচডি প্রমাণিত হলে তার আইনজীবী পেশাও ঝুঁকিতে পড়বে।

উপসংহার: বিচারিক নজির ও নৈতিক বার্তা

একটি বাড়ি, একটি পরিবার, এবং এক সাবেক রাষ্ট্রীয় আইন কর্মকর্তার বিতর্কিত ভূমিকা আমাদের মনে করিয়ে দেয়—আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয়। ব্যক্তি বা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দিয়ে যদি কেউ মিথ্যার আশ্রয়ে পরিবার ধ্বংস করেন, তাহলে বিচার একদিন হবেই।

ডিসিকে/এমজেডএইচ

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়