প্রকাশ : ২৯ এপ্রিল ২০২৫, ০২:২৬
সন্ত্রাসীদের হাত থেকে তরুণকে বাঁচাতে গিয়ে গুলিতে প্রাণ গেল যুবদল কর্মী ইয়াছিন
আবারও রক্ত ঝরল বেগমগঞ্জে!
এলাকায় উত্তেজনা, আটক তিন হামলাকারী হাসপাতালে

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় ইয়াছিন আরাফাত ওরফে শাকিল (২৮) নামের এক যুবদল কর্মী সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন। সোমবার রাত আনুমানিক পৌনে আটটার দিকে ছয়ানী ইউনিয়নের গঙ্গাবর বাজারে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় সন্ত্রাসীদের হামলায় ইয়াছিনের ছোট ভাই মোজাম্মেল হোসেন (২৫) আহত হন।
|আরো খবর
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গঙ্গাবর বাজারের একটি দোকানে ইয়াছিনসহ কয়েকজন বসে চা পান করছিলেন। হঠাৎ একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় একদল সন্ত্রাসী এসে মো. লাবিব নামের এক তরুণকে জোরপূর্বক তুলে নেওয়ার চেষ্টা করে। বাধা দিতে গেলে ইয়াছিনকে কাছ থেকে বুকে ও পেটে গুলি করা হয়। তাঁর ভাই মোজাম্মেলকেও মারধর করা হয়।
স্থানীয় লোকজন আহত ইয়াছিনকে নোয়াখালী ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। আহত মোজাম্মেল বর্তমানে ওই হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
ঘটনার পর স্থানীয়রা ধাওয়া করে তিন হামলাকারীকে আটক করে গণপিটুনি দেয়। পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। আটককৃতদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
নিহত ইয়াছিনের চাচাতো ভাই আবদুল হাকিম বলেন, "সন্ত্রাসীরা এক তরুণকে অপহরণের চেষ্টা করলে ইয়াছিন বাধা দেয়। এ কারণেই তাকে গুলি করা হয়।"
বেগমগঞ্জের যুবদল নেতা খালিদ হাসান জানান, নিহত ইয়াছিন যুবদলের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তিনি সম্প্রতি ফিলিস্তিনের গণহত্যার প্রতিবাদে আয়োজিত মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন। পেশায় তিনি থাই অ্যালুমিনিয়ামের মিস্ত্রি ছিলেন।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. রাজীব আহমেদ চৌধুরী বলেন, "রাত সোয়া আটটার দিকে ইয়াছিন আরাফাতকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তাঁর বুকে গুলির চিহ্ন রয়েছে।"
জেলা পুলিশ সুপার মো. আবদুল্লা আল ফারুক জানান, "তরুণ অপহরণের চেষ্টায় বাধা দেওয়ায় দুর্বৃত্তরা ইয়াছিনকে গুলি করে হত্যা করে। স্থানীয়রা তিন হামলাকারীকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে। ব্যবহৃত অস্ত্রটি উদ্ধার করা হয়েছে।"
ঘটনার পর গঙ্গাবর বাজারসহ আশপাশের এলাকায় চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
বেগমগঞ্জে রাজনৈতিক সহিংসতার দীর্ঘ ইতিহাসনোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলা বহুদিন ধরেই রাজনৈতিক সহিংসতার জন্য কুখ্যাত। এখানে দলীয় আধিপত্য, প্রভাব বিস্তার ও বিরোধী মত দমন করতে গিয়ে প্রাণহানি একটি সাধারণ চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২০০১ সালের নির্বাচনের পর থেকে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে বহু প্রাণ গেছে। ২০১৩-১৪ সালের হরতাল-অবরোধের সময়কালে বেগমগঞ্জ অন্যতম উত্তপ্ত এলাকা ছিল।
২০১৮ সালের নির্বাচন পূর্ববর্তী সময়েও বিরোধী দলের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর, এবং মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ উঠে।
বর্তমানে ২০২৫ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে এলাকাজুড়ে উত্তেজনা আবারও বাড়ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা থাকা সত্ত্বেও হামলা ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বন্ধ হয়নি।
নিহত ইয়াছিনের ঘটনাকে স্থানীয়রা রাজনৈতিক সন্ত্রাসের ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবে দেখছেন। দ্রুত দোষীদের বিচারের আওতায় না আনলে পরিস্থিতি আরও অবনতি হতে পারে বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।
ডিসিকে/এমজেডএইচ