মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৩ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ২০:১৯

নারায়ণগঞ্জের আদালত যেন বিক্ষোভের মঞ্চ!

নারায়ণগঞ্জ আদালত চত্বরে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের ওপর হামলা: উত্তাল আদালত প্রাঙ্গণ

বিশেষ প্রতিবেদক: মো. জাকির হোসেন
নারায়ণগঞ্জের আদালত যেন বিক্ষোভের মঞ্চ!
ছবি : সংগৃহীত

সিআইডির একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, নারায়ণগঞ্জ আদালত চত্বরে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের ওপর চড়-থাপ্পড় মারার ঘটনা ঘটেছে। সোমবার (২৮ এপ্রিল) বিকেলে এ হামলার সময় আদালত এলাকায় উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। আইনজীবী ও সাধারণ মানুষের ক্ষোভে এক পর্যায়ে পুরো আদালত চত্বর বিক্ষোভের মঞ্চে পরিণত হয়।

জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে মাদরাসাছাত্র হাফেজ মো. সোলাইমান হত্যা মামলায় রিমান্ড শুনানির জন্য আনিসুল হককে আদালতে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাইনউদ্দিন কাদির চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

আদালত থেকে পুলিশি নিরাপত্তায় বের করার সময় আইনজীবীসহ উপস্থিত জনগণ পুলিশের বেষ্টনী অতিক্রম করে আনিসুল হকের ওপর চড়-থাপ্পড় মারার চেষ্টা করেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলাকারীরা পুলিশের উপস্থিতিতেই হেলমেটের ওপর আঘাত করতে থাকেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে পুলিশ আনিসুল হককে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে নেয়।

পুলিশ ও আদালত সূত্রের ভাষ্য

সিআইডির একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, নারায়ণগঞ্জ আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. কাইউম খান বলেন, "শুনানি শেষে ফেরার পথে কিছু উত্তেজিত ব্যক্তি সাবেক আইনমন্ত্রীর ওপর হামলার চেষ্টা করেন। তবে পুলিশের বেষ্টনীর কারণে বড় ধরনের কিছু ঘটেনি। আমরা দ্রুত তাকে নিরাপদে সরিয়ে নিই।"

তিনি আরো জানান, সিআইডির আবেদনকৃত সাত দিনের রিমান্ডের বিপরীতে আদালত চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। আনিসুল হককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সিআইডি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য

সিআইডির একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন,রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আনোয়ার প্রধান বলেন, "বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় হাফেজ সোলাইমান নিহত হন। তার দুলাভাই বাদী হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তে উঠে আসে সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হকের সম্পৃক্ততার প্রাথমিক আলামত।"

তিনি আরও বলেন, "সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে রিমান্ড আবশ্যক ছিল। আমরা আশা করি, চার দিনের রিমান্ডে মূল পরিকল্পনাকারী ও ঘটনার পেছনের সকল রহস্য উন্মোচিত হবে।"

মামলার পটভূমি

সিআইডির একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন,গত বছরের ৫ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় মাদরাসাছাত্র হাফেজ মো. সোলাইমান নিহত হন। পরে ২২ আগস্ট তার দুলাভাই বাদী হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলাটি এখন সিআইডির অধীনে তদন্তাধীন রয়েছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, হাফেজ সোলাইমান হত্যাকাণ্ডে প্রভাবশালী কয়েকজনের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে আনিসুল হক ছাড়াও কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নাম উঠে এসেছে। সিআইডির একটি বিশেষ দল এ মামলার তদন্তে নিয়োজিত রয়েছে।

আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ

সিআইডির একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, সোমবার রিমান্ড শুনানি ও আদেশের পর আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবী ও সাধারণ মানুষের ক্ষোভ বহিঃপ্রকাশ ঘটে। তারা আনিসুল হকের ‘ফাঁসি চাই’ স্লোগান দিতে থাকেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয় এবং আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

সিআইডির একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন,ঘটনার পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। অনেকেই দাবি করছেন, “আনিসুল হকের মতো একজন সাবেক মন্ত্রীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলায় রিমান্ড ও আদালত প্রাঙ্গণে হামলা একটি বড় ইঙ্গিত বহন করে যে, দেশে ন্যায়বিচারের প্রক্রিয়া এখনো সচল আছে।” অন্যদিকে, আনিসুল হকের সমর্থকরা ঘটনাটিকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বলে দাবি করেছেন।

সিআইডির মন্তব্য

সিআইডির একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, "আমরা কোনো ধরনের রাজনৈতিক চাপ ছাড়াই নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করছি। হাফেজ সোলাইমান হত্যার প্রকৃত কারণ ও দোষীদের শনাক্ত করাই আমাদের লক্ষ্য।"

ডিসিকে/এমজেডএইচ

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়