প্রকাশ : ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ২২:৪০
সন্ধ্যার পর সচিবালয়ের রাজা

|আরো খবর
ছায়া প্রশাসনের ‘তদবির সাম্রাজ্য’: মোয়াজ্জেম-ফারাবী চক্রের কোটি টাকার দুর্নীতি
সরকারি প্রশাসনের ছায়া জগতে যে এক অদৃশ্য শক্তি বহুদিন ধরে প্রভাব বিস্তার করে আসছিল, সেটি এবার প্রকাশ্যে ধরা পড়ল। উচ্চপর্যায়ের দুই উপদেষ্টার ঘনিষ্ঠ সহকারীদের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা এক 'তদবির সাম্রাজ্য'র অব্যাহত দাপট ও দুর্নীতির জালে কেবল চাকরির বাজারই নয়, জনসেবার ভাবমূর্তিও কালিমালিপ্ত হয়েছে।
অন্তর্জালে লুকিয়ে থাকা ‘ছায়া প্রশাসন’
প্রশাসনের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, "যেখানে সচিবদেরও অনুমতি লাগে বদলির জন্য, সেখানে এক এপিএস বা একজন পিও কিভাবে শত শত কর্মকর্তার বদলি ও নিয়োগ নিয়ন্ত্রণ করেন—তা শুধু বিস্ময়ের নয়, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার প্রশ্নও।"
সন্ধ্যার পর সচিবালয়ের রাজা
মোয়াজ্জেম হোসেনের গতিবিধি শুরু হতো বিকেল ৪টার পর। সচিবালয়, গণপূর্ত ভবন, এলজিইডি, পানি উন্নয়ন বোর্ড, এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের বিভিন্ন দপ্তরে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর তাকে দেখা যেত চুপিসারে ঢুকতে।
চুক্তিভিত্তিক ডাক্তার-নার্স বদলিতে চাঁদাবাজি
২০২৪ সালের শেষার্ধে প্রায় ৩৭০ জন নার্স ও ১২৬ জন চিকিৎসককে চুক্তিভিত্তিক বদলি করা হয়, যার ৯০% ছিল এই চক্রের মাধ্যমে।
মিশনে দুর্নীতির ছায়া—হজ ডাক্তার নিয়োগেও ঘুষ
হজ মিশনের ডাক্তার হতে হলে অন্তত ৫ লাখ টাকার লেনদেন করতে হয়েছে। সবাই জানে, আবেদন পত্রের সঙ্গে টাকা না গেলে কাজ হয় না।
অব্যাহতির নাটক ও অপপ্রচারের চেষ্টা
২১ এপ্রিল সরকারের এক প্রজ্ঞাপনে মোয়াজ্জেম ও তুহিনকে ‘নিজেদের অনুরোধে’ অব্যাহতি দেওয়া হয়। তবে সরকারের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে কড়া নির্দেশনা আসার পরই তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়।
উপদেষ্টা কাঠামোর জবাবদিহিহীনতা
প্রশাসনিক বিশ্লেষক অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, “উপদেষ্টা পদগুলো নিয়ন্ত্রণহীন এবং ক্ষমতাবান হয়ে ওঠার ঝুঁকি থাকে। এসব পদে থাকা ব্যক্তিরা মন্ত্রী নয়, কিন্তু অনেক সময় মন্ত্রীর চেয়েও বেশি ক্ষমতা প্রয়োগ করেন।”
মোয়াজ্জেম-ফারাবী চক্রের আলোচিত তদবির ক্ষেত্র
- গণপূর্ত, এলজিইডি, পানি উন্নয়ন বোর্ডে প্রকৌশলী বদলি
- পৌরসভা সচিব ও নির্বাহী প্রকৌশলী বদলি
- সরকারি ঠিকাদারদের বিল অনুমোদনে কমিশন
- অস্ত্র ও সরঞ্জাম সরবরাহ চুক্তিতে লাভভাগ
- জেলা সিভিল সার্জন ও হাসপাতাল পরিচালক বদলি
- হজ মিশনের ডাক্তার-নার্স নিয়োগ
দুর্নীতির গভীরে প্রশাসন, কোথায় থামবে?
এই রিপোর্ট শুধু একটি দুর্নীতির ঘটনা নয়, বরং রাষ্ট্রের প্রশাসনিক কাঠামোর একটি ভয়াবহ ব্যর্থতার দলিল। প্রশ্ন এখন—অব্যাহতি কি সব? না কি এই ঘটনার পেছনে থাকা বড় মাথারা এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে?
প্রতিবেদক : মো. জাকির হোসেন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, চাঁদপুর জেলা বিএনপি।
ডিসিকে/ এমজেডএইচ