বুধবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৬ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:১৮

ক্ষমতার অপব্যবহারের চরম দৃষ্টান্ত!

নরসিংদী গণহত্যা: গুলির নির্দেশদাতা ম্যাজিস্ট্রেট ও অতিরিক্ত এসপি গ্রেপ্তার, বিসিএস ক্যাডার প্রথমবার কাঠগড়ায়!

মো. জাকির হোসেন
ক্ষমতার অপব্যবহারের চরম দৃষ্টান্ত!
সহকারী কমিশনার (নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট) সাইফুল ইসলাম( উপরে ),রাঙামাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অনির্বান চৌধুরী(নিচে)।ছবি: সংগৃহীত

গত জুলাই মাসে নরসিংদীতে সংঘটিত ভয়াবহ গণহত্যায় অবশেষে গ্রেপ্তার হলেন সহকারী কমিশনার (নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট) সাইফুল ইসলাম এবং রাঙামাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অনির্বান চৌধুরী। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই দুই উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। এই গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে ট্রাইব্যুনালের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো বিসিএস ক্যাডার গণহত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার হলেন, যা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অভ্যন্তরে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

প্রসিকিউশনের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম সেদিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের সরাসরি গুলি করার সুস্পষ্ট ও চূড়ান্ত নির্দেশ প্রদান করেছিলেন। সোমবার নরসিংদীর গণহত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত এই দুই আসামিকে আদালতে হাজির করা হলে ট্রাইব্যুনাল তাৎক্ষণিকভাবে তাদের কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।

ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি (চিফ প্রসিকিউটর) অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম এই যুগান্তকারী গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, "গুলির নির্দেশের সঙ্গে সরাসরি জড়িত আরও কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে আমরা ইতিমধ্যেই চিহ্নিত করেছি। তদন্তের স্বার্থে এখনই তাদের নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না। তবে খুব শীঘ্রই তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"

উল্লেখ্য, গত ১৮ই জুলাই বৈষম্যবিরোধী একটি শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশের নির্বিচারে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। এতে দশম শ্রেণির মেধাবী ছাত্র তাহমিদ ভূঁইয়াসহ অন্তত ২০ জন নিরীহ মানুষ শাহাদাত বরণ করেন।

পুলিশের এই বর্বরোচিত হামলায় আহত হন আরও সহস্রাধিক সাধারণ নাগরিক। এই মর্মান্তিক ঘটনা দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভ ও সমালোচনার জন্ম দেয়। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকার তথ্য অনুযায়ী, এই নৃশংস গণহত্যাকে কেন্দ্র করে এ পর্যন্ত মোট ২২টি মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে, যেখানে ১৪১ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তবে বিস্ময়করভাবে, অভিযুক্তদের মধ্যে এতদিন পর্যন্ত মাত্র ৫৪ জনকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছিল, যাদের অধিকাংশই ছিলেন সাধারণ পুলিশ সদস্য। এই পরিস্থিতিতে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের গ্রেপ্তার তদন্তের মোড় ঘোরাবে এবং দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে মনে করছেন আইন বিশেষজ্ঞরা।

ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি আরও জানান, "তদন্ত দল অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে কাজ করছে এবং আমরা আশা করছি খুব শীঘ্রই এই গণহত্যার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে সক্ষম হব। সেই প্রতিবেদনে শুধু মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্য নয়, বরং এই নারকীয় ঘটনার পেছনে কলকাঠি নাড়ানো অন্যান্য প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নামও উঠে আসবে।"

সহকারী কমিশনার সাইফুল ইসলাম এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অনির্বান চৌধুরীর গ্রেপ্তার জুলাইয়ের সেই ভয়াল দিনে স্বজন হারানো পরিবারগুলোর মনে সামান্য হলেও সান্ত্বনা এনেছে। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর অবশেষে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার ন্যায়বিচার পাওয়ার আশা জাগিয়েছে। এখন সকলের দৃষ্টি ট্রাইব্যুনালের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে, যেখানে এই গণহত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে, এমনটাই প্রত্যাশা ভুক্তভোগী পরিবার এবং সাধারণ মানুষের।

ডিসিকে/ এমজেডএইচ

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়