প্রকাশ : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৪:৫০
আওয়ামী লীগ, বিএনপি, তৃণমূল—সবখানেই ছিলেন শমসের মবিন, কিন্তু এখন রিমান্ডে!
বীর বিক্রম থেকে আসামির কাঠগড়ায়
![বীর বিক্রম থেকে আসামির কাঠগড়ায়](/assets/news_photos/2025/02/10/image-58802-1739177740bdjournal.jpg)
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন কেন্দ্রিক রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার হত্যা মামলায় তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরীকে ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকালে তাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ দশ দিনের রিমান্ড আবেদন করে, যেখানে রাষ্ট্রপক্ষে মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে শুনানি করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জি এম ফারহান ইশতিয়াক ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
|আরো খবর
শুনানিতে মহানগর পিপি বলেন, 'এই শমসের মবিন চৌধুরীর মতো পল্টিবাজ লোক এ দেশের রাজনীতিতে খুবই বিরল। তিনি মুক্তিযুদ্ধের দোহাই দিয়ে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে সুবিধা নিয়েছেন। এরপর বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হন। আওয়ামী সরকারের আমলে বিতর্কিত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে কেউ অংশ না নিলেও তিনি কিংস পার্টি গঠন করে নির্বাচনে অংশ নেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের কলঙ্ক।'
এসময় আদালতের অনুমতি নিয়ে শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, 'আমি একজন আহত বীর মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য আমাকে বীর বিক্রম খেতাব দেওয়া হয়। আমি ১৫ বছর বিএনপির রাজনীতি করেছি। ৫ আগস্টে নিজ বাসাতেই ছিলাম। এখনও আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসার জন্য টাকা পয়সা দিচ্ছি। পিপি সাহেব যেসব কথা বলেছেন সেগুলো মুক্তিযুদ্ধকে অপমান করার শামিল।'
আসামিদের এজলাস থেকে হাজতখানায় নিয়ে যাওয়ার সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি হাত উঁচিয়ে বলেন, 'খেতাবপ্রাপ্ত আহত মুক্তিযোদ্ধার হাতে হাতকড়া কেন?'
মামলার সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় অংশ নেন পারভেজ মিয়া। বিকেলে আসামিদের ছোঁড়া গুলিতে আহত হলে তাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। কিছুক্ষণ পর ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানায় গত বছরের ২৯ অক্টোবর নিহতের মা কানীছ ফাতেমা বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।
শমসের মবিন চৌধুরীর পরিচিতি:
শমসের মবিন চৌধুরী (জন্ম: ১৯৫০) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন মুক্তিযোদ্ধা, কূটনীতিক, সেনা অফিসার ও রাজনীতিবিদ। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করে। তিনি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব হিসেবে ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন এবং বর্তমানে তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে কর্মরত থাকাকালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নেন। চট্টগ্রামের কালুরঘাটের যুদ্ধে আহত হয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে বন্দী হন। মুক্তিযুদ্ধে তার সাহসী ভূমিকার জন্য তিনি বীর বিক্রম খেতাবে ভূষিত হন।
কূটনৈতিক ক্যারিয়ারে তিনি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব এবং যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। রাজনৈতিক জীবনে তিনি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন এবং পরবর্তীতে তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন মনোনীত হন।
সাম্প্রতিক গ্রেপ্তার:
গত বছরের ১৭ অক্টোবর রাজধানীর বনানীর বাসা থেকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ শমসের মবিন চৌধুরীকে আটক করে।
মুক্তিযোদ্ধার হাতে হাতকড়া:
আদালতে হাজির করার সময় শমসের মবিন চৌধুরীর হাতে হাতকড়া পরানো হয়, যা নিয়ে তিনি নিজেই প্রশ্ন তুলেছেন। একজন খেতাবপ্রাপ্ত আহত মুক্তিযোদ্ধার প্রতি এই ধরনের আচরণ নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে।
সংশ্লিষ্ট মামলার প্রেক্ষাপট:
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন কেন্দ্রিক যাত্রাবাড়ী থানার হত্যা মামলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলার তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
শমসের মবিন চৌধুরী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও কূটনীতিক, যিনি বর্তমানে একটি হত্যা মামলায় রিমান্ডে রয়েছেন। আদালতে তার হাতে হাতকড়া পরানো নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, যা একজন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার প্রতি অসম্মানজনক আচরণ হিসেবে সমালোচিত হচ্ছে।
ডিসিকে/এমজেডএইচ