রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ০৬ জুন ২০২২, ০০:০০

বহিষ্কারের প্রতিবাদে সেলিম খানের সংবাদ সম্মেলন

বিএনপি-জামাতকে বিশেষ সুবিধা দিতেই এ সিদ্ধান্ত

বিএনপি-জামাতকে বিশেষ সুবিধা দিতেই এ সিদ্ধান্ত
চাঁদপুর কণ্ঠ রিপোর্ট ॥

দল থেকে বহিষ্কারের প্রতিবাদে এবং অসাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০নং লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ সেলিম খান। গতকাল ৫ জুন রোববার দুপুরে চাঁদপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও মহিলা আওয়ামী লীগের সকল নেতৃবৃন্দ এবং নয়টি ওয়ার্ডের এসব সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন। তারা এই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে সোচ্চার ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সেলিম খান বলেন, আমি অতীব দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, আজ বিভিন্ন পত্রিকা ও অনলাইন গণমাধ্যমের সংবাদে দেখতে পাই আমাকে চাঁদপুর সদর উপজেলাধীন ১০নং লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি পদসহ সকল পদপদবী থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটোয়ারী দুলাল মহোদয়ের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমগুলোতে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তাতে কী কারণে আমাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হলো তার কোনো কারণ উল্লেখ নেই। সম্পূর্ণ অগঠনতান্ত্রিক ও অসাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় আমাকে আজীবন বহিষ্কার করার যে তথ্য প্রচার করা হয়েছে এতে আমি চরমভাবে মর্মাহত এবং হতাশ। পাশাপাশি জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের এমন বৈরীতা ও ব্যক্তি আক্রোশের কারণে আমার হাজার হাজার কর্মী-সমর্থক ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। কারণ, আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কাউকে দল থেকে বহিষ্কার/অব্যাহতি দেয়ার ক্ষমতা একমাত্র কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের রয়েছে। এমনকি কারণ দর্শানোর নোটিশ ছাড়া কাউকেই দল থেকে বহিষ্কার কিংবা অব্যাহতি দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।

তিনি দাবি করে বলেন, চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ব্যক্তি স্বার্থে ঈর্ষান্বিত ও রাগের বশীভূত হয়ে যে ঘোষণা দিয়েছেন তা হাস্যকার ও অগ্রহণযোগ্য। তাছাড়া ৪ জুন চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় আমার বহিষ্কার নিয়ে কোনো ধরনের আলোচনা হয়নি, ছিলো না কোনো এজেন্ডা। সভা সমাপ্ত হওয়ার পর কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মীর সামনে ঘোষণা করা হলো আমাকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। আমি দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই, লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নকে আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক হিসেবে যে তিলে তিলে গড়ে তুলেছি, সেটা নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র হিসেবেই আমার এই বহিষ্কারাদেশ। এই ইউনিয়ন ছিলো বিএনপি-জামাতের ঘাঁটি। সেই বিএনপি-জামাতকে সুবিধা পাইয়ে দেয়ার জন্যই এই বহিষ্কারাদেশ।

সেলিম খান বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতেগড়া সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জন্যে নিবেদিতভাবে কাজ করে যাওয়া এই আমাকে কী কারণে বহিষ্কার করা হলো? আমার অপরাধই বা কী? আজকের এই সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে আমি চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মহোদয়ের কাছে অনুরোধ করছি, অবিলম্বে আমাকে আজীবন বহিষ্কারের অগঠনতান্ত্রিক ও অসাংগঠনিক ঘোষণা প্রত্যাহার করুন। আসুন, আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ রেখে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার বিজয় নিশ্চিতকল্পে আমরা নিজেদের মধ্যকার ব্যক্তিস্বার্থ ও ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব ভুলে সবাই একযোগে সফল প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করি। আমার এই আহ্বানের পরও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যদি তাদের অসাংগঠনিক ও অগঠনতান্ত্রিক ঘোষণা প্রত্যাহার না করেন তবে এ ব্যাপারে আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদয় হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি গিয়াস উদ্দিন মিলন, সাধারণ সম্পাদক রিয়াদ ফেরদৌসসহ স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমের বিভিন্ন পর্যায়ের সাংবাদিকবৃন্দ।

বক্তব্য রাখেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরশাদ মিজি, সিনিয়র সহ-সভাপতি ইউনুছ শেখ, ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক জহির হাওলাদার প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে মোঃ সেলিম খানের লিখিত বক্তব্য :

সম্মানিত সাংবাদিকবৃন্দ,

আপনাদের সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে চাঁদপুর প্রেসক্লাবে আজকের সংবাদ সম্মেলন শুরু করছি। আপনারা জানেন, আমি মোঃ সেলিম খান তৃণমূল থেকে উঠে আসা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন পরীক্ষিত সৈনিক। আমি চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০নং লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। পাশাপাশি আমি দৈনিক চাঁদপুর বার্তার প্রতিষ্ঠাতা ও প্রকাশক, সরকার অনুমোদিত আইপি টিভি ‘ভয়েস টেলিভিশন’ চ্যানেলের মালিক, চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক। চাঁদপুরের ঐতিহ্যবাহী সংগঠন চাঁদপুর প্রেসক্লাবের কার্যকরী কমিটিরও একজন সদস্য। দেশের অন্যতম বৃহত্তম চলচ্চিত্র প্রযোজনা, পরিচালনা, পরিবেশনা প্রতিষ্ঠান শাপলা মিডিয়া ও ওটিটি প্লাটফর্ম ‘সিনেবাজ’র কর্ণধারও আমি। একজন সফল জনপ্রতিনিধির (পরপর দুই বার নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান) পাশাপাশি একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে সততার সাথে ব্যবসা বাণিজ্য করে পরপর দুইবার জেলা পর্যায়ে সেরা করদাতা হিসেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে সম্মাননা পেয়েছি।

সাংবাদিক ভাইয়েরা,

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আর্দশকে ধারণ করে বাংলাদেশে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে আমিই প্রথম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে বেসরকারি উদ্যোগে সিনেমা নির্মাণ করেছি। যার একটি বঙ্গবন্ধুর শৈশব-কৈশোর নিয়ে নির্মিত ‘টুঙ্গিপাড়ার মিয়া ভাই’, অপরটি ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে স্বপরিবারে হত্যা ও দাফনের হৃদয়বিদারক ঘটনা এবং এ হত্যাকাণ্ডের কুশীলবদের চক্রান্তের জানা-অজানা নানা ঘটনা অবলম্বনে নির্মাণ করি ‘আগস্ট ১৯৭৫’ চলচ্চিত্র । সিনেমা দু’টি দেশের কোটি কোটি ছাত্র, শিক্ষক ও জনতা দেখেছে আর চোখের জল ফেলেছে। এই দুইটি চলচ্চিত্র নির্মাণের পর থেকেই শুরু হয় আমার বিরুদ্ধে স্বাধীনতা বিরোধীদের নানা চক্রান্ত। আমার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘শাপলা মিডিয়া’র কার্যালয়ে হামলাও হয়েছে। আমাকে দেয়া হয় নানাভাবে হুমকি। এ ঘটনায় থানায় জিডিও করা হয়েছে।

সম্মানিত সাংবাদিকবৃন্দ,

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তৃণমূলের একজন কর্মী হিসেবে দলের প্রতি আনুগত্য ও নিবেদিত থেকে কাজ করে আসা মানুষ আমি। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৩ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে তৎকালীন সাখুয়া ইউনিয়নে আমি স্থানীয় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করি। প্রহসনের সে নির্বাচনে আমি জয়ী হলেও ফলাফল সিট পাল্টে আমাকে পরাজিত দেখানো হয়। নানা নির্যাতন আর নিপীড়ন সহ্য করা মানুষ আমি। যার সাক্ষী সেই সময়ের চাঁদপুর থেকে প্রকাশিত পত্রিকাগুলো। নানা নির্যাতন, মামলা, হামলার পরও আমি গণমানুষের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাইনি। যার ফলাফল, ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপির দাপুটে নেতা ও একাধিকবারের চেয়ারম্যানকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হই। সেই সাথে ২০২১ সালের নির্বাচনে দল আমাকে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে আমাকে মনোনয়ন দেয়া হয় এবং আমি নির্বাচিত হই।

শ্রদ্ধেয় সাংবাদিকবৃন্দ,

আমার ইউনিয়নের গৃহহীনদের জন্যে আশ্রয়ণ প্রকল্প করার স্বার্থে আমি নিজে ৪.৫০ একর (৪৫০ শতাংশ) ভূমি জেলা প্রশাসক মহোদয়কে দান করেছি। যেখানে আশ্রয়ণ হয়েছে ৪৮৭টি পরিবারের। যারা এখন সুখে-শান্তিতে বসবাস করছে। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে গৃহহীন পরিবারের জন্য ঘর উপহার প্রদানের লক্ষ্যে ৪৬টি পরিবারকে নিজ উদ্যোগে ঘর নির্মাণ করে দিয়েছি।

আমি ১৯৮৬ সাল থেকেই আওয়ামী যুবলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। পর্যায়ক্রমে ইউনিয়ন যুবলীগের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছি। ২০১২ সাল থেকে অদ্য পর্যন্ত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছি। চাঁদপুর-৩ সংসদীয় আসন থেকে বার বার নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য, দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির ব্যাপক উন্নয়নযজ্ঞ এবং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় নিবেদিতভাবে কাজ করার ফলশ্রুতিতে লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নটি হয়েছে নৌকার বিশাল ভোট ব্যাংক। রাস্তা-ঘাট, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা, ঘাটলা, আর্সেনিকমুক্ত টিউবওয়েল স্থাপনসহ লক্ষ্মীপুরে এখন উন্নয়নের জোয়ার বইছে। এছাড়া ব্যক্তিগতভাবে আমি আমার ইউনিয়নে মসজিদ স্থাপন, অসুস্থ মানুষকে চিকিৎসায় সহায়তা প্রদান, গরিব পরিবারের মেয়েদের বিয়ে দেয়াসহ ইউনিয়নবাসীর সুখে-দুঃখে তাদের পাশে আছি।

সাংবাদিক ভাইয়েরা,

অতীব দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, আজ বিভিন্ন পত্রিকা ও অনলাইন গণমাধ্যমের সংবাদে দেখতে পাই আমাকে চাঁদপুর সদর উপজেলাধীন ১০নং লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ থেকে আজীবনের জন্যে বহিষ্কার করা হয়েছে। চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জনাব নাছির উদ্দিন আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক জনাব আবু নঈম পাটোয়ারী দুলাল মহোদয়ের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমগুলোতে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তাতে কী কারণে আমাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হলো তার কোনো কারণ উল্লেখ নেই। সম্পূর্ণ অগঠনতান্ত্রিক ও অসাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় আমাকে আজীবন বহিষ্কার করার যে কথা প্রচার করা হয়েছে এতে আমি চরমভাবে মর্মাহত এবং হতাশ। পাশাপাশি জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের এমন বৈরীতা ও ব্যক্তি আক্রোশের কারণে আমার হাজার হাজার কর্মী-সমর্থক ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। কারণ, আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কাউকে দল থেকে বহিষ্কার/অব্যাহতি দেয়ার ক্ষমতা একমাত্র কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের রয়েছে। এমনকি কারণ দর্শানোর নোটিশ ছাড়া কাউকেউ দল থেকে বহিষ্কার কিংবা অব্যাহতি দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের অনুমোদন ছাড়া দলের কোনো পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতা-কর্মীকে কোনভাবেই বহিষ্কার কিংবা অব্যাহতি দিতে পারে না জেলা, উপজেলা/থানা কিংবা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ। অথচ চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক ব্যক্তি স্বার্থে ঈর্ষান্বিত ও রাগের বশীভূত হয়ে যে ঘোষণা দিয়েছেন তা হাস্যকার ও অগ্রহণযোগ্য। তাছাড়া গতকাল ৪ জুন ২০২২ খ্রি. চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় আমার বহিষ্কার নিয়ে কোনো ধরণের আলোচনা হয়নি, ছিলো না ধরনের কোনো এজেন্ডা। সভা সমাপ্ত হওয়ার পর কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মীর সামনে ঘোষণা করা হলো আমাকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিতে হয়, জবাব সন্তোষজনক না হলে উপজেলা কিংবা জেলা আওয়ামী লীগ অভিযুক্তকে শাস্তি প্রদানের জন্য কেন্দ্রীয় সংসদে প্রস্তাব পাঠায়। কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের অনুমোদন সাপেক্ষে বহিষ্কার কিংবা সাংগঠনিক শাস্তি দিতে হয়। অথচ চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক তার কোনোটাই করেন নাই। বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের সময়ও তারা আমার প্রতি এমন অন্যায় আচরণ করেছিলেন। আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ের তৃণমূল নেতৃবৃন্দ বিশেষ বর্ধিত সভা করে একক প্রার্থী হিসেবে আমাকে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন দেয়ার সুপারিশ করেন। চাঁদপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগও ওই সভার আলোকে একক মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে আমাকে দলীয় মনোনয়ন দিতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগকে সুপারিশ করে, যার অনুলিপি দেয়া হয় জেলা আওয়ামী লীগকে। কিন্তু ঈর্ষান্বিত হয়ে ও ব্যক্তি আক্রোশে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ৫জনের তালিকা কেন্দ্রীয় কমিটিতে প্রেরণ করে এবং আমার নাম রাখেন ৫ নম্বরে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা শেষ পর্যন্ত আমাকেই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রদান করেন এবং দলীয় প্রতীক বরাদ্দ দেন। জনগণের ভালোবাসায় আমি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দ্বিতীয় বারের মতো চেয়ারম্যান নির্বাচিত হই। এ বিষয়টি জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ তৃণমূল প্রতিনিধি সভায় আমি আমার বক্তব্যে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে অবহিত করি। এতেও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সম্পাদক আমার প্রতি অসন্তুষ্ট হন।

প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্রের ৪৭নং ধারায় প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে ১১টি উপ-ধারায় বহিষ্কার কিংবা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে হলে কী প্রক্রিয়ায় নেয়া যাবে তা বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের বিধান হলো, কাউকে বহিষ্কার কিংবা সাংগঠনিক শাস্তি প্রদান করতে হলে ইউনিয়ন/পৌর কিংবা থানা কমিটি বহিষ্কারের প্রস্তাব জেলা কমিটির কাছে পাঠাবে, জেলা শাখা বহিষ্কারের প্রস্তাবনা কেন্দ্রে পাঠাবে। জেলা থেকে পাঠানো প্রস্তাবনা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় উত্থাপিত হবে এবং সভায় অনুমোদন হলে তা কার্যকর হবে।

৪৭-এর ৬ উপ-ধারায় বলা হয়েছে, ‘সংগঠনের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে শাস্তি প্রদানের জন্যে আওয়ামী লীগের নিম্নতম যে কোনো শাখা বা যে কোনো সদস্যের লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর উপজেলা/থানা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সংসদ নিজেদের সিদ্ধান্তসহ উক্ত অনুরোধপত্র জেলা কার্যনির্বাহী সংসদের নিকট পাঠাবেন। জেলা কার্যনির্বাহী সংসদ এ সম্বন্ধে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়া উক্ত বিষয় বিবেচনাপূর্বক চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের নিকট প্রেরণ করিবেন।’

উপ-ধারা ১০ এ বলা হয়েছে, ‘যে কোনো বহিষ্কারের বিষয়ে জেলা কমিটির সুপারিশের পর কেন্দ্রীয় কমিটি কর্তৃক তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হইলেই কেবল চূড়ান্ত বহিষ্কৃত হইবে এবং অপরাধ প্রমাণিত না হইলে শাস্তি প্রদান করা যাইবে না।

শ্রদ্ধেয় সাংবাদিকবৃন্দ,

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতেগড়া সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জন্যে নিবেদিতভাবে কাজ করে যাওয়া এই আমাকে কী কারণে বহিষ্কার করা হলো? আমার অপরাধই বা কী? আজকের এই সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে আমি চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মহোদয়ের কাছে অনুুরোধ করছি, অবিলম্বে আমাকে আজীবন বহিষ্কারের অগঠনতান্ত্রিক ও অসাংগঠনিক ঘোষণা প্রত্যাহার করুন। আসুন, আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ রেখে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার বিজয় নিশ্চিতকল্পে আমরা নিজেদের মধ্যকার ব্যক্তিস্বার্থ ও ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব ভুলে সবাই একযোগে সফল প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করি। আমার এই আহ্বানের পরও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যদি তাদের অসাংগঠনিক ও অগঠনতান্ত্রিক ঘোষণা প্রত্যাহার না করেন তবে এ ব্যাপারে আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদয় হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

মোঃ সেলিম খান

সভাপতি, লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ

চেয়ারম্যান, লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়ন পরিষদ

চাঁদপুর সদর, চাঁদপুর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়