প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০
অতি বিশাল আয়তনের এই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড। তন্মধ্যে এই মহাবিশ্ব প্রপঞ্চ যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনিই তো অনন্ত বিশ্বপ্রভু। প্রতিনিয়ত তাঁর খেলার উপকরণ হলো রবি-শশী। তারা পর্যায়ক্রমিকভাবে অবণীর সর্বত্র কোথাও প্রত্যক্ষ আবার কোথাও পরোক্ষভাবে বিরাজিত। রবির আবির্ভাবে নিষ্প্রাণ প্রকৃতি প্রাণবন্ত হয়ে উঠে। প্রত্যুষে উদীয়মান ভানুর দেহ থেকে বিচ্ছুরিত আলোকচ্ছটা জীবদেহে এক অনির্বচনীয় অনুভূতির সৃষ্টি করে। যা কর্মোদ্দীপক তো বটেই, প্রকৃতির সুমহান অস্তিত্ব রক্ষায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্রতী হয়ে যায়। বেলা বাড়ার সাথে সাথে রবি থেকে নির্গত অনন্ত শক্তি উদ্ভিদ পত্রে সৃষ্টি করে ‘ক্লোরোফিল’। যা এই অনন্ত অসীম প্রেমময় সবুজ প্রকৃতিকে দান করে এক মোহনীয় রূপ। যে রূপের আবেশে কবি হারিয়ে ফেলে সাময়িকভাবে কবিত্বের ধারাবাহিকতা- লেখকের লেখনি হঠাৎ খেই হারিয়ে ফেলে। সবুজ প্রকৃতি যেনো সুদূর নীলিমায় দিগন্তে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। নিদাঘে রবির দোর্দণ্ড প্রতাপে প্রকৃতি অনেকটা ঝিমিয়ে পড়ে। কিন্তু সায়াহ্ন থেকে গোধূলী পর্যন্ত পূর্বাবস্থায় ফিরে আসে। দিবা ভাগে গভীর জলধি তীরে শত সহস্র ঊর্মির স্কন্ধে সহস্র রবির ছন্দময় নাচন, ছন্দ পিয়াসী বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে যায় রবির এই নান্দনিক সলিল কেলিতে।
তাছাড়া প্রাণী ও উদ্ভিদ জগতের পরস্পর নির্ভরশীলতার প্রধান নিয়ামক রবিরশ্মির প্রভাবকের যে অদৃশ্য কার্যকারিতা স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলছে তাতেই সৃষ্টির অটুটত্ব বহাল আছে। এই মহাবিশ্বে পৃথিবী, চন্দ্র ও সূর্য নিজ নিজ কক্ষ পথে থেকেই পরস্পরকে আবর্তন করছে। আবর্তনরত চাঁদ, সূর্য ও পৃথিবী যখন একই সরলরেখায় থাকে এবং চাঁদ ও সূর্য যখন পৃথিবীর একই পাশে থাকে তখন অমাবস্যা। আবার পৃথিবীর যে পাশে সূর্য অবস্থিত তার ঠিক উল্টো দিকে যখন চাঁদের অবস্থান থাকে, পূর্ণিমা ঠিক তখনই ঘটে। এভাবে প্রতি পনের দিন পর পর চাঁদণ্ডপৃথিবী এবং সূর্য যখন একই সরল রেখায় অবস্থান করে তখনই পর্যায়ক্রমে পূর্ণিমা এবং অমাবস্যা সংঘটিত হয়। পূর্ণিমায় প্রকৃত পক্ষে চাঁদের অর্ধাংশই দৃশ্যমান। তা পর্যায়ক্রমে কলায় কলায় পরিপূর্ণ হতে পনের দিন সময় লাগে। দিনের বেলায় রবির উপস্থিতিতে উদ্ভিদে সালোকসংশ্লেষণ আর রাতে উদ্ভিদের শ্বসন প্রস্বেদন ক্রিয়ার ফলেই প্রাণী ও উদ্ভিদ জগতের অস্তিত্ব টিকে আছে।
আবার চাঁদ ও সূর্যের মধ্যখানে একই সরল রেখায় যখন পৃথিবী অবস্থান করে তখন পৃথিবীর ছায়ার জন্যে চাঁদে সূর্যের আলো পৌঁছে না। তখন কিছু সময়ের জন্য চাঁদকে দেখা যায় না--ইহাই চন্দ্র গ্রহণ। অর্থাৎ পৃথিবী পৃষ্ঠের কোনো দর্শকের কাছে চাঁদ আংশিক বা সম্পূর্ণ রূপে অদৃশ্য হয়ে যায়। আবার চাঁদ যখন পরিভ্রমণরত অবস্থায় কিছু সময়ের জন্যে পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে এসে পড়ে তখন কিছু সময়ের জন্যে পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে সূর্য আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে অদৃশ্য থাকে--ইহাই সূর্যগ্রহণ। যা শুধুই অমাবস্যার দিন ঘটে।
প্রদাষ থেকে প্রত্যুষ পর্যন্ত মহাকাশে জ্বলজ্বল করছে রাশি রাশি তারকা, গ্রহ, নক্ষত্র, জ্যোতিষ্ক এবং উপগ্রহসমূহের মধ্যে কাছের তারকা হলো সূর্য, যার সরাসরি প্রভাবে এ ভূমণ্ডল প্রভাবিত। সৌর জগতের রাজা হলো সূর্য। একমাত্র নিকটতম তারকা, এর গ্রহ সংখ্যা আটটি যথা : বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস ও নেপচুন। এগুলো ছাড়াও প্লুটোনামের একটি বামন গ্রহ আছে। এগুলো মিলেই সৌর জগৎ। জ্যোতির্বিদদের মতে, এমন অগণিত সৌর জগৎ নিয়েই এই মহাবিশ্ব গঠিত।
জ্যোতির্বিদ্যা সম্পর্কিত দূরত্বকে বলা হয় ‘আলোকবর্ষ’। এক আলোকবর্ষ সমান ৯.৪৬ ট্রিলিয়ন কিলোমিটার। এক তারকা জগত থেকে অন্য তারকা জগতের দূরত্ব লক্ষ লক্ষ আলোক বর্ষ। কাজেই মহাজাগতিক ধারণা মানুষের জন্যে স্ব-কপোলকল্পিত বটেই।
বিমল কান্তি দাশ : কবি ও প্রবন্ধকার; অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষক, বলাখাল যোগেন্দ্র নারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয় ও কারিগরি কলেজ, বলাখাল, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর।