প্রকাশ : ২৪ জুন ২০২৩, ০০:০০
পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ মানুষ হয়ে জন্মেছি আমরা। ভুল-ক্রটি নিয়েই আমাদের জীবন চলা। ভালো-মন্দ মিলিয়েই আমাদের বেঁচে থাকা এই সুন্দর বসুন্ধরায়। যাঁরা সচেতন, বিবেকবান, নৈতিকতাসম্পন্ন, চারিত্রিক সৌন্দর্যে বলীয়ান তাঁদের মনের একান্ত মিনতি ‘ভালো মানুষ হতে চাই’। যাঁরা ভালো, আদর্শবান, শ্রেষ্ঠ মানুষ তাদের জীবনের সৌন্দর্যের আলোতেই আলোকিত হয় পরিবার, সমাজ, জাতি, রাষ্ট্রসহ গোটা বিশ্ব। বিভিন্ন সমস্যা নিয়েই মানুষের জীবন, কেউ নানাবিধ সমস্যার বাইরে নয়। তবে একেক জনের একেক রকম। কারো হয়তো অর্থের সমস্যা, কেউ হয়তো শারীরিক সমস্যায় ভুগছে, আর কারো রয়েছে মানসিক সমস্যা। তবে সমস্যা নিয়ে হতাশায় না ভুগে তা জয় করে সামনে এগিয়ে চলাই হচ্ছে জীবন। আমরা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক কিংবা বড় বিজনেস করে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে বাড়ি, গাড়ি, অর্থবিত্ত অর্জন করবো তাতে দোষের কিছু নেই। তবে যদি মানুষের মতো মানুষ না হতে পারি, তার মধ্যে যদি সততা, বিবেকবোধ জাগ্রত না হয়, যদি নিজের জন্যে যেটা চিন্তা করে অন্য মানুষের জন্যে একই রকম চিন্তা না করতে না পারে, জীবনটাই বৃথা হয়ে যাবে। প্রতিটি মানুষের জীবনের উদ্দেশ্য হোক সততা, মানবিকতা, মনুষ্যত্ব, বিবেককে জাগ্রত করে মিথ্যা, অসততা পরিহার করে যে যেই পেশায় নিয়োজিত হোক না কেন পেশার প্রতি শতভাগ শ্রদ্ধা ও আন্তরিকতা রেখে মানুষের সেবা করা। প্রকৃতপক্ষে আমাদের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত সেবার মাধ্যমে ক্ষুদ্র স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে মানুষের মতো মানুষ হওয়া, ভালো মানুষ হওয়া।
মানবজীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন কী হতে পারে? প্রভূত অর্থ-সম্পত্তির মালিক হওয়া? বিশ্বব্যাপী খ্যাতি ছড়িয়ে পড়া? কঠিনতম স্বপ্নগুলো পূরণ করতে পারা? এগুলোর কোনোটির গুরুত্বই কম নয়। কিন্তু আমরা যেহেতু মানুষ, তাই আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জনটি হলো একজন ‘ভালো মানুষ’ হয়ে ওঠা। অর্থাৎ এমন একজন মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলা, যার নিজের ব্যাপারে মনে কোনো খেদ থাকবে না, আবার অন্যরাও নির্দ্বিধায় বলে দেবে, ‘হ্যাঁ, তুমি একজন ভালো মানুষ।’ কিন্তু কীভাবে হওয়া যায় একজন সত্যিকারের ভালো মানুষ? কিংবা সত্যিকারের ভালো মানুষ হওয়া কি আদৌ সম্ভব? অনেকেরই হয়তো মনে হতে পারে না, আজকের দিনে আর পরিপূর্ণ ভালো মানুষ হওয়া সম্ভব নয়, ভালো মানুষ হয়ে এই সমাজ সংসারে টিকে থাকা অসম্ভব। কিন্তু না, ভালো মানুষ হওয়া অতটাও কঠিন কিছু নয়। চাইলেই হয়ে ওঠা যায় একজন ভালো মানুষ। ভালো মানুষ হতে চাইলে প্রথমেই ভালোবাসতে হবে নিজেকে, নিজের দুর্বলতাগুলোকে স্বীকার করতে হবে, করতে হবে ইতিবাচকতার চর্চা, রাগ দমন করতে হবে, পরমতসহিষ্ণু হতে হবে, হতে হবে বিনয়ী ও মার্জিত, অন্যের সাহায্য করতে হবে, কাটিয়ে উঠতে হবে পরশ্রীকাতরতা, হতে হবে সহানুভূতিশীল, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে, অজুহাত দেয়া যাবে না এবং ভালোবাসা ছড়িয়ে দিতে হবে।
‘ভালোবাসা’ কথাটিকে নেহাৎ রোমান্টিকতায় সীমাবদ্ধ না রেখে একে আমাদের দৈনন্দিন অভ্যাসে পরিণত করতে হবে। প্রতিনিয়ত ভালোবাসার অনুশীলন করতে হবে। নিজেকে তো ভালোবাসতে হবেই, পাশাপাশি ভালোবাসতে হবে আশেপাশের প্রতিটি মানুষকে। যখন আমরা আমাদের পরিবার, সমাজ, দেশ বা বিশ্বের সকলকে ভালোবাসব, তখন আশেপাশের সবার প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিরও আমূল পরিবর্তন ঘটবে। আগে হয়তো আমরা সবকিছুতেই কেবল সমস্যা খুঁজে পেতাম। কিন্তু যখন আমরা ভালোবাসার চোখ দিয়ে আমাদের পরিপার্শ্বকে দেখবো, তখন তাদের প্রতি আমাদের মমত্ববোধও আরো বেড়ে যাবে এবং তাদের প্রতি মনের নেতিবাচকতাও দূর হবে। আশেপাশের যারা ভালো তাদেরকে আগলে রাখতে চাইবো এবং যারা হয়তো আমাদের দৃষ্টিতে খারাপ, তাদেরকেও ঘৃণা করার বদলে সংশোধনের আপ্রাণ চেষ্টা চালাবো, তাদেরকেও একটি সুন্দর জীবন উপহার দিতে চাইবো। তাই পরিশেষে বলবো, ভালো মানুষ হতে চাইলে ‘ভালোবাসার’ বিকল্প নাই।
ড. আব্দুস সাত্তার : কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক, ওয়াশিংটন ডিসি।