বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ১০ জুন ২০২৩, ০০:০০

 ‘সম্পর্কে’র মন্তব্য আজও লিখতে পারিনি
সুমন কুমার দত্ত

‘আমি আমার জীবনের একটি গল্প বলতে চেয়েছি, তা বলতে পেরেছি কিনা সেটি হল বড় কথা। আমি সব সময়ই নিজ জীবনের গল্প বলতে পছন্দ করি। লেখক হয়ে নিজ জীবনের গল্প লিখে না যাওয়াটাকে আমি অপরাধ হিসেবেই দেখি।’ ২৩ পৃষ্ঠার সম্পর্ক নামক ছোট কাগজের মুখবন্ধে তছলিম হোসেন হাওলাদার এভাবেই স্বীয় মনোভাব প্রকাশ করেন। ২০১৯ সালের জুলাইয়ের সাত তারিখ শুভেচ্ছাসহ স্বাক্ষরিত ‘সম্পর্ক’ তুলে দেন আমার হাতে। তুলে দেয়ার মুহূর্তটা স্মৃতির ঘরে ঠাঁই দিতে তছলিম ভাই নিজেই আগ্রহ দেখালে প্রিজম কম্পিউটারের স্বত্বাধিকারী লিটন পাটওয়ারী ফ্লাস অনের দায়িত্বটি নেন।

ওইদিন রাতেই তছলিম ভাই হঠাৎ ফোন করে বসলেন আমাকে। বল্লেন, দত্ত! আমার বইটি নিয়ে আলোচনা সমালোচনা জানতে চাই, পড়ে জানাবে কিন্তু। প্রতিউত্তরে হাসতে হাসতে বল্লাম, আমি কিন্তু লিখে-টিখে কোনো মন্তব্য করতে পারবো না। এত কঠিন কাজ আমি পারি না। যা বলার আপনাকে সরাসরি বা ফোনে বলবো। তছলিম ভাই মজার মানুষ। সহজ করে বলে দিলেন, আমাকে যা বলবে তা একটা কাগজে লিখে দিলেই হবে। সোজা কথা, আমার কাছ থেকে একটা লিখিত মন্তব্য চেয়েছিলেন সম্পর্ক নিয়ে। যা আমি আজও লিখতে পারিনি!

অলস সময়ে (বইটি হাতে পাওয়ার দ্বিতীয় দিন) তছলিম হোসেন হাওলাদারের সম্পর্ক হাতে নিলাম। ছোট করে গোছানো সূচির শুরুতেই মুখবন্ধে মনের ভাবটা প্রকাশ করলেন তিনি। মুখবন্ধ দ্বিতীয়বার পড়ার পরে শেষভাগে এসে মনে হলো, লেখক হয়তো কিছুটা ব্যথিত মনেই লিখেছেন, ‘সাধারণ মানুষ বলেই লোকজন আমাদের জীবন কাহিনীগুলো পড়তে চায় না। কিন্তু পড়া উচিত। আর পড়লেই আমরা বুঝতে পারবো যে, কাল থেকে কালান্তরের দূরত্ব খুব বেশি নয়, কাছে। হাত বাড়ানোর মতোই কাছে। আর মানুষজনকেও মনে হবে কেমন যেন চেনাজানা।'

কিন্তু পড়া উচিত! এ কিন্তু থেকেই বইটি পড়া শুরু করলাম। পড়তে পড়তে প্রায় ষাটভাগ একটানা শেষ করলাম। একটা অন্যরকম অনুভূতি আমার চারপাশে ঘুরপাক খাচ্ছিল তখন। কিসের একটা টান বাকি চল্লিশভাগের দিকে সেদিন টেনে নিয়েছিলো আমায়। আবার পড়া শুরু করলাম। একদিনেই শেষ হলো তছলিম ভাইয়ের ‘সম্পর্ক’।

তছলিম ভাইকে খুব অনুভব করলাম ঐ মুহূর্তে। আবেগ সইতে না পেরে মোবাইল হাতে নেই, ফোন করি তাকে। আমার ফোনে উচ্ছ্বসিত তিনি। আমি তখন আবেগপ্রবণ। আমার স্পষ্ট মনে আছে, আমি বলেছিলামণ্ড আপনার মত সৎ সাহস নিয়ে এতো সুন্দর ও সহজ উপস্থাপনা আমি আর কোনোদিনও পাঠ করিনি। বিশ্বাস করেন, আমি সত্যিকার অর্থেই অভিভূত এত সরল বাক্যে নমনীয়তা নিয়ে আপনি আপনার নিজের কথাগুলো তুলে ধরেছেন। যা আমার মনকে প্রভাবিত করেছে ভীষণরকম কাতরায়। আপনার লেখায় বইয়ের হাটের ইতিহাস পেয়েছি, পেয়েছি আখন ঘাটের ঐতিহ্য। মহান মুক্তিযুদ্ধে আপনার স্বচক্ষের চিত্রাবলিসহ খুঁজে পেয়েছি গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া মাধুর্য। আপনার শৈশব থেকে যৌবন এরপর লেখকসত্তা, খুঁজে পেয়েছি আপনার প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির হিসেব। প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতার নির্মম সত্যতা আর ভালোবাসার পরম উদাহরণ। তছলিম ভাই আর আমার ফোন আলাপের দীর্ঘক্ষণে কথা হয় আরও বেশ কিছু বিষয় নিয়ে যার সবটুকু মনে নেই এ মুহূর্তে। অবশ্য এইটুকু বেশ মনে আছে, তছলিম ভাই পূর্বের ন্যায় বার বার বলছিলেন, দত্ত! আমার বইয়ের ভালোলাগা মন্দলাগার বিষয়গুলো যা আলোচনা হলো এতক্ষণ তা একটা কাগজে লিখে দিও। হাসতে হাসতে আমি বলেছিলাম, এটা একটা কঠিন কাজ ভাই, আমি আগেও বলেছিলাম আপনাকে। আচ্ছা তারপরও চেষ্টা করবো একটা মন্তব্য লিখতে। যা আজও লেখা হয়নি।

সাত জুলাই বইটি আমাকে দেয়া হয়। আট জুলাই অর্থাৎ বই পাওয়ার পরের দিন আমি ২৩ পৃষ্ঠার পুরো বইটি পড়া শেষ করি এবং রাতেই তাঁকে প্রতিক্রিয়া জানাতে ফোন করি। আগের দিনের প্রতিক্রিয়া নিয়ে নয় জুলাই অর্থাৎ তৃতীয় দিনের মাথায় তছলিম ভাই তাঁর নিজ ফেসবুক আইডি থেকে বইটি দেয়া-নেয়ার ছবিসহ একটি স্ট্যাটাস দেন। যেখানে লিখেছিলেন, ‘সম্পর্ক আত্মজৈবনিক ক্ষুদ্র রচনাগ্রন্থ। এখনো প্রকাশনা উৎসব করিনি বা কাউকে দেইনি। সেদিন এক কপি কম্পোজারকে দেখাতে নিতে গিয়ে দেখা হয়ে গেল স্নেহভাজন কবি সুমন কুমার দত্তের সাথে। কপিটি পরে তাকেই দিই। বইটি পড়ে গতরাতে ফোনে অনেকক্ষণ তার ভালোলাগা মন্দলাগা বিষয়ে কথা বলে সে। বইটি পড়ার জন্য সুমন দত্তকে অশেষ ধন্যবাদ।’ ছবি ঋণে লিটন পাটওয়ারীর কথা লিখেছেন। যা এখনো তাঁর আমার ফেসবুক একাউন্টে স্মৃতির অন্তরালে গুমড়ে কাঁদে।

সৃষ্টির নিয়মে তছলিম ভাই আজ ওপারে। এপারের তছিলম ভাই ছিলেন একজন নির্ভেজাল সাদামাটা মানুষ। যার বলায় এবং চলায় সরলতা ছিলো দৃশ্যমান। সাহিত্য পাড়ায় আমি অনিয়মিত হলেও দু-একটা অনুষ্ঠানে তাঁর সান্নিধ্য ঠিকই পেতাম। কথা হতো দীর্ঘক্ষণ। চাঁদপুরের সাহিত্য নিয়ে আশার কথা শোনাতেন প্রায়ই। খুব স্নেহও করতেন আমায়। তাঁর হঠাৎ চলে যাওয়া খুব ব্যথিত করেছে আমায়। তছলিম হোসেন হাওলাদারের মত অহংকারহীন এবং সহজ ও সরল ভাষার একজন লেখক চাঁদপুর সাহিত্য অঙ্গনে শূন্য রবে কাল থেকে কাল।

পরিচিতি : সুমন কুমার দত্ত, প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক, সাহিত্য কণ্ঠ, শাহ্তলী, চাঁদপুর। (০১৭৪০৫৬৪৩১০)

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়