প্রকাশ : ০৬ মে ২০২৩, ০০:০০
মানুষ তিন ধরনের স্বপ্ন দেখে। প্রথমতঃ দিবা স্বপ্ন, যা সম্পূর্ণ অলীক। দ্বিতীয়তঃ ঘুমন্ত অবস্থায় মনের ভিডিওতে সুপ্ত অবস্থায় দৃশ্যগুলো অবচেতন মনের পর্দায় ভেসে উঠা, যা মানুষকে অতীত রোমন্থন করার সুযোগ করে দেয়। এটি মানুষের জন্যে আনন্দ উদ্দীপক অথবা বেদনাহত বলয় মাত্র। তৃতীয়তঃ মনের ভিতর একজন বড় মানুষ হওয়ার স্বপ্ন পোষণ করা, যা মানুষকে জাগ্রত করে এবং সময়োচিত পদক্ষেপ গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করে আর নিয়মানুবর্তিতাকে কখনো ভুলে যায় না।
'বড় মানুষ'-এর কখনো অর্থোন্মাদনা হয় না। তাঁরা মানবতার বিকাশ ঘটানোর জন্যে ব্যাকুল। হুগলীতে জন্মগ্রহণ করা এমন একজন বড় মানুষ মরহুম হাজী মুহাম্মদ মহসীন; মানব কল্যাণে নিজের বিশাল অর্থ-সম্পদ নিঃস্বার্থভাবে দান করে মরেও অমর হয়ে রয়েছেন। বাংলাদেশের রণদা প্রসাদ সাহা এমন একজন বড় মানুষ ছিলেন, যিনি জাগ্রত ও বুদ্ধিদীপ্ত মানুষ তৈরির লক্ষ্যে অগণিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সংস্কৃতিবান মানুষ সৃষ্টির লক্ষ্যে 'ভারতেশ্বরী হোমস্' প্রতিষ্ঠা করেন। এঁরা উভয়েই ছিলেন শিক্ষক সদৃশ। যেমন প্লেটো ছিলেন বিশ্ববিখ্যাত একজন গ্রিক দার্শনিক, যিনি সক্রেটিসের ছাত্র ছিলেন। দার্শনিক এরিস্টটল তাঁর ছাত্র ছিলেন। এঁরা সবাই আবার প্রকৃত মনুষ্যত্ব গঠনের শিক্ষক ছিলেন । মানুষের মনুষ্যত্বকে বিকশিত করার সেই দার্শনিক উক্তিগুলো ৩৮৪ খ্রিস্ট পূর্বাব্দ থেকে আজ পর্যন্ত জাগ্রত আছে এবং অনাদিকাল পর্যন্ত থাকবে।
উক্তিগুলোর মধ্যে কয়েকটি হলো : Know thyself (অর্থাৎ অগ্রে নিজেকে জান)। নিজের ত্রুটি-বিচ্যুতি সম্পর্কে নিজে সজাগ থাকতে পারলে, নিজের সমালোচনা নিজে করতে পারলেই নিজেকে নিজে জানার পথটি সুগম হয়। যা মানবীয় গুণ। “তুমি কিছুই জান না এটা জানাই জ্ঞানের আসল মানে”। ধর্মণ্ডবর্ণ-জাতীয়তা নির্বিশেষে বাণীগুলোর বৈশ্বিক কণ্ঠে অনুরণন প্রতিটি মানব হৃদয়কে আন্দোলিত করে। এজন্যে এঁরা দার্শনিক এবং অবিসংবাদিত ‘শিক্ষক’।
ইতিহাস-দর্শন-জাতীয়তাণ্ডধর্মতত্ত্ব-মহাবিশ্ব থেকে শুরু করে মানবজীবনের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয় নিবিড় ভাবে যাঁরা পর্যবেক্ষণে তুলে এনেছেন তাঁরা হলেন যীশুখ্রিস্ট-গৌতমবুদ্ধ-হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-রামকৃষ্ণ পরমহংস। এরা পরম মার্জিত মানবিক মূল্যবোধের আধ্যাত্মিক শিক্ষক এবং পূর্ণাঙ্গ জীবন দর্শনের প্রবক্তা।
এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত কবি, দার্শনিক এবং সুফিসাধক মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমির 'কেবইল নিঃশ্বাস' কবিতার শেষ পংক্তি হলো : আমার অবস্থান= অবস্থান হীন, আমার গমন পথ=পথচিহ্নহীন, না দেহে না আত্মায়= আমি সংযুক্ত আমার প্রিয়তমের সাথে, যেখানে দেখেছি দুটি পৃথিবী, একটি হিসেবে যা ইংগিত দেয় এবং জানায়= প্রথমণ্ডশেষ, ভেতর-বাহির এই নিঃশ্বাসটুকুর আশ্রয়ে কেবল মানুষ।” তবু অতৃপ্ত অর্থোন্মাদ ধনবানরা সমাজের বড় মানুষদেরকে পণ্য করছে। অমার্জিত ধনবানদের পরিচিতি স্বদেশে আর ‘বড় মানুষে’র পরিচিতি সর্ব চরাচরে।
বিমল কান্তি দাশ : কবি ও প্রবন্ধকার; অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষক, বলাখাল যোগেন্দ্র নারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয় ও কারিগরি কলেজ, বলাখাল, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর।