বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ২৯ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০

পাঠ্য পুস্তকের আকাল
অনলাইন ডেস্ক

সনাতনী শিক্ষা পদ্ধতি এই যুক্ত বাংলার জন্যে অত্যন্ত ফলপ্রসূ। কালের বিবর্তনে পূর্ববঙ্গ-পশ্চিমবঙ্গ, বঙ্গদেশ, পূর্ববাংলা-পশ্চিম বাংলা, পূর্ব পাকিস্তান-কলকাতা, সর্বশেষ স্বাধীন বাংলাদেশ-পশ্চিম বাংলা। এতরূপে ঐতিহাসিকভাবে খ্যাত ছিল। একদা প্রচলিত ছিল যে, ব্রিটিশ বেনিয়াদের শিক্ষানীতি ছিল শুধুমাত্র করণিক তৈরি করার শিক্ষা। কিন্তু তা ছিল ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন বেগবান করার স্লোগান মাত্র।

তখন বাবার কাছে সন্তান শিখতো শুধুমাত্র নীতিবাক্যগুলো। আর মায়ের কাছে শিক্ষা পেতো বর্ণমালা পরিচয় এবং গুরুগৃহে শিক্ষা পেতো মানবতাবাদী শিক্ষা। তারপর পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত স্তরে স্তরে শিক্ষার মূল বীজ উপ্ত হতো। এই আদর্শ বাল্যশিক্ষার ওপর ভিত্তি করেই যে সকল প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তিগণ বিশ্ববরেণ্য হয়েছেন তাঁরা হলেন অমর্ত্য সেন, রবীঠাকুর, জাতীয় বিপ্লবী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, ভাষা বিপ্লবী কবি মাইকেল মধুসূধন দত্ত, মেঘনাথ সাহা, হরগোবিন্দ্ খোরানা, ড. কুদরতে খুদা, ড. মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ্, স্যার জগদীশ চন্দ বসু প্রমুখ। যাঁদের জন্ম না হলে ভাষা এবং বিজ্ঞানের এত অসাধারণ উন্নতি হতো না। আজ বাংলা ভাষা পৃথিবীর উন্নত ভাষাগুলোর অন্যতম। আধুনিক বিস্ময়কর যোগাযোগ মাধ্যমের উন্নতির মূলে রয়েছে স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর বেতার বার্তা আবিষ্কার।

বর্তমান প্রাথমিক শিক্ষা কারিকুলামে প্রাক্-প্রাথমিক শিক্ষা আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়। এক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি সকলকে একটা নির্দিষ্ট সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে একই পাঠ্য পুস্তকে শিক্ষার মূল ভিত্তি পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত নিয়ে যেতে হয়। আর নৈতিক শিক্ষাটা গৃহাভ্যন্তরীণ দায়িত্ব ও কর্তব্য।

নিবিড় পর্যালোচনা এবং পর্যবেক্ষণে পরিলক্ষিত হচ্ছে যে, প্রতি ইউনিয়নে যতোটা না সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে, তার প্রায় তিনগুণ বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষালয় সৃষ্টি করে নিয়মিতভাবে শিক্ষায় ব্যবসা চালানো হচ্ছে। সরকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়মিতভাবে সকল শিক্ষার্থীকে পাঠ্য পুস্তক সরবরাহ করে থাকে। কিন্তু বে-সরকারি শিক্ষালয়গুলোর এখানে পর্যাপ্ত সমস্যা রয়েছে। মূল সমস্যা কিন্তু শ্রেণি উপযোগী যথাযথ পাঠ্য পুস্তক প্রণয়ন এবং সরবরাহ নিয়ে। বর্তমানে প্রচলিত ইতিহাস-ভূগোলের ধারণা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। ইতিহাস এবং ভূগোল পৃথক না থাকলে মৌলিক শিক্ষাটা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। কারণ ইতিহাস অতীতের প্রেক্ষাপট এবং নগ্ন সত্য বহনকারী। আমরা কোথা থেকে আসলাম তা শিখাবে ভূগোল।

বর্তমানে সরকারের নাকের ডগায় ‘প্লে-নার্সারী-কেজি’ এগুলো প্রাক-প্রাথমিক হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে, যা সরকারি প্রাথমিক পর্যায়ে নেই। এসব অস্বীকৃত শিক্ষালয় থেকে কৌশলে পঞ্চম শ্রেণিতে সরকারি বৃত্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা কীভাবে অংশগ্রহণ করে তার সূত্র অজ্ঞাত।

প্রায় শত বছর পূর্বে প্রাক-প্রাথমিক পাঠ্য বই ছিল মাত্র দুইখানা। ‘আদর্শলিপি’ এবং বাল্যশিক্ষা। মানবীয় চরিত্র গঠনের যথার্থ ভিত্তি সম্বলিত প্রাক-প্রাথমিক পাঠ্য বই আজও বোধ হয় আর সংকলিত হয় নি বা হবেও না। এই পাঠ্য বইখানার জন্য সীতানাথ বসাক বাংলা সাহিত্যে অমর। পাঠ্য বই সংকটে আজ বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনে এক নিদারুণ শিক্ষা-মন্বন্তর ধেয়ে আসছে। পৃথিবীতে অনেক ধনাঢ্য ব্যক্তি ছিলেন এবং আছেন, কিন্তু ক'জনা মানুষের হৃদয়পটে যুগ যুগ ধরে রয়েছেন ? বাংলাদেশের আর. পি. সাহা (জ.চ. ঝধযধ) এবং হুগলীর হাজী মোহাম্মদ মহসীন এদের বিপুল পরিমাণ ধন সম্পদ শিক্ষা তথা মানবের অশেষ কল্যাণে নিঃশর্ত ভাবে দান করে মানব হৃদয়ে চিরঞ্জীব হয়ে আছেন এবং থাকবেন।

এ বাংলায় এখনো প্রফেসর আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ গংয়ের মত ক্ষণজন্মা গুণধর পণ্ডিত রয়েছেন, যাঁদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় জ্ঞানের শক্ত ভিত স্থাপনের নিমিত্ত যথাযথ পাঠ্যপুস্তক প্রণীত হতে পারে। যাদের দ্বারা গঠিত কমিশনের রিপোর্ট আলোর মুখ দেখতে পারে। ড. কুদরতে খুদার প্রণীত রিপোর্ট শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট তৎসদৃশ কেউ কি পরিবর্তন করেছে, তা জনগণ জানতে চায়।

নির্মম হলেও নির্জলা সত্য, পাকিস্তান আমলের কোনো শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট পূর্ণাঙ্গ আলোর মুখ দেখে নি। বাংলাদেশ আমলেও তদ্রƒপ অবস্থা সৃষ্টি হতে চলেছে বিধায় পাঠ্য পুস্তক প্রণয়নের আকাল চলছে দেশে। এ বড় অনাসৃষ্টি। যাক সবুরে তো মেওয়া ফলে! একটা প্রবাদ আছে- Better late than never.

বিমল কান্তি দাশ : কবি ও প্রবন্ধকার; অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষক, বলাখাল যোগেন্দ্র নারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয় ও কারিগরি কলেজ, বলাখাল, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়