বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ২১ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০

ঈদুল ফিতরের তাৎপর্য ও করণীয়
অনলাইন ডেস্ক

যেসব আনুষ্ঠানিক উৎসব মুসলমানদের অস্তিত্বের জানান দেয় ‘ঈদ’ তার অন্যতম। ‘ঈদ’ শব্দটি আরবি, যা আওদ থেকে উৎকলিত। এর শাব্দিক অর্থ ঘুরে ঘুরে আসা, প্রবর্তন করা। প্রচলিত অর্থে ঈদ মানে আনন্দ বা খুশি। যেহেতু এ আনন্দ বছর ঘুরে ফিরে আসে সেজন্যে ঈদকে ‘ঈদ’ বলে নামকরণ করা হয়েছে। মুসলমানদের জাতীয় সাংস্কৃতিক চেতনার প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে ঈদ।

ঈদের সূচনা

ইসলামের ইতিহাস পাঠে জানা যায়, মদীনাবাসী জাহেলী যুগ থেকে শরতের পূর্ণিমায় ‘নওরোজ’ এবং বসন্তের পূর্ণিমায় ‘মেহেরজান’ নামে দুটো উৎসব পালন করতো। যা ছিল ইসলামের সাথে সামঞ্জস্যহীন। এ ব্যাপারে খাদিমুল রাসূল হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “বিশ্বনবী (সা.) যখন (৬২২ খ্রিস্টাব্দে) পবিত্র মক্কা নগরী থেকে হিজরত করে মদীনা মুনাওয়ারায় তাশরীফ আনলেন, তখন মদীনাবাসীদেরকে বছরে দুদিন খেলাধুলা ও আনন্দ করতে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, এ দুদিন কিসের? সাহাবাগণ জবাবে বললেন, জাহেলী যুগে আমরা এই দুই দিবসে খেলাধুলা বা আনন্দ প্রকাশ করতাম। অতঃপর রাসূলে পাক (সা.) এরশাদ ফরমালেন, আল্লাহ তা’আলা উপরোক্ত দিন দুটির পরিবর্তে তা অপেক্ষা উত্তম দুটি দিন তোমাদের খুশি প্রকাশ করার জন্যে দান করেছেন। এর একটি হচ্ছে ‘ঈদুল আযহা’ এবং অপরটি হচ্ছে ‘ঈদুল ফিতর’। তখন থেকেই ইসলামী শরীয়তে দুটি ঈদ অনুষ্ঠান পালিত হয়ে আসছে। ইসলামী শরীয়তে ঈদ শুধু আনন্দ বা অনুষ্ঠানই নয়, বরং ইবাদত।

ঈদুল ফিতর

দীর্ঘ একমাস পবিত্র সিয়াম সাধনার পর শাওয়ালের প্রথম দিনে ইসলামী শরীয়তের প্রণেতা মুসলমানদের জন্যে যে উৎসব নির্ধারণ করেছেন তা-ই হচ্ছে ‘ঈদুল ফিতর’। আমাদের জাতীয় কবি নজরুলের ভাষায় বলা যায়-- ‘রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।’ অপরদিকে চন্দ্র বছরের প্রান্তিক মাস হলো জিলহজ্ব। এ মাসের দশম তারিখে পশু জবেহ করার মাধ্যমে যে উৎসব পালন করা হয় তা হচ্ছে ঈদুল আযহা বা কুরবানির ঈদ। উভয় ঈদের ঘোষণা আল্লাহর হাবীব রহমতে আলম (সা.) দ্বিতীয় হিজরী সনে জারি করেন।

ঈদুল ফিতরের তাৎপর্য

নানা দিক দিকে ঈদুল ফিতরের তাৎপর্য অপরিসীম। এ ব্যাপারে মহানবী (সা.)-এর বাণী প্রণিধানযোগ্য। তিনি এরশাদ করেন, “যখন ঈদুল ফিতরের দিন আসে, তখন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যারা রোজা পালন করেছে, তাদের সম্পর্কে ফিরিশতাদের নিকট গৌরব করে বলেন-- হে আমার ফিরিশতাগণ, তোমরা বলতো! যে শ্রমিক তার কাজ পুরোপুরি সম্পাদন করে তার প্রাপ্য কী হওয়া উচিত? উত্তরে ফিরিশতাগণ বললেন, হে মাবুদ! পুরোপুরি পারিশ্রমিকই তার প্রাপ্য। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, হে ফিরিশতাগণ! আমার বান্দা-বান্দীগণ তাদের প্রতি নির্দেশিত ফরজ আদায় করেছে, এমনকি দোয়া করতে করতে ঈদের (ওয়াজিব) নামাজের জন্য বের হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় আমার মহিমা, গরিমা, উচ্চ মর্যাদা ও উচ্চাসনের শপথ, আমি অবশ্যই তাদের প্রার্থনায় সাড়া দেব। এরপর নিজ বান্দাহগণকে লক্ষ্য করে আল্লাহ পাক ঘোষণা দেন-তোমরা ফিরে যাও, আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিলাম এবং তোমাদের সাধারণ পাপরাশিকে পুণ্যে পরিণত করে দিলাম। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, তখন তারা ক্ষমা প্রাপ্ত অবস্থায় (বাড়িতে) প্রত্যাবর্তন করে।” (আততারগীব ওয়াত তারহীব)

ঈদুল ফিতর-এর ফজিলত ও তাৎপর্য সম্পর্কে হযরত সাঈদ আনসারী (রা.) থেকে বর্ণিত : নবী করিম (সা.) এরশাদ করেন, ঈদুল ফিতরের দিনে আল্লাহর ফিরিশতাগণ রাস্তায় নেমে আসেন এবং গলিতে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলতে থাকেন, মুসলমানগণ! তোমরা আল্লাহর দিকে দ্রুত ধাবিত হও। তিনি তোমাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ইবাদত কবুল করে অসংখ্য পুণ্য দান করে থাকেন। রোজা রাখার আদেশ করা হয়েছিল তোমাদেরকে, তা তোমরা পালন করেছো যথাযথভাবে। রাতেও জাগ্রত থেকে আল্লাহর ইবাদত করেছো। অতএব যাও, তাঁর নিকট থেকে গ্রহণ কর তোমাদের ইবাদতের প্রতিদান। (তাবারানী)

হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ পাকের বাণী- “রোজা আমার জন্যে, আমি নিজেই এর প্রতিদান দেব।” ঈদের দিনে আল্লাহ তা’আলার এ ঘোষণা তার জ্বলন্ত প্রমাণ। ঈদ শুধু আনন্দই নয়, ইবাদতও বটে। এ প্রসঙ্গে হযরত আবু উমামা (রা.) বলেন, “যে ব্যক্তি ঈদের রাতে ঈমানের সাথে এবং সওয়াবের নিয়তে জাগ্রত থেকে ইবাদত করে, তার অন্তর কিয়ামতের বিভীষিকা হতে মুক্ত থাকবে।”

মুয়াজ বিন জাবাল (রা.) হতে বর্ণিত আছে, “যে ব্যক্তি পাঁচটি রজনী জাগ্রত থেকে ইবাদত করে তার জন্য বেহেশত ওয়াজিব হয়ে যায়। রজনীগুলো এই-- জিলহজ্ব মাসের অষ্টম, নবম ও দশম তারিখের রাত, ঈদুল ফিতরের রাত এবং শাবান মাসের পনের তারিখের রাত অর্থাৎ লাইলাতু নিসফি শাবান।” এতেই অনুধাবন করা যায় ঈদুল ফিতরের মাহাত্ম্য, গুরুত্ব ও তাৎপর্য।

ঈদুল ফিতরের আমল বা করণীয়

প্রথম আমল : সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা। সামর্থ্যবান প্রত্যেক নারী-পুরুষ, ছোট-বড় সবার জন্যে রাসূল (সা.) এটা ওয়াজিব করেছেন এবং নির্দেশ দিয়েছেন, যেন তা ঈদুল ফিতর-এর নামাজের পূর্বেই আদায় করা হয়। (বুখারী : ১৫০৩)

হযরত ইবনে আব্বাস (সা.) বলেন, রাসূল (সা.) সাদকাতুল ফিতর নির্ধারণ করেছেন, যাতে করে এটা রোজাদারের রোজার বিচ্যুতি তথা অনর্থক কথা, কাজ ও অশালীন আচরণের ক্ষতিপূরণ হয় এবং অসহায় মানুষের খাবারের সুন্দর ব্যবস্থা হয়। (সুনানে আবু দাউদ : ১৬০৯)

হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বলেন, রাসূল (সা.)-এর যুগে আমরা ঈদুল ফিতর-এর দিনে খাদ্যদ্রব্যের এক সা’ অথবা এক সা’ যব অথবা এক সা’ খেজুর অথবা এক সা’ পনির অথবা এক সা’ কিচমিচ সদকাতুল ফিতর আদায় করতাম। (বুখারী : ১৫০৫)

চলতি বছরে বাংলাদেশে ফিতরার হার জনপ্রতি সর্বোচ্চ ২৬৪০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ১১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ফিতরা নির্ধারিত খাদ্যদ্রব্য, পণ্য সামগ্রী বা সমমূল্যের টাকায়ও আদায় করা যায় এবং অন্য কোনো বস্তু (যেমন : পোশাক-আশাক, ঈদের বাজার প্রভৃতি) কিনেও দেওয়া যায়। মাতা-পিতা ও ঊর্ধ্বতন এবং ছেলে-মেয়ে অধস্তন এবং যাদের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব রয়েছে তাদের সকলের পক্ষ থেকে পরিবারের কর্তা ফিতরা আদায় করবেন (অবশ্য পরিবারের কেউ সচ্ছল হলে নিজের ফিতরা নিজেই দিতে পারবে)।

ঈদুল ফিতরের দিন নামাজের পূর্বে আদায় করলে ফিতরা আদায় হবে, নামাজের পরে আদায় করলে দান হিসেবে আদায় হবে। ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের পূর্বে কেউ মৃত্যুবরণ করলে তার ফিতরা আদায় করতে হবে না, তবে ঈদের নামাজের পূর্বে জন্মগ্রহণ করলে তার পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করতে হবে। দ্বিতীয় আমল : ঈদের চাঁদ তথা মাহে শাওয়ালের চাঁদ দেখার পর একজন মুমিনের অন্যতম করণীয় হলো মাসনুন দোয়া করা। রাসূল (সা.) নতুন চাঁদ দেখলে নি¤েœর দোয়াটি পড়তেন, ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল আমনি, ওয়াল ইমানি, ওয়াস সালামি, ওয়াল ইসলামি, ওয়াত তাওফিকি লিমা ইউহিব্বু রাব্বুনা ও ইয়ারদা রাবাবুনা ওয়া রাব্বুকাল্লাহ।’ অর্থাৎ আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ। হে আল্লাহ, আপনি এই নতুন চাঁদের (নতুন মাসের) সূচনা করুন কল্যাণ, নিরাপত্তা ও ঈমানের সাথে, শান্তি ও ইসলামের সাথে (এবং আমাদের প্রভু যা ভালোবাসেন এবং পছন্দ করেন তা পালনের তাওফীকসহ)। (হে নতুন চাঁদ), আমাদের ও তোমার প্রভু আল্লাহ। (তিরমিযি)

তৃতীয় আমল : শাওয়ালের চাঁদ ওঠার পর থেকে ঈদের সালাত আদায় পর্যন্ত তাকবীর পাঠ করা। আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘যাতে তোমরা গণনা পূরণ করো এবং তোমাদের হেদায়াত দান করার দরুণ আল্লাহ তা’আলার মহত্ত্ব বর্ণনা করো (তাকবীর বলে)। যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে পারো।’ (বাকারা: ১৮৫)

আর তাকবীরের পদ্ধতি হলো : অধিক হারে, “ আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ।” এই তাকবীর পড়া ঈদুল ফিতরের সালাত আদায় পর্যন্ত।

পুরুষগণ ঘরে, বাজারে এবং মসজিদে অর্থাৎ সকল জায়গায় আল্লাহর মহত্ত্বের ঘোষণা দিয়ে ইবাদতের মাধ্যমে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে। মহিলাদের জন্য নিচু স্বরে বলা সুন্নাত। কতই না সুন্দর ঈদের দিনে মুসলমানের অবস্থা। তাদের সিয়াম সাধনার মাস শেষে তারা সর্বত্র তাকবীর ধ্বনি দ্বারা আল্লাহর বড়ত্ব ও মহত্ত্ব প্রকাশ করে এবং তারা আল্লাহর তাকবীর, প্রশংসা ও একত্ববাদের ঘোষণা দিয়ে আকাশ-বাতাস মুখরিত করে তোলে। তারা আল্লাহর রহমতে আশাবাদী এবং তাঁর আযাবের ভয়ে শঙ্কিত।

চতুর্থ আমল : ঈদের সালাত আদায় করা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা ঈদে বান্দাকে ঈদের সালাত আদায়ের হুকুম দিয়েছেন। রাসূল (সা.) এ বিষয়ে তাঁর উম্মতের নারী-পুরুষ সকলকে আদেশ করেছেন। রাসূল (সা.)-এর আদেশ আল্লাহর হুকুমেরই অনুরূপ। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো। তোমাদের আমলসমূহকে নষ্ট করো না। মুহাম্মদ : ৩৩)

রাসূল (সা.) নারীদের ঈদের সালাত আদায়ের জন্যে ঈদগাহে যেতে বলেছেন। যদিও তাদের জন্যে ঈদের সালাত ব্যতীত অন্যান্য সালাত ঘরে পড়াই উত্তম।

উম্মে আতীয়া (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূল (সা.) আমাদেরকে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহাতে সালাতের উদ্দেশ্যে বের হতে বলেছেন। এমনকি ঋতুবর্তী নারীদেরকেও। ঋতুবর্তী নারীগণ সালাতে অংশগ্রহণ করবে না। ঈদগাহে একপাশে থাকবে এবং দো’আয় শরিক হবে। তিনি বলেন, আমি আরজ করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের প্রত্যেকের পর্দা করার মতো চাদর নেই। রাসূল (সা.) ঈদুল ফিতরের সালাতে খেজুর না খেয়ে বের হতেন না এবং তিনি বিজোড় সংখ্যায় হিসাব করে খেতেন। (বুখারী ও আহমদ)। তবে আমাদের দেশে মহিলাদের জন্য ঈদগাহে আলাদা ব্যবস্থা থাকা সাপেক্ষে তারা অংশগ্রহণ করবেন।

ঈদের দিনের সুন্নতসমূহ

১. ফজরের নামাজ জামাতের সাথে পড়া। নইলে ঈদের রাতে ফজিলত হতে বঞ্চিত হবে।

২. মিসওয়াক করা।

৩. গোসল করা।

৪. শরিয়ত সম্মত সাজসজ্জা করা ও সুগন্ধি ব্যবহার করা।

৫. সামর্থ্য অনুযায়ী উত্তম পোশাক পরা। সুন্নাত আদায়ের জন্য নতুন পোশাক জরুরি না।

৬. ঈদুল ফিতরে ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে মিষ্টি জাতীয় জিনিস, যেমন খেজুর ইত্যাদি খাওয়া।

৭. সকাল সকাল ঈদগাহে যাওয়া।

৮. ঈদুল ফিতরে ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে সাদাকায়ে ফিতর আদায় করা।

৯. ঈদের নামাজ ঈদগাহে আদায় করা সুন্নাত। মসজিদেও আদায় করা যায়।

১০. এক রাস্তা দিয়ে ঈদগাহে যাওয়া, অন্য রাস্তা দিয়ে ফেরা।

১১. বেশি দূরে না হলে পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া।

১২. ঈদুল ফিতরে ঈদগাহে যাওয়ার সময় আস্তে আস্তে এই তাকবির বলতে থাকা।

১৩. পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া।

ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া সুন্নাত। আলী বিন আবী তালেব (রা.) বলেন, সুন্নাত হলো, ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া। (তিরমিযী)

১৪. ঈদের পর শুভেচ্ছা বিনিময় করা। রাসূল (সা.)- এর সাহাবাগণ সাধারণত শুভেচ্ছা বিনিময়ে বলতেন, ‘তাকাব্বাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম।’ অর্থাৎ আল্লাহ আমাদের ও আপনার আমল কবুল করুন। আমরা সাধারণত ঈদ মুবারক বলি। তবে সাহাবাদের বাক্যগুলি ব্যবহার করাই উত্তম।

সর্বোপরি কথা হলো, সম্মানিত মুসলিম উম্মাহ! আমরা জুমআতুল বিদার মাধ্যমে রামাদানকে বিদায় জানাতে চলেছি। কিন্তু কিভাবে?-বিশ্বাসঘাতকতার সাথে না বিশ্বস্ততার সাথে? রামাদান এসেছিল কুরআন, সিয়াম, কিয়াম ও তাকওয়া উপহার নিয়ে। আমরা কি রমাদানের সাথে এগুলোকেও বিদায় করে দেব? তাহলে রমাদানের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা হলো। রমাদানের হাদীয়া ভালবেসে গ্রহণ করুন। কুরআন ছাড়বেন না। কত কষ্ট করে সারা মাস তারাবীহে কুরআন শুনলেন। যদি বুঝতে পারতেন তাহলে এ শোনার আনন্দ, তৃপ্তি ও সওয়াব আরো বেশি হতো। কুরআনের নূরে হৃদয় আলোকিত হতো। আসুন সকলেই নিয়ত করি, আগামী রমাদানের আগে একবার অন্তত পূর্ণ কুরআন অর্থসহ পাঠ করবো। যেন আগামী রমাদানে তারাবীহের সময় কুরআন শোনার সময় অন্তত কিছু বুঝতে পারি।

সিয়াম ছাড়বেন না। রাসূলুল্লাহ (সা.) বিভিন্ন হাদীসে বলেছেন যে, আল্লাহর সন্তুষ্টি, রহমত, বরকত ও রূহানিয়্যাত অর্জনের জন্য নফল সিয়াম অতুলনীয় ইবাদত। প্রতি মাসে তিন দিন, বিশেষত প্রতি আরবি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে সিয়াম পালন করা, প্রতি সপ্তাহে সোমবার ও বৃহস্পতিবার, যিলহজ্ব মাসের প্রথম ৯ দিন, বিশেষত আরাফার দিন, আশুরার দিন এবং তার আগে বা পরে একদিন সিয়াম পালন করার অসীম ফযিলত ও সওয়াবের কথা বিভিন্ন হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি। রমাদানের পরেই শাওয়াল মাস। ১লা শাওয়াল আমরা ঈদুল ফিতর আদায় করি। ঈদের পরদিন থেকে পরবর্তী ২৮/২৯ দিনের মধ্যে ৬টি রোজা রাখার বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন- “যে ব্যক্তি রমাদান মাসের সিয়াম পালন করবে। এরপর সে শাওয়াল মাসে ৬টি সিয়াম পালন করবে, তার সারা বৎসর সিয়াম পালনের মত হবে।”(মুসলিম)

কিয়াম ছাড়বেন না। কিয়ামুল্লাইলের সাওয়াব ও ফজিলত শুধু কুরআন ও সহীহ হাদীস থেকে জমা করলেও একটি বড় বই হয়ে যাবে। যদি শেষ রাতে না পারেন তবে অন্তত প্রথম রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে দু-চার রাকাত সালাত আদায় করবেন। বিভিন্ন সহীহ হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি যে, প্রতি রাতে, রাতের প্রথম তৃতীয়াংশ বা ৪ ঘন্টা অতিক্রান্ত হওয়ার পরে, রাত ১০/১১ টা থেকে দু’আ কবুলের ও রহমত বরকতের সময় শুরু হয়। সারাদিন যেভাবেই কাটান না কেন, অন্তত ঘুমাতে যাওয়ার আগে দু-চার রাকাত কিয়ামুল্লাইল আদায় করে সামান্য সময় আল্লাহর যিকর ও দরুদ পাঠ করে আল্লাহর দরবারে সারাদিনের গোনাহের ক্ষমা চেয়ে ও নিজের সকল আবেগ আল্লাহকে জানিয়ে ঘুমাতে যাবেন।

তাকওয়া ছেড়ে দেবেন না। রমাদানের পরে ইবাদত বন্দেগী কিছু কমে যাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু তাই বলে মুমিন ইচ্ছাকৃতভাবে পাপের পক্ষে ফিরে যেতে পারেন না। তাহলে তো রমাদানের সকল পরিশ্রম বাতিল করে দেওয়া হলো।

আসুন মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন মাহে রমাদানে আমাদের যাবতীয় আমল কবুল করেন এবং রমাদানে নাজাত প্রাপ্তদের সারিতে আমাদেরকেও অন্তর্ভুক্ত করেন। আমিন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়