প্রকাশ : ০৬ মার্চ ২০২৩, ০০:০০
শ্রদ্ধাঞ্জলি : মোঃ লুৎফুর রহমান
চিরদীপ্ত চাঁদপুর কলেজ
গতকাল প্রয়াত হয়েছেন চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মোঃ জিল্লুর রহমান জুয়েলের পিতা, অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী মোঃ লুৎফুর রহমান। সম্প্রতি তিনি চাঁদপুর সরকারি কলেজের ৭৫ বছরপূর্তির স্মারক ‘স্বর্ণস্মৃতি’তে লিখেছেন। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে লেখাটি চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত হলো।
তৎকালীন মুসলমানরা স্কুলে পড়তো চাইতো না। তখন স্যার সৈয়দ আহমদের পরিকল্পনায় নিউ স্কিম মাদ্রাসা চালু হলো। সেখানে স্কুলে পাঠ্য সাধারণ বিষয়গুলোসহ হাদিস-কোরআন বিষয়ে পড়ানো হতো। নিউ স্কিম মাদ্রাসাগুলো ঢাকা বোর্ডের অধীনে ছিলো। নূরিয়া স্কুলটি তখন নিউ স্কিম মাদ্রাসা ছিলো। আমি, মিজানুর রহমান চৌধুরী, ডা. ফজলুর রহমান, বাচ্চু মিজি একই স্কুলে পড়তাম। আমি এখান থেকেই মেট্রিক পাস করেছি। মিজানুর রহমান চৌধুরী আমাদের দু ব্যাচ সিনিয়র ছিলেন। এরপর ১৯৫০ সালে ভর্তি হই চাঁদপুর কলেজে। কমার্সে পড়তাম। তখন আমাদের অধ্যক্ষ ছিলেন শিক্ষাবিদ পরেশ গাঙ্গুলী। তিনি দর্শনের খুব নামকরা শিক্ষক ছিলেন। তিনি দেবতাতুল্য মানুষ ছিলেন। অসাধারণ পড়াতেন। তাঁর দর্শন ক্লাস কেউ বাদ দিতে চাইতো না। তিনি নিশি বিল্ডিং এলাকায় থাকতেন।
মোঃ আজিমউদ্দিন ছিলেন আমাদের উপাধ্যক্ষ। তিনিও খুব ভালো মানুষ ছিলেন, ভালো পড়াতেন। সেসময় শিক্ষক ছিলেন প্রফেসর দবির উদ্দিন, ইংরেজির প্রফেসর এস এন রায়, প্রফেসর হাবিবুর রহমান প্রমুখ। প্রফেসর হাবিবুর রহমানের বাড়ি ছিল মতলবে। তিনি অমায়িক মানুষ ছিলেন।
আমরা যখন চাঁদপুর কলেজে পড়তাম তখন কোনো ভবন ছিল না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় চাঁদপুর শহরে আর্মিদের ছাউনি ছিলো। আমরা তখন আর্মি ছাউনিতে ক্লাস করতাম। ছাউনিগুলো ছিল অনেক দীর্ঘ। আমরা কলেজে ভর্তি হয়ে দেখেছি, লম্বা আকৃতির ভবনটি মাত্র নির্মাণ হচ্ছে। এ ভবন নির্মাণের জন্যে পুরাণবাজারের ব্যবসায়ীরা অনেক সহযোগিতা করেছেন। তাদের প্রত্যেক মেমোতে কলেজের ভবন নির্মাণ কাজে সহযোগিতার জন্যে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ধার্য করা ছিলো। আমাদের সময়েই একাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
ডব্লিউ রহমান জুট মিল সংলগ্ন গফুর মিজি বাড়ির আবদুল হালিম ছিলো আমার সহপাঠী। আমি কমার্সে, আর ও আর্টসে পড়তো। তবু ভালো আমাদের বন্ধুত্ব ছিলো। পরবর্তীকালে সে প্রশাসন ক্যাডারে কর্মরত ছিলো। আমাদের ক্লাস শুরু হতো সকাল দশটায়। কলেজে যেতাম পাঞ্জাবি-পায়জামা পরে। এটাই ছিলো সেসময়ের ভদ্রোচিত পোশাক। কলেজে খেলাধুলা হতো, বিশেষ করে ফুটবল। ছাত্র রাজনীতি খুব বেশি ছিল না।
এখন বয়সের ভারে অনেক স্মৃতিই ম্লান হয়ে এসেছে। কিন্তু কলেজ জীবনের স্মৃতি এখনও উজ্জ্বল। কলেজ শিক্ষকদের কাছে আমার অনেক ঋণ, যা অপরিশোধ্য। চাঁদপুর কলেজের বেড়ে ওঠার সঙ্গে আমরাও বেড়ে উঠেছিলাম। সেই কলেজের ৭৫ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান দেখতে পারছি, এই আনন্দ অসীম। এই শুভক্ষণে আমার শিক্ষক, সহপাঠীদের স্মরণ করছি। চাঁদপুর সরকারি কলেজ চিরদীপ্ত থাকুক সবসময়।
মোঃ লুৎফুর রহমান : প্রাক্তন শিক্ষার্থী, বাণিজ্য বিভাগ, শিক্ষাবর্ষ : ১৯৫০-৫১।
অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী।