বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ০২ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

ফিরে এসেছে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণচাঞ্চল্য
অনলাইন ডেস্ক

গ্রীস আধুনিক শিক্ষা, সংস্কৃতি, সভ্যতার জন্মভূমি বা তীর্থভূমি। এথেন্স মাতৃপীঠ স্বরূপ। প্লেটোর লাইসিয়াম এবং এরিস্টটলের একাডেমি প্রাচীনকালে জ্ঞানের আলোর ফুলকি জ্বালিয়েছে। গ্রীক বীর আলেকজান্ডারের মৃত্যুর শত বছর পর রোমানগণ শক্তিশালী হয়ে উঠে। তবে তাঁরা গ্রীসের প্রাচীন শিক্ষা সংস্কৃতিকে আদর্শ মনে করতো। বাস্তবমুখী এবং জীবনমুখী শিক্ষায় রোমানগণ আনন্দ পেতো। রোমে শিক্ষা ব্যবস্থা মূল কাঠামোতে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষায় তিনটি স্তরে বিভক্ত ছিল। উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ছিল সে সময় জ্ঞানী-গুণীদের মহামিলনকেন্দ্র। গ্রীক, রোমান, প্রাচীন ভারত, মধ্যযুগের ভারত এবং আজকের দেশীয় শিক্ষা ব্যবস্থা বিবর্তনের ফল। ব্রহ্মপুত্র এবং গঙ্গা মানসসরোবর ও গঙ্গোত্রী নামক হিমবাহ থেকে উৎপত্তি হয়ে দেশ দেশান্তরে ছুটে গিয়ে নিজের বুকের জল উজাড় করে দিয়ে মানুষ, পশু, পাখি তথা প্রাকৃতিক পরিবেশকে বাঁচিয়ে রেখেছে, ঠিক সেইভাবে জ্ঞানের পিপাসা মিটিয়ে আলো জ্বালিয়ে মাথা উঁচু করে আপন মহিমায় দাঁড়িয়ে আছে আমাদের প্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো।

ছাত্রজীবন যে কোনো ব্যক্তির জন্য জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ সময়। এই সময়ে কেউ শিশু থেকে পূর্ণ বয়স্ক ব্যক্তিতে পরিণত হয়। তেমনি ভবিষ্যৎ জীবনের পাথেয় হিসেবে যা কিছু অর্জন করা উচিত সেই সময়ে করতে হয়। জীবনের বীজবপনের শেষ অনুভূতি বড় ট্রাজেডি। আমরা সবাই সেই বেদনার অংশীদার হতে চাই। বরফের ফোঁটার মত ক্ষয়ে যাচ্ছে জীবন। যতই তুষ দিয়ে চেপে রাখা যাক, নীরব ক্ষরণ অবিরত চলছেই। জীবনে সুখের সময় ক্ষণস্থায়ী। দুরন্ত শৈশব, উচ্ছল কৈশোর, চঞ্চল বাঁধভাঙ্গা, বাঁধনহারা যৌবন খুব তাড়াতাড়ি কেটে যায়। কর্মময় জীবন শুরু করার আগে মধুরতম রঙ্গিন জীবন হলো বিশ্ববিদ্যায়ের ছাত্রজীবন। সেখানে সিনিয়র-জুনিয়র সহপাঠী, নবীন-প্রবীন শিক্ষক সবার সাথেই সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির এক অমিয় অবিচ্ছেদ্য বন্ধন গড়ে উঠে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনের সময়টুকু সাংসারিক চিন্তাশূন্য পরিবেশে ছাত্র-ছাত্রীরা বেশি আনন্দ পায়। কালের ধারাবাহিকতায় সেই গল্পগাঁথা অমলিন স্মৃতিগুলো সারাজীবন হৃদয়ে জুড়ে থাকে। প্রিয় ডাইনিং, ফিস্টের দিন, হৈচৈ, হলের ছাদে বসে জ্যোৎস্না উপভোগ, বন্ধু-বান্ধবীদের সাথে আড্ডা, গান, তর্ক, বিতর্ক, বৃষ্টিস্নাত হওয়া, বর্ষাযাপন, গেস্টরুমে বসে কত কল্পনা, পরিকল্পনা, খেলাধুলা, টিভি রুমে প্রিয় দল বা খেলোয়াড়ের নামে স্লোগান, করতালি, ক্যান্টিনের নাস্তায় কারো জন্য অপেক্ষা, শিক্ষা সফর, হল ফেস্টের আয়োজনে হুলস্থুলতা, গল্পময় রাত, র‌্যাগ ডে পালন, কোনো কিছুতে বাজি ধরা, বিভিন্ন উৎসবে একসাথে মেতে ওঠা, চায়ের কাপে টুং টাং শব্দ তথা সৌন্দর্যের প্রতিমায় ভরা ভ্রাতৃত্বপূর্ণ এক সুখের জীবন। ভালবাসা বন্ধুত্ব, রক্তসংগ্রাম, হাসিকান্না, একাকিত্বে সময় কাটানো, দেবদাস পার্বতীদের ভীড় কিংবা প্রেমিক যুগলের হাতের উষ্ণ ছোঁয়া, অনেকের ঘর বাঁধার স্বপ্ন, যুগের পর যুগ ধরে এমন বিচিত্র সব অভিজ্ঞতার নীরব সাক্ষী হয়ে ইতিহাস ঐতিহ্যের ধারক বাহক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। হঠাৎ কখনো বিদ্রোহে কেঁপে উঠেছে এর বুক, কখনো ভালবাসায় শীতল হয়েছে, আবার কখনো সবুজ শ্যামল চত্বর লাল তাজা খুনে হয়েছে ক্ষত-বিক্ষত। অনেকের প্রেম নিবেদনের সফলতা, ব্যর্থতা, ক্যাম্পাসে হাত ধরাধরি করে হাঁটাহাঁটি, অল্প বৃষ্টিতে ভিজে হলে ফেরা, লাইব্রেরীতে নোট তৈরি করা, কেউ ব্যস্ত থাকে মুক্তবুদ্ধি, চিন্তা চর্চায়, আবার কেউ কেউ আজান শোনা মাত্রই মসজিদে ছুটে যায়। ধরাবাঁধা নিয়ম নেই, স্কুলের মত স্যার ম্যাডামদের বকুনি শাসন নেই, তাই কেউ পরাধীন নয়। অনেকে অজপাড়াগাঁ বা রক্ষণশীল পরিবার থেকে সেখানে প্রথমে গিয়ে হতভম্ব হয়ে যায়। কিছুদিন তারাও বড়দের দেখে অনেক কিছুতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। আজকাল উচ্চশিক্ষা বিলাসিতা নয়, উন্নতি ও প্রগতির জন্য অত্যাবশ্যকীয়। দক্ষ, যোগ্য এবং আন্তর্জাতিক মানের জনসম্পদ হিসেবে তাদেরকে পরিণত করতে সরকার এবং ইউজিসিকে আরো ভূমিকা পালন করতে হবে। তা না হলে আমরা বিশ্ব থেকে পিছিয়ে পড়বো।

ব্যক্তিগতভাবে আমি স্বাধীন, সার্বভৌম দেশে লেজুড়ভিক্তিক দলীয় ছাত্র রাজনীতি কম পছন্দ করি। ছাত্রদের ন্যায্য দাবি, অধিকার রক্ষায় নিজস্ব ফোরাম তাদের থাকতে পারে। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডার ছিনতাই, মাদকদ্রব্য, র‌্যাগিং, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, মেধাহীন নিয়োগ বাণিজ্য, প্রশ্নফাঁস, অনৈতিক কর্মকাণ্ড অনেকের জীবনে করুণ পরিণতি ডেকে এনেছে। করোনা মহামারী সারাবিশ্বে শিক্ষা ব্যবস্থায় সেশনজট বাড়িয়ে দিয়েছে, এখন উত্তরণের পালা শুরু হয়েছে। নিয়মিত সমাবর্তন অনুষ্ঠানে দেশি-বিদেশি সরকার রাষ্ট্রপ্রধান, নোবেল বিজয়ী অথবা গুণীদের পদচারণায় মুখরিত হোক প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়। আগামীতে প্রতিটি শিক্ষার্থী আদর্শ, সৎ, অদম্য মেধাবী হিসেবে গড়ে উঠুক। সত্যিকার জ্ঞান অর্জন করে অতিবাহিত হোক তাদের রঙ্গিন সোনালী জীবন। ফেলে আসা অলস সময়ের জন্য যেন আফসোস করে না বলতে হয় “আমার সাধ না মিটিল, আশা না ফুরিল।”

লেখক : শিক্ষক, প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট, ০১৭১৭-৯৭৭৬৩৪, [email protected]

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়