বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ২১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ২৮ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

পোলারিটি
অনলাইন ডেস্ক

এ মহাবিশ্ব প্রপঞ্চ কবে-কখন-কীভাবে সার্বলৌকিক করার জন্যে স্রষ্টা স্ব-সন্ধি-বদ্ধ হয়েছিল সেটি সুরাসুরেরও জ্ঞানাতীত। এই অখিল বিশ্বব্রহ্মা-ের সর্বস্তরের সূর্যোদয়াস্তের প্রভাবে যে এক নিবিড় অদৃশ্য যুগপৎ সম্পর্ক চক্র ক্রমিকভাবে চলে আসছে, তার বিন্দুমাত্র ব্যতিক্রমে প্রকৃতিতে মহাপ্রলয় অবশ্যম্ভাবী। এ বিশ্বজনীন খেলোয়াড় একাই খেলিছে এ মহা বিশ্ব নিয়ে আপন মনে। নভঃলোকের মনোরম খেলাটি হলো শুক্লপক্ষের প্রতিপদে মাত্র এক ফালি চাঁদের এক কলা মাত্র উদিত হয়। ক্রমশ ষোল দিনে পূর্ণিমা তিথিতে ষোল কলা পূর্ণ হওয়া পূর্ণিমার চাঁদ প্রতিভাত হয়। পূর্ণিমার পরদিন কৃষ্ণপক্ষের প্রতিপদে এক কলা করে বিলুপ্ত হতে হতে পনের দিনে ষোল কলা বিলুপ্তিক্রমে ঘোর অমাবশ্যা তথা চন্দ্রবিহীন রাত্রি উপস্থিত হয়। আবার দিবাভাগে রবির উদয়ে সকল সৃষ্টিতেই নতুনভাবে প্রাণের সঞ্চার ঘটে। তেজোদ্দীপ্ত রবি রশ্মির সরাসরি আবেশে সূর্যাস্তের পর যামিনী-শশীর যে চিরন্তনী লুকোচুরি খেলা চক্র-ক্রমিকভাবেই চলে আসছে। তা এই বাংলাকে করেছে এতো মোহনীয়, অবণীর সকল দেশের রাণী। তা-ই আজকের বাংলাদেশ চরম অবস্থার অপরূপ বাংলা।

প্রখ্যাত কবি, সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, পর্যটক এবং লেখকগণের লেখনিতে বাংলার যে নৈসর্গিক চিত্র ফুটে উঠেছে, স্পষ্টতই তার সারবস্তু হলো--এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি। সকল দেশের নিখুঁত সেরা যেটি, সেটি হলো উপমিত বাংলাদেশটি। ক্ষুরধার প্রত্যয় নিয়ে যে বাংলা ১৯৫২-'৬৬-'৬৯-'৭০ এবং ৭১-এর অর্জনগুলো একদিন বর্গীজাতীয় তস্করের কাছ থেকে ছিনিয়ে এনেছিল, তাই আমরা পেয়েছি বিশ্ব মাঝে লাল-সবুজের একখানা স্বাধীন পতাকা। যে ত্রি-শক্তির সমষ্টিতে সেই আন্দোলনগুলো বেগবান হয়েছিল, তা হলো অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে আমজনতার স্বেচ্ছাপ্রণোদিত শক্তিশালী প্রতিবাদ, ছাত্র সমাজের হিমাচল গিরিশৃঙ্গ মালার মত অন্যায়ের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদের ঝড়, তৎকালীন বিরোধী দলীয় অঙ্গনের সোচ্চার প্রতিবাদ। কিন্তু কোথায় হারিয়ে গেল ঐতিহ্যবাহী বাংলার আতিথেয়তা, শোভনীয় আচরণ আর শালীন বিচরণ। আপাত দৃষ্টিতে মনে হয় দায়ী হলো আমলাতান্ত্রিকতা আর বেপরোয়া দলীয়করণ।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর গৃহহীনদের স্বার্থে অভূতপূর্ব 'গৃহায়ন' প্রকল্প লুটেপুটে খাওয়ার দুঃসাহসীদের বিচারের বাণী একদা নিভৃতে কেঁদেছিল বিলক্ষণ। বিচারহীনতা অথবা বিচারে শিথিলতা নগ্ন দুর্বৃত্তায়নের সহায়ক। তাই দেশের প্রতি রন্ধ্রে-রন্ধ্রে ভেজাল ও দুর্নীতির মহোৎসব দুঃসাহসিকতার সাথেই চলে আসছে। কারণ ক্ষমতার প্রতিভূ দলীয় স্থানীয় নেতা। এখানে এখন মানবিক মূল্যবোধের যথেষ্ট অবক্ষয় দেখা দিয়েছে। দেশটির আপাদমস্তক শুধু ভেজাল আর ভেজাল। ফলে ভেজাল, দুধে ভেজাল, চিকিৎসায় ভেজাল, ঔষধে ভেজাল, খাদ্যে ভেজাল, শিক্ষায় ভেজাল, পরীক্ষায় ভেজাল, নেতৃত্বে ভেজাল, নিয়োগে ভেজাল এবং প্রতিশ্রুতিতে ভেজাল। শিক্ষায় ভেজাল জাতির মেরুদণ্ড নষ্ট করে দিচ্ছে এবং দিবে। নির্ভেজাল রাজনীতিই পারে ভেজাল ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়তে। নেলসন মেন্ডেলার একটি বিখ্যাত উক্তি হলো--''শিক্ষা এমন একটি শক্তিশালী অস্ত্র, যার দ্বারা পৃথিবীকে বদলে দেওয়া যায়।” কিন্তু এই বাংলায় শিক্ষায় প্রকারভেদের বিভক্তি প্রকৃত অর্থবহ শিক্ষার প্রধান অন্তরায়। অগণিত মুক্তিযোদ্ধার তাজা রক্তে সিক্ত এই বাংলা এখনো ভেজাল ও দুর্নীতিমুক্ত হতে পারেনি মর্মে শহিদের আত্মা নিরবধি নিজকে অভিশপ্ত মনে করছে। মধ্যযুগের কবি আব্দুল হাকিম মহাক্ষোভে বলেছিলেন, “যে সবে বঙ্গেতে জন্মে হিংসে বঙ্গ বাণী/ সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি ॥” আজকে যারা সরকারে নেতৃত্বে দিচ্ছেন তাদের বোঝা উচিত, দেশব্যাপী শুধুমাত্র কাঠামোগত ব্যাপক দৃশ্যমান উন্নয়নের ফিরিস্তি জনগণকে স্বাধীনতার পূর্ণ স্বাদ দিবে না। অতৃপ্তি থেকে যাবে শুধুমাত্র ভেজাল আর দুর্নীতির অপকৌশলে।

এক লক্ষ ঊনপঞ্চাশ হাজার বর্গ কিলোমিটারের এই বাংলাদেশ। এ পর্যন্ত দেশে যত অবকাঠামোগত দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়েছে, এর বেশি করতে হলে বাংলাদেশের সমআয়তনের একটা বঙ্গোপসাগরীয় চর ভেসে উঠলেই সেটা সম্ভব হবে। অথচ বাংলাদেশে সর্বক্ষেত্রের উন্নয়নেই সর্ষের মধ্যে ভূত রয়েছে। একটা পত্রিকা কার্টুনে দেখেছিলাম, একজন কর্মকর্তা কোনো একটি সংস্থায় এসেছিলেন বৃক্ষরোপণ অভিযান উদ্বোধন করতে। হঠাৎ ঐ প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মচারী এসে বললেন, “স্যার, গাছটি এখানে রোপণ করুন, কারণ প্রতিবছরই এই স্থানে একটি গাছ রোপিত হয়।” এই হলো আমাদের নাগরিক দায়িত্ব বোধ।

এক কালের অতি প্রগতিশীলরা আর আধুনিক প্রতিক্রিয়াশীলরা একত্রে মিলে মিশে যে মারাত্মক বিক্রিয়া ঘটিয়েছে, তাতেই বোধ হয় সোনার বাংলা আজি এত দুর্দশাগ্রস্ত। এতে রাজনীতিতে মারাত্মক পোলারাইজেশন সৃষ্টি হয়েছে। রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষানীতি এবং সর্বোপরি মানবতা পাশবিকতার অক্টোপাশে বন্দী। শুভ বোধোদয় নিষ্কৃতির একমাত্র পথ।

বিমল কান্তি দাশ : কবি ও প্রবন্ধকার; অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষক, বলাখাল যোগেন্দ্র নারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয় ও কারিগরি কলেজ, বলাখাল, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়