প্রকাশ : ২৫ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০
পিবিআইর এমন সাফল্য সত্যিই আশাব্যঞ্জক
বাংলাদেশের প্রথম ধারাবাহিক খুনি (সিরিয়াল কিলার) হচ্ছেন রসু খাঁ। তার আসল নাম রশিদ খাঁ। তার জন্ম ১৯৭৬-৭৭ সালে চাঁদপুর সদর উপজেলাধীন চান্দ্রা ইউনিয়নের মদনা গ্রামে। গ্রামের এক সাধারণ চোর থেকে রসু খাঁ হয়ে উঠেন সিরিয়াল কিলার। একটি মুঠোফোনের কলের সূত্র ধরে ফরিদগঞ্জ থানার পুলিশ তিন মাস চেষ্টা চালিয়ে ২০০৯ সালের ৭ অক্টোবর রসু খাঁকে গাজীপুরের টঙ্গির মিরাশ পাড়া থেকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। গ্রেফতারের পর একে একে ১১ জন নারীকে খুনের কথা স্বীকার করেন রসু খাঁ। সেজন্যে তার বিরুদ্ধে দায়ের হয় ১১টি খুনের মামলা। ইতোমধ্যে কয়েকটি মামলায় তার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়েছে।
|আরো খবর
আজকের এ সম্পাদকীয় নিবন্ধে রসু খাঁ প্রসঙ্গ আসলো কেন-এটা নিয়ে পাঠকমাত্রই প্রশ্ন করতে পারেন। এ প্রশ্নের জবাতে বলতে হয় যে, চাঁদপুর জেলায় রসু খাঁকে গ্রেফতার করার ক্ষেত্রে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশের যে বিস্ময়কর সাফল্য, তারপর আমাদের মতে, স্মরণকালে এমন সাফল্য দেখিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), চাঁদপুর। পিবিআই শাহরাস্তির নূরুল আমিন ও কামরুন নাহার দম্পতির হত্যারহস্য উদ্ঘাটন করতে গিয়ে রিকশাচালকরূপী ছিঁচকে চোর আঃ মালেককে খুনি হিসেবে চিহ্নিত করে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। নিঃসন্দেহে পিবিআইর এমন তদন্ত-সাফল্য আশাব্যঞ্জক এবং আলোড়ন সৃষ্টিকারী। শনিবার (২৩ অক্টোবর ২০২১) সন্ধ্যায় পিবিআইর পুলিশ সুপার খন্দকার নূর রেজওয়ানা পারভীন চাঁদপুর শহরের বাবুরহাটস্থ কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে উক্ত দম্পতির হত্যারহস্য তুলে ধরেন।
গত ২৯ জুন ২০২১ দিবাগত রাতে সংঘটিত ঘটনার পর নূরুল আমিন-কামরুন নাহার দম্পতির একমাত্র পুত্র মোঃ জাকারিয়া বাবু বাদী হয়ে শাহরাস্তি থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামী করে মামলা দায়ের করেন। প্রায় এক মাসেও শাহরাস্তি থানার পুলিশ এ মামলার তদন্তে অগ্রগতি করতে না পারায় বাদীর আবেদনে তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই, চাঁদপুর। তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পান ইন্সপেক্টর কবির আহমেদ। তিনি চুরি যাওয়া মুঠোফোনকে অবলম্বন করে প্রায় তিন মাসের তদন্তে খুনি হিসেবে আঃ মালেককে চিহ্নিত ও গ্রেফতার করতে সক্ষম হন। এতে সন্তুষ্ট হয়ে বাদী জাকারিয়া বাবু বলেন, আমরা পিবিআইয়ের তদন্ত কার্যক্রমে অত্যন্ত খুশি। পুলিশ এভাবে মানুষের জন্যে কাজ করলে তাদের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ও ভালোবাসা আরো বৃদ্ধি পাবে। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। একই সাথে আমার বাবা-মায়ের হত্যাকারীর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাই।
শাহরাস্তির পৌর এলাকার নাওড়া গ্রামের নিজ বাড়িতে নিরিবিলিভাবে বসবাসকারী ছিলেন নূরুল আমিন (৬৫) ও কামরুন নাহার (৬০)। তারা স্বামী-স্ত্রী দুজনেই ছিলেন সরকারের সমাজসেবা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তারা পাশর্^বর্তী ঘুঘুশাল গ্রামের রিকশাচালকরূপী চোর আঃ মালেকের রিকশায় চড়ে ঘন ঘন ব্যাংকে যাতায়াত করতেন। এতে অনেক টাকা প্রাপ্তির লোভে আঃ মালেক তাদের ঘরে চুরির ফন্দি আঁটেন। সেমতে চুরি করতে গিয়ে তাদেরকে খুন করেন। দীর্ঘদিনের পরিচিত ও প্রতিবেশী রিকশাচালক যে একটি নিরীহ দম্পতির খুনি হতে পারে-সেটি পিবিআইয়ের তদন্ত বেরিয়ে এসেছে। আমরা মনে করি, এমন তদন্তে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং তার তদারককারী কর্মকর্তার মেধা ও শ্রমব্যয় ছিলো অসাধারণ। আমরা এমন তদন্ত-সাফল্যের জন্যে পিবিআইয়ের সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাই।