শুক্রবার, ০৩ অক্টোবর, ২০২৫  |   ২৮ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ০৩ অক্টোবর ২০২৫, ১৪:২১

জেন্ডার বিভ্রান্তি (LGBTQ বিষয়)

অনলাইন ডেস্ক
জেন্ডার বিভ্রান্তি (LGBTQ বিষয়)

বর্তমান যুগের অন্যতম আলোচিত ও বিতর্কিত বিষয় হলো জেন্ডার বিভ্রান্তি এবং খএইঞছ আন্দোলন। একদিকে আধুনিক সভ্যতা মানুষকে স্বাধীনতা ও ব্যক্তিগত অধিকার নামে সবকিছু বৈধ করার চেষ্টা করছে, অন্যদিকে এটি মানবপ্রকৃতি ও আল্লাহপ্রদত্ত স্বাভাবিক ফিতরার বিরুদ্ধে এক বড় ধরনের বিদ্রোহে পরিণত হচ্ছে। বিশ্বজুড়ে খএইঞছ আন্দোলন শুধু সমাজের যৌন নীতি ও পারিবারিক কাঠামোকে ধ্বংস করছে না, বরং মানুষের মানসিক ও আধ্যাত্মিক স্থিতিশীলতাকেও ভেঙে দিচ্ছে। মুসলিম সমাজের জন্য এই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি ইসলামের স্পষ্ট শিক্ষা ও প্রাকৃতিক নিয়মের পরিপন্থী। তাই বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে আলোচনা করা প্রয়োজন এর শেকড় কোথায়, আধুনিক সমস্যাগুলো কীভাবে সমাজে প্রভাব ফেলছে, এবং ইসলামের সমাধান কী।

আল্লাহ তায়ালা কুরআনে মানবসৃষ্টির মূলনীতি সম্পর্কে বলেছেন: ‘হে মানবজাতি! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় করো, যিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন এক প্রাণ থেকে, আর সেখান থেকে সৃষ্টি করেছেন তার জোড়া এবং উভয়ের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু নারী ও পুরুষ।’ (সূরা আন-নিসা, ১)। এই আয়াত স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, আল্লাহ মানুষকে পুরুষ ও নারী দুটি লিঙ্গে সৃষ্টি করেছেন। এর বাইরে আর কোনো লিঙ্গ নেই। আবার অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন: ‘তিনি পুরুষ ও নারী সৃষ্টি করেছেন এটি তাঁর নিদর্শন।’ (সূরা আয-যুমার,৬)। সুতরাং পুরুষ ও নারীর মধ্যে প্রাকৃতিক আকর্ষণ ও বৈধ বিবাহের মাধ্যমেই মানবজাতির বংশবিস্তার ও সামাজিক স্থিতি নির্ধারিত।

কিন্তু আজকের পৃথিবীতে খএইঞছ আন্দোলনের মাধ্যমে মানুষ প্রাকৃতিক এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। সমকামিতা, লেসবিয়ান সম্পর্ক, উভকামী প্রবণতা, লিঙ্গ পরিবর্তনের প্রচেষ্টা সবই প্রকৃতির সাথে বিরোধ। কুরআনে লুত (আ.) এর জাতির ঘটনায় স্পষ্টভাবে এই বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছে। আল্লাহ বলেন: ‘আর লুতকে পাঠালাম, যখন সে তার সম্প্রদায়কে বলল : তোমরা এমন অশ্লীল কাজ করছো যা তোমাদের আগে বিশ্ববাসীর কেউই করেনি। তোমরা তো পুরুষদের কাছে গমন করো নারীদের বাদ দিয়ে। বরং তোমরা সীমালঙ্ঘনকারী এক সম্প্রদায়।’ (সূরা আল-আরাফ, ৮০-৮১)। আবার আল্লাহ বলেন: ‘তোমরা কি নারী ছেড়ে পুরুষের কাছে কামনা চরিতার্থ করতে চাও? বরং তোমরা অজ্ঞ এক সম্প্রদায়।’ (সূরা আন-নামল, ৫৫)।

রাসূলুল্লাহ ﷺ স্পষ্টভাবে বলেছেন: ‘তোমরা সেই কাজ থেকে সাবধান থাকো, যা লুতের কওম করেছে। কারণ তোমাদের আগে কোনো জাতি এই কাজ করেনি।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস ২৫৬১)। আরেকটি হাদিসে তিনি বলেছেন: “যে ব্যক্তি লুতের কওমের কাজ করবে, তাকে হত্যা করো কর্মকারী হোক বা তার সাথে যার কাজ হয়েছে।” (তিরমিজি, হাদিস ১৪৫৬)। এই হাদিস প্রমাণ করে, ইসলাম সমকামিতাকে শুধু নৈতিক অপরাধ নয়, বরং সামাজিক অপরাধ হিসেবে গণ্য করেছে।

আধুনিক কালে খএইঞছ আন্দোলনের বিস্তার কয়েকটি কারণে ঘটছে। প্রথমত, পশ্চিমা সভ্যতা ব্যক্তিস্বাধীনতাকে এমনভাবে ব্যাখ্যা করেছে, যেখানে মানুষ নিজের ইচ্ছাকেই চূড়ান্ত বলে মনে করছে। তারা মনে করে, আমি পুরুষ না নারী? আমি কোন যৌন প্রবণতায় যাব এটি আমার ব্যক্তিগত অধিকার। অথচ আল্লাহর দাসত্ব ও তাঁর বিধান মানা ছাড়া মানুষের স্বাধীনতা কোনো অর্থ বহন করে না।

দ্বিতীয়ত, গণমাধ্যম ও বিনোদন শিল্প এ আন্দোলনের বড় পৃষ্ঠপোষক। চলচ্চিত্র, টেলিভিশন, সংগীত, ফ্যাশন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়মিতভাবে সমকামিতা ও লিঙ্গ বিভ্রান্তিকে স্বাভাবিক ও গ্রহণযোগ্য হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। শিশু-কিশোররা এই প্রচারণায় বিভ্রান্ত হচ্ছে এবং মনে করছে এটি আধুনিকতার প্রতীক।

তৃতীয়ত, বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের অপব্যবহারও এর একটি কারণ। কিছু মনোবিজ্ঞানী ও সমাজতত্ত্ববিদ বলেন, যৌন প্রবণতা জন্মগত। কিন্তু বাস্তব গবেষণা প্রমাণ করে যে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটি সামাজিক পরিবেশ, লালন-পালন ও মানসিক প্রভাবের কারণে তৈরি হয়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়