মঙ্গলবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫  |   ২৯ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:৪৪

মরা খাল পুনরুদ্ধারের সুফল টেকসই হোক

অনলাইন ডেস্ক
মরা খাল পুনরুদ্ধারের সুফল টেকসই হোক

চাঁদপুর কণ্ঠের সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার মো. আবদুর রহমান গাজী গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে একটি সংবাদ পরিবেশন করেছেন। তাতে তিনি একটি মরা খালকে উদ্ধার করার পর তার সুফলের দৃশ্যপট সচিত্রভাবে তুলে ধরেছেন। সংবাদটিতে তিনি লিখেছেন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকে দেশের বহু নদী-নালা, খাল-বিল এক শ্রেণির প্রভাবশালীর জবরদখলের কারণে মরে যেতে থাকে। প্রকৃতির সেই জলাশয়গুলো বিলীন হয়ে যাওয়ায় হারিয়ে যায় নৌ চলাচল ও পানির স্বাভাবিক প্রবাহ। এমন বাস্তবতায় চাঁদপুর শহরের পুরাণবাজার লোহারপুল হয়ে জাফরাবাদ পর্যন্ত ডাকাতিয়া নদীর সংযোগ খালটিও দীর্ঘদিন নাব্যতা সংকট ও দখলদারিত্বের শিকার হয়ে কার্যত মরে গিয়েছিলো। তবে ২০২৫ সালের নতুন বাংলাদেশে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে চাঁদপুর সদর উপজেলা প্রকৌশলীর তত্ত্বাবধানে খালের আংশিক পুনরুদ্ধার কাজ সম্পন্ন হওয়ায় এলাকাবাসী এখন ধীরে ধীরে এর সুফল পেতে শুরু করেছে। রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫) দুপুরে দেখা যায়, কিশোর আহমেদ ভেলা নিয়ে খালে ভেসে বেড়াচ্ছে। এলাকাবাসীর চোখে এ দৃশ্য যেনো এক টুকরো স্বপ্ন, যা তাদের মনে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। স্থানীয়রা জানান, বহু বছর ধরে খালটি দখল ও অব্যবস্থাপনার কারণে নৌ চলাচল তো দূরের কথা, পানি প্রবাহই বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। দখলদাররা খালের বিভিন্ন অংশ বাঁশের খুঁটি পুঁতে ঘের তৈরি করে রেখেছিলো। সম্প্রতি প্রশাসনিক উদ্যোগে যে অংশ উদ্ধার করা হয়েছে, তা সাময়িক হলেও খালকে আবারও প্রাণবন্ত করে তুলেছে। তবে এলাকাবাসীর শঙ্কা, এতো কষ্ট করে উদ্ধার হওয়া এই খাল কতোদিন টিকে থাকবে? তাদের আশঙ্কা, পুনরায় দখলদাররা সক্রিয় হলে খাল আবারও মরে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে। সচেতন মহল মনে করছেন, খালের স্বাভাবিক প্রবাহ ও নৌ চলাচল বজায় রাখতে হলে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ, নাব্যতা বৃদ্ধির জন্যে খনন কাজ এবং দখলদারদের স্থায়ী উচ্ছেদ নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় দীর্ঘদিনের আন্দোলন ও প্রশাসনিক উদ্যোগ ব্যর্থ হয়ে যাবে। একটি মরা খাল পুনরুদ্ধারের পর এর সুফল নিয়ে স্থানীয়দের এমন আশঙ্কা থাকা স্বাভাবিক। কারণ, অতীতে শুধু চাঁদপুর নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে দখলকৃত খাল পুনরুদ্ধারের পর অনেক খালই পুনর্দখল হয়েছে। যেভাবে সড়কের দুপাশে উচ্ছেদ অভিযান চালানোর পর পুনর্দখল হয়ে যায়। এটা সচরাচর দেখা যায়, সড়কের দুপাশ উচ্ছেদের পর পুনর্দখল হলেও কয়েক বছর পর আবার পুনরুদ্ধার তথা উচ্ছেদ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। আর খাল উদ্ধারের পর পুনর্দখল হলে সেটিতে পুনরায় উদ্ধার অভিযান কয়েক বছরে নয়, কয়েক যুগেও হয় না। আর হলেও পুনর্খনন ও পুনরুদ্ধার কাজে সংশ্লিষ্টরা কেমন পুকুর চুরি করে তার নমুনা রয়েছে অনেক। চাঁদপুর সেচ প্রকল্প (সিআইপি)-এর অভ্যন্তরে খাল খনন ও পুনরুদ্ধার কাজে সাম্প্রতিক সময়ে যে চুরি হয়েছে, তাকে প্রতিবাদকারীরা পুকুর চুরি নয়, সাগর চুরি নামে আখ্যায়িত করেছে। অতএব, খাল খনন ও পুনরুদ্ধার এবং পরবর্তীতে সে খালটিকে পুনর্দখল ও পানি প্রবাহে স্বাভাবিক রাখার মধ্যেই সুফল হতে পারে টেকসই--এটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে মনে রাখতে হবে। অন্যথায় লোহারপুল-জাফরাবাদ খালের আংশিক পুনরুদ্ধার হওয়া নিয়ে স্থানীয়দের আশঙ্কা যেমন কাটবে না, আরো অনেক স্থানেও কাটবে না।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়