সোমবার, ০৪ আগস্ট, ২০২৫  |   ৩১ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ০৪ আগস্ট ২০২৫, ০৮:৩৩

এমন হাসপাতাল চলে কীভাবে?

কাজী শাহাদাত
এমন হাসপাতাল চলে কীভাবে?

শাহরাস্তিতে একটি হাসপাতালে বারবার ভুল চিকিৎসার কারণে রোগীর মৃত্যু হচ্ছে কিংবা জটিল অবস্থায় নিপতিত হচ্ছে। তারপরও জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কোন্ অনুগ্রহে এ হাসপাতালটি দিব্যি চলছে, সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

গতকাল চঁাদপুর কণ্ঠে এ হাসপাতালটি নিয়ে চঁাদপুর কণ্ঠের শাহরাস্তি ব্যুরো ইনচার্জ মো. মঈনুল ইসলাম কাজল ‘শাহরাস্তিতে ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতালে ভাংচুর ও তালা’ শিরোনামে বিস্তারিত সংবাদ পরিবেশন করেছেন। তিনি লিখেছেন, সিজারিয়ান অপারেশনের ত্রুটিজনিত ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগে শাহরাস্তির ঠাকুর বাজারে অবস্থিত শাহরাস্তি জেনারেল হাসপাতালে শনিবার (২ আগস্ট ২০২৫) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে হামলার ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, পূর্ব নিজমেহার গ্রামের কবিরাজ বাড়ির প্রবাসী দিদার হোসেনের স্ত্রী উম্মে হাসনা রিপা (২৯) গত ২৬ জুন শাহরাস্তি জেনারেল হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে একটি কন্যা সন্তান প্রসব করেন। অপারেশনটি করেন শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অবসরপ্রাপ্ত জুনিয়র কনসালটেন্ট ও শাহরাস্তি জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. তানজিনা সুলতানা। অপারেশন শেষে অন্যান্য রোগীর মতো তাকেও কেবিনে রাখা হয় এবং চার দিন পর ৩০ জুন ছাড়পত্র দিয়ে বাড়ি পাঠানো হয়। তবে বাড়ি যাওয়ার পর রিপার ব্যথা কমার পরিবর্তে আরও তীব্র হয়। অবস্থার অবনতি ঘটলে ১৫ জুলাই দুপুরে তাকে ফের একই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাত পৌনে ৯টার দিকে তাকে কুমিল্লা টাওয়ার হাসপাতালে রেফার করা হলে সেখানেই স্বজনরা জানতে পারেন, সিজারিয়ান অপারেশনের সময় চিকিৎসক ভুলবশত রিপার মূত্রথলি কেটে ফেলেছেন এবং পরে কোনো সঠিক চিকিৎসা ছাড়াই তাকে রিলিজ দেওয়া হয়েছিলো। এরপর রোগীকে বঁাচাতে শুরু হয় পরিবারের দৌড়ঝঁাপ। ২৬ জুলাই ঢাকার পদ্মা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। পরদিন রিলিজ পেয়ে ২৮ জুলাই স্থানীয় একটি হাসপাতালে তাকে রক্ত দেওয়া হয়। ২৯ জুলাই ভর্তি করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানেই শুক্রবার দিবাগত রাত আড়াইটায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। শনিবার সকালে মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্স শাহরাস্তি পেঁৗছালে উত্তেজিত স্বজনরা শাহরাস্তি জেনারেল হাসপাতালে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও তালা লাগিয়ে দেন।

রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, “হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভুল চিকিৎসার বিষয়টি গোপন করেছে। এ কারণে রোগীর রক্তক্ষরণ বেড়ে যাওয়ায় বারবার রক্ত দিতে হয়েছে। চিকিৎসকদের চরম অবহেলার কারণেই আমাদের রোগী মারা গেছেন।”একই হাসপাতালের বিরুদ্ধে আগেও অভিযোগ রয়েছে বলে জানান উপজেলার হঁাড়িয়া গ্রামের আরেক রোগীর স্বজন। তিনি বলেন, “দুই মাস আগে আমার ভাবী নাসরিন আক্তার (২৮) এখানে সিজারিয়ান করান। চারদিন পর রিলিজ নেওয়ার পর হঠাৎ ব্লিডিং শুরু হয়। আবার হাসপাতালে আনা হলে তাকে ব্যথানাশক দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সমস্যার বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি। পরে কুমিল্লা ও ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে এখনো তাকে আইসিইউতে রাখতে হচ্ছে।” ভুক্তভোগী মো. রফিকুল ইসলাম, যিনি কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার পয়ালগাছা থেকে এসেছেন, জানান-“ডা. তানজিনা সুলতানা একজন অহংকারী ও রূঢ় মেজাজের চিকিৎসক। তার আচরণ অত্যন্ত খারাপ। রোগীদের প্রশ্ন করলে তিনি দুবর্যবহার করেন। তার বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।”

কোনো হাসপাতালের চিকিৎসকের রোগীর সাথে ভালো ও খারাপ আচরণের বিষয়টি রোগী ও তার সাথে থাকা এটেনডেন্টের ওপর নির্ভর করে। আর চিকিৎসক যদি নিজেই স্বভাবগতভাবে রাগী হন, অধৈর্য হন এবং সে কারণে রোগীর সাথে দুবর্যবহারে অভ্যস্ত হন, সেটা ভিন্ন কথা। এমন চিকিৎসকের অবশ্যই সমালোচিত ও অভিযোগের শিকার হওয়া নিশ্চয়ই স্বাভাবিক। কিন্তু এমন চিকিৎসক যদি ভালো রোগ নির্ণয় করতে পারেন এবং সে অনুযায়ী রোগীকে দ্রুত আরোগ্য হওয়ার মতো যথার্থ চিকিৎসা দিতে পারেন, তাহলে রোগী ও তার স্বজন চিকিৎসকের খারাপ ব্যবহার জেনেও তার কাছে বারবার যান। শাহরাস্তি জেনারেল হাসপাতালে কর্মরত গাইনি চিকিৎসক যদি রোগীর সাথে খারাপ ব্যবহারও করেন এবং ভুল চিকিৎসায় রোগী মেরে ফেলেন, অপারেশনে নিজের ভুল স্বীকার না করে রোগীকে মৃত্যু কিংবা জটিল শারীরিক পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেন, তাহলে তার কর্মস্থল হাসপাতালে হামলা ও ভাংচুর তো হবেই। এটা বেআইনি, যেটা মব-সন্ত্রাসের দিকেও ধাবিত হয়। এমনটি বন্ধ করতে হলে সরকারের জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগকে করিৎকর্মা হয়ে দায়ী চিকিৎসক ও হাসপাতালের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থাগ্রহণের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, এমন দৃষ্টান্ত স্থাপনের ঘটনা চঁাদপুর জেলায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নেই বললেই চলে। সেজন্যে ভুল চিকিৎসা এবং রোগীর মৃত্যু ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা চঁাদপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ঘটেই চলছে। চঁাদপুর জেলা সদরের চঁাদপুর জেনারেল হাসপাতাল (প্রা.)-এ যেমন ঘটেছে, তেমনি শাহরাস্তি জেনারেল হাসপাতাল (প্রা.)-এও ঘটলো। এমতাবস্থায় জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে কারো অভিযোগের অপেক্ষা না করে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ব্যবস্থাগ্রহণ বাঞ্ছনীয়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়