বুধবার, ২১ মে, ২০২৫  |  
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   ঢাকা থেকে উড্ডয়নের পরপরই তার্কিশ এয়ারলাইন্সের ইঞ্জিনে আগুন

প্রকাশ : ২১ মে ২০২৫, ০৯:৩৪

ভাংচুর ও লুটপাটে ভবন ছাড়া নেই কোনো সরঞ্জাম, ৯ মাস ধরে বন্ধ

সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি প্রাণ ফিরে পাক--প্রত্যাশা সংস্কৃতি কর্মীদের

কবির হোসেন মিজি
ভাংচুর ও লুটপাটে ভবন ছাড়া নেই কোনো সরঞ্জাম, ৯ মাস ধরে বন্ধ

সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি প্রাণ ফিরে পাক--এমন প্রত্যাশাই কেবল সংস্কৃতি কর্মীদের। বিগত ৯ মাস শিল্পকলা একাডেমির কোনো ধরনের সরঞ্জাম না থাকায় বন্ধ রয়েছে বিভিন্ন সংগঠনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড। একসময় প্রতিদিনই চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মুখরিত ছিলো বিভিন্ন সংগঠনের সংস্কৃতিকর্মীদের পদচারণায়। প্রায় সময় মঞ্চস্থ হতো কোনো না কোনো সংগঠনের নাটক। পরিবেশিত হতো বিভিন্ন সংগঠনের নৃত্য এবং গান। আজ চাঁদপুরের এই প্রধান বিনোদন কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় সেখানে চলছে সুনসান নীরবতা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বিজয়ের পর থেকেই শিল্পকলা একাডেমির মূল গেটে ঝুলছে তালা। তাই নিয়মিত সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড না করতে পেরে হতাশ হয়ে পড়ছেন বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মী ও শিল্পীরা। যদিও প্রথম কয়েক মাস শিল্পকলার প্রবেশের গেটটি ভেঙ্গে ফেলায় নিরাপত্তাহীনতায় ছিলো ভবনটি। পরে অবশ্য চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে গেটের আনুষঙ্গিক কাজ করে সেটিকে মেরামত করা হয়।

জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট তৎকালীন সরকার পতনের মধ্য দিয়ে বিজয় লাভ করার পর সারা বাংলাদেশের সাথে চাঁদপুরেও ভাংচুর এবং ধ্বংসযজ্ঞের প্রভাব পড়ে। চাঁদপুরের বিভিন্ন সংগঠন ও ক’জন সাংস্কৃতিক ব্যক্তি সরকারের পক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেয়াকে কেন্দ্র করে গত ৫ আগস্টের পর চাঁদপুর শিল্পকলা একাডেমিতে ভাংচুর ও লুটপাট চালায় দুষ্কৃতকারীরা। লুটপাট করার কারণে শুধুমাত্র শিল্পকলার ভবনটি ছাড়া সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার মতো তেমন কোনো সরঞ্জাম নেই। তাই অচল হয়ে পড়েছে চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি।

সংস্কার কাজ না করায় একাডেমি বন্ধ থাকলেও, সংস্কৃতি চর্চা ও নাট্যকর্মীদের কোনো বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে না তোলায় চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জেলার সংস্কৃতি অঙ্গন। থেমে গেছে নাটক মঞ্চায়ন, আবৃত্তি চর্চা, নৃত্য, সংগীতসহ নিয়মিত কর্মশালা ও অন্যান্য অনুষ্ঠান আয়োজন।

নাট্য সংগঠন, আবৃত্তি প্রতিষ্ঠান, শিশু-কিশোর সাংস্কৃতিক দল এবং স্বাধীন সংস্কৃতি কর্মীরা এই স্থবিরতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

চাঁদপুরের প্রসিদ্ধ সংগঠন বর্ণচোরা নাট্যগোষ্ঠী’র সাধারণ সম্পাদক নাট্যাভিনেতা শরীফ চৌধুরী বলেন, এক সময় চাঁদপুরের নাটক ছিলো দেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সরব অংশ। আজ আমরা মঞ্চহীন, চর্চাহীন। শিল্পকলা ভবন বন্ধ থাকলেও কোনো অস্থায়ী মঞ্চ বা বিকল্প স্থান তৈরি হয়নি। এতে নতুন প্রজন্ম সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডবিমুখ হয়ে পড়ছে।

শিল্পকলা একাডেমির নিয়মিত আবৃত্তি প্রশিক্ষক ও স্বরলিপি নাট্য গোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক এম আর ইসলাম বাবু বলেন, আমরা নিয়মিত চর্চা করতে পারি না। বিভিন্ন জাতীয় দিবসেও শিল্পকলা ভবন বন্ধ থাকায় অনুষ্ঠান আয়োজন করা যাচ্ছে না। সংস্কৃতির গলা চেপে ধরলে সমাজে মূল্যবোধ নষ্ট হয়।

সংস্কৃতিকর্মী ও চাঁদপুর ড্রামার সদস্য মানিক পোদ্দার বলেন, শিল্পকলার সংস্কার অবশ্যই দরকার, কিন্তু পরিকল্পনা অনুযায়ী বিকল্প ব্যবস্থা না রাখায় নাটক মঞ্চস্থ করতে পারছি না। আমরা চাই দ্রুত সংস্কার শেষ হোক এবং ভবনটি সংস্কৃতি চর্চার জন্যে চালু করা হোক।

এছাড়া চাঁদপুরের বিভিন্ন নৃত্য সংগঠন ও নাট্য সংগঠন, শিশু সংগঠনের একাধিক সদস্য ও সংস্কৃতি কর্মীরা বলেন, আমাদের শিশু শিল্পীরা মঞ্চের স্বপ্ন দেখে বড়ো হয়। কিন্তু গত ৯ মাস ধরে তারা কোনো মঞ্চে উঠতে পারেনি। এতে তারা মানসিকভাবেও পিছিয়ে পড়ছে।

সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো দাবি করছে, একটি অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করে হলেও সাংস্কৃতিক চর্চা চালু রাখা হোক, নয়তো চাঁদপুরের সাংস্কৃতিক কাঠামো আরও হুমকিতে পড়বে।

সাংবাদিক মহলের পক্ষ থেকেও বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার আহ্বান জানানো হয়েছে। দীর্ঘ সময় শিল্পকলা বন্ধ থাকার ফলে চাঁদপুরের সংস্কৃতি জগৎ কার্যত থমকে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে ভাংচুর ও লুটপাটের পরের দিনই জেলা প্রশাসনের লোকজন সরজমিনে জেলা শিল্পকলা একাডেমি পরিদর্শন করেন। পরে একাডেমিতে কর্মরত কালচারাল অফিসার গেটে তালা লাগিয়ে দেন।

জানা গেছে, চাঁদপুর জেলা শহরে নৃত্য ও নাট্য সংগঠনসহ প্রায় অর্ধ শতাধিক সাংস্কৃতিক সংগঠন রয়েছে। শিল্পকলার এতো বড়ো ক্ষতির কারণে মঞ্চে ফিরতে পারছেন না এই সংগঠনগুলোর শিল্পীরা।

চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমির এমন করুণ পরিস্থিতির মধ্যেই গত ৮ মে ২০২৫ সাউন্ড ও লাইটিং সহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি ভাড়া করে চাঁদপুর জেলা প্রশাশনের আয়োজনে রবীন্দ্র জয়ন্তী উদযাপন করা হয়।

এ বিষয়ে কালচারাল অফিসার দিতি সাহার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা অনুষঙ্গিক কিছু কাজ করেছি। যেমন প্রবেশ পথের গেটটি মেরামত করা হয়েছে। শিল্পকলার ভেতরে ঢোকার মতো উপযোগী পরিবেশ এবং নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড চালানোর মতো ভেতরে তেমন কিছুই নেই। আমরা আমাদের কেন্দ্র থেকে সমস্ত তথ্য দিয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি। এখন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় যতো দ্রুত সম্ভব বরাদ্দ দিলে এবং আমরা সবকিছুর কাজ পরিপূর্ণ করতে পারলেই আবার নতুন করে পূর্ণাঙ্গভাবে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড চালানো যাবে।

ভাংচুর করার এক মাসের মাথায় চাঁদপুরের তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বশির আহমেদের সাথে কথা হলে তখন তিনি জানিয়েছিলেন, দুষ্কৃতকারীরা শিল্পকলায় ব্যাপক লুটপাট করেছে। এতে অবকাঠামো ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। শিল্পকলার বিভিন্ন সম্পদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্যে শিল্পকলার অনেক উপকরণ এখন নেই। সরকার থেকে প্রয়োজনীয় বাজেট পেলে সংস্কার করে শিল্পকলা একাডেমি পুনরায় চালু করা হবে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির তালিকা পাঠিয়েছি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়