শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৫  |   ৩৩ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:৫৬

সন্তানের প্রতি মা-বাবার দায়িত্ব

বিনতে সফীউল্লাহ
সন্তানের প্রতি মা-বাবার দায়িত্ব

প্রতিটি দম্পতির জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হলো তাদের সন্তানসন্ততি। সন্তান হলো সংসারের সৌন্দর্য। যে সংসার কাননে ফোটেনি সন্তান নামক পুষ্প, সে সংসার যেন অথই সাগরের বুকে জেগে ওঠা একখণ্ড মরুদ্বীপ। যাদের কানে পেঁৗছেনি ‘আব্বু-আম্মু’ ডাকের সুমধুর ধ্বনি, তাদের অন্তর যেন শুকনো মরুভূমি। সন্তান-অপত্য হলো আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে নেয়ামত স্বরূপ ও পার্থিব জীবনের শোভা। আল্লাহ পাক কুরআনে কারিমে এ বিষয়ে ইরশাদ ফরমান, ‘ধনৈশ্বর্য ও সন্তানসন্ততি পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য, ওটা তোমার পালনকর্তার পুরস্কারপ্রাপ্তির জন্য শ্রেষ্ঠ এবং আশাপ্রাপ্তির জন্য উৎকৃষ্ট।’ (সূরা কাহাফ-৫৬)। সন্তান প্রসবের পর পিতা-মাতার ওপর কয়েকটি বিষয় আবশ্যক-

 

আজান দেওয়া : ইবলিস মানব জাতির চিরন্তন শত্রু। যখন কোনো মানব সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়, তাকে প্রকৃতি স্বাগত জানায়। ঠিক এ সময় আক্রমণ করে বসে তার চিরশত্রু হাদিসে বর্ণিত হয়েছে : ইবলিস। হাদিস শরিফে আছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘ভূমিষ্ঠ হওয়ার চিৎকার করে তা মূলত শয়তানের খেঁাচার কারণেই করে থাকে। (সহিহ মুসলিম-৪৪৯৯)। এজন্য রাসূল (সা.) জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই শিশুর কানে আজান ও ইকামত দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন হাদিসে এসেছে, হজরত আর রাফে (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘আমি রাসূল (সা.)কে দেখেছি, তিনি হাসান ইবনে আলী (রা.)-এর কানে আজান দিয়েছেন, যখন হজরত ফাতেমা (রা.) তাকে প্রসব করেছিলেন।’

তাহনিক করানো : তাহনিক বলা হয় কোনো আল্লাহওয়ালা ব্যক্তির মুখে খেজুর চিবিয়ে নরম করে তা এমনভাবে শিশুর মুখে রাখা যাতে সে রস শুষে নিতে পারে। তাহনিক একটি সুন্নাত আমল। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসূল (সা.)-এর কাছে নবজাতক শিশুকে আনা হতো, তিনি তাদের কল্যাণের জন্য দোয়া করতেন এবং তাদের তাহনিক করতেন। (সহিহ মুসলিম ২৮৬, আবু দাউদ ৫১০৬)।

উত্তম নাম রাখা : নাম হলো প্রতিটি মানবসত্ত্বার পরিচায়ক। ইসলাম ধর্মে সুন্দর নাম রাখার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয় কেয়ামতের দিন তোমাদেরকে তোমাদের এবং তোমাদের পিতাদের নাম ধরে ডাকা হবে। তাই তোমরা নিজেদের নাম সুন্দর কর। (আবু দাউদ ৪৯৪৮)।

আকিকা করা : শিশু জন্মের পর বিভিন্ন আপদ-মুসিবত থেকে সুরক্ষিত থাকার নিমিত্তে পশু জবাই করাকে আকিকা বলা হয়। আকিকা একটি সুন্নত আমল। রাসূল (সা.) ইরশাদ ফরমান, ‘সন্তানের আকিকা সম্পৃক্ত। তাই তার পক্ষ থেকে (পশু জবাই করে) রক্ত প্রবাহিত কর। এবং তার অশুচি দূর করে দাও। (সহিহ বুখারি ৫০৭৬)।

শিক্ষা প্রদান : পিতা-মাতার ওপর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হচ্ছে সন্তানকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা। এ ব্যাপারে হাদিসে এসেছে, পিতার ওপর সন্তানের অধিকার হলো তার সুন্দর নাম রাখা এবং তাকে সুন্দরভাবে আদব শিক্ষা দেওয়া (আল-বাহরুজজাখখার ৮৫৪০)।

নেককার সন্তানের উপকারিতা : সন্তানরা পিতা-মাতার মুহাফিজ। আল্লাহ সন্তানাদির দ্বারা পিতা-মাতাকে সাহায্য করে থাকেন। এ ব্যাপারে আল্লাহ পাক কুরআনে কারিমে ইরশাদ করেন, ‘অতঃপর আমি তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের জন্য যুদ্ধের পাল্লা ঘুরিয়ে দিলাম। তোমাদেরকে ধনসম্পদ ও সন্তানসন্ততি দ্বারা সাহায্য করলাম এবং তোমাদের করলাম সংখ্যাগরিষ্ঠ। (সূরা বনি ইসরায়েল, আয়াত : ৬)। নেককার সন্তান শুধু ইহকালীন সম্পদই নয় বরং পরকালের মহাসম্পদ, পিতা-মাতার নাজাতের ওসিলা, মর্তবা বুলন্দির সোপান। এ ব্যাপারে রাসূল (সা.) ইরশাদ ফরমান, ‘যখন কোনো মানুষ মারা যায় তখন তার আমল বন্ধ হয়ে যায়, তবে তিনটি বিষয় চালু থাকে আর তা হলো- ১. সদকায়ে জারিয়া ২. উপকারী ইলম ৩. নেককার সন্তান যে তার বাবা-মায়ের জন্য দোয়া করে। (মুসলিম : ১৬৬১, তিরমিজি-১৩৭৫, আবু দাউদ : ২৮৮০, নাসায়ী ৩৬৫১,)।

কেয়ামতের দিন সম্মানের অধিকারী হবেন : এছাড়া সন্তানাদিকে কুরআনের শিক্ষায় শিক্ষিত করলে তারা বাবা-মা কেয়ামতের ময়দানে অধিক সম্মানের অধিকারী হবেন। হাদিস শরিফে এসেছে, হজরত মুয়ায বিন আনাস জুহানি থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কুরআন পড়ে তদনুযায়ী আমল করে তার পিতা-মাতাকে কিয়ামতের দিন এমন তাজ পরানো হবে যার আলো সূর্যের অপেক্ষা উজ্জ্বল হবে। তা যদি দুনিয়াতে তোমাদের মাঝে হতো তাহলে কেমন হতো! যে নিজে আমল করেছে তার সম্পর্কে তোমাদের কী ধারণা। (আবু দাউদ : ১২৪১)। তাই প্রতিটি মুমিনের দায়িত্ব হলো, নিজের সন্তানকে উত্তম শিক্ষা ও শিষ্টাচার শিখিয়ে নেক সন্তান হিসাবে গড়ে তোলা। তাহলে ইহকাল ও পরকালে সুখময় জীবন ভাগ্যে জুটবে। আল্লাহতায়ালা আমাদের আমলের তৌফিক দান করুন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়