শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৫  |   ৩৩ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:৩৩

মনুষ্যত্ব

বিমল কান্তি দাশ
মনুষ্যত্ব

সৃষ্টিতত্ত্বে আগুন আর পানির ভূমিকায় পানি এমন একটি যৌগ যা তৃষ্ণা নিবারণ এবং একটি উৎকৃষ্ট দ্রাবক। আর আগুন এমন একটি শক্তি যার ধর্ম শুধুই দহন করা। পক্ষান্তরে মানুষের ধর্ম ‘মানব ধর্ম।’ অর্থাৎ ভদ্র লোকের ধর্ম। যেখানে থাকবে না চৌর্যবৃত্তির আসক্তি, থাকবে মিথ্যাচার বিবর্জিত দর্শন, পরস্ব হরণে অনাগ্রহ, দেহে মনে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং জৈবিক অপবৃত্তি থেকে সংযত থাকা। এই সমস্ত গুণাবলি সম্পন্ন মানুষগুলোই ভদ্র লোক, যারা সৎ চিন্তায় আবিষ্ট হয়ে প্রকৃষ্ট মানবতায় দ্রবীভূত হয়ে যায়। তখনই প্রবর্তিত হয় কোনো দেশে সুশাসকের দ্বিচারিতামুক্ত সুশাসন।

এক সময়ের সুজলা-সুফলা চির সবুজ এই চরম অবস্থার বাংলাদেশ পাক স্বৈর সেনা শাসক এস্কান্দার মির্জা, আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খান প্রমুখের অপশাসনের কবল থেকে ১৯৭১ সালে এক ঘোরতর মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে মুক্তি লাভ করে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। এই বাংলা তথাকথিত গণতন্ত্রের তিক্ত অভিজ্ঞতায় আজ নির্বাক এবং কিংকর্তব্যবিমূঢ়। ষাটের দশকের আইয়ুব খানের মৌলিক গণতন্ত্র, বাংলাদেশ আমলে শেখ মুজিবুর রহমানের একদলীয় গণতন্ত্র ‘বাকশাল’, জিয়াউর রহমানের খাল কাটায় স্বনির্ভরতার গণতন্ত্র, শেখ হাসিনার দ্বি-চারিতার গণতন্ত্র। যার উদ্ভব হয়েছিল এরশাদ আমলের সামরিক গণতন্ত্র থেকে। এখানে প্রত্যেকের হাত থেকেই গণতন্ত্র ফসকে পড়ে গিয়ে আরব্য উপন্যাসের আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপে আঙ্গুলের ঘষায় স্বৈরাচার নামক এক দৈত্যের আবির্ভাব হয়েছিল। এর অনুসরণে এবং অনুকরণে শেখ হাসিনার আমলের ফ্যাসিবাদ শিকড়-বাকর মাটিতে কামড় খাওয়ার আগ মুহূর্তেই এর মূলোৎপাটন হয়েছিল। পক্ষান্তরে এই ধূসর বাংলা অন্য এক অচেনা-অজানা তন্ত্রের বঁাকে থমকে দঁাড়িয়ে আছে। এর পরম্পরা ভবিষ্যতের গর্ভে মুক্তির প্রহর গুণছে।

পৃথিবীর কোনো দেশে কোনো কালেই কোনো নীতি বা ইজম দীর্ঘস্থায়ী হয়নি বা প্রাকৃতিক নিয়মেই হতে পারে নি। চীনের মাওসেতুংবাদ, রাশিয়ার কার্লমার্কস ইজম এবং আব্রাহাম লিংকনের গণতন্ত্রের যথাযথ ইজম বিলুপ্ত অথবা বিকৃত হয়েছে। তাতেই স্বৈরতন্ত্রীরা স্বৈরাচারী হয়ে চরম হীনমন্যতায় আসক্ত হয়ে যায়। এতে অবয়াবিক মানুষ তার ভেতরের মনুষ্যত্বকে হারায়ে ফেলে। মনুষ্যত্বহীন মানুষ আর বন্য পশুতে কোনো পার্থক্য থাকে না। সৃষ্টিতত্ত্বে ব্যক্তি স্বাতন্ত্রে্যর পাশাপাশি মানুষের মনুষ্যত্ব একান্তই অপরিহার্য। কারণ আজ এই ডিজিটাল যুগে মানুষ আকাশে উড়ছে, চঁাদ এবং মঙ্গল গ্রহে যাচ্ছে, জলের তলায় মাছের রাজ্যে বিচরণ করছে। কিন্তু ডাঙ্গায় মানব সমাজে চলতে শিখেনি। পক্ষান্তরে মনুষ্যত্ব বিকিয়ে দিয়ে চলছে পাশব কামড়াকামড়ি রক্তারক্তি। একটা প্রাসঙ্গিক উক্তি হলো: (উড় ঁহঃড় ড়ঃযবৎং ধং ুড়ঁ রিংয ঃড় নব ফড়হব.) অথাৎ কাউকে কোনো কথা বলার আগে ভাবতে হবে কথাটা আমাকে বললে আমার কেমন বোধ হবে। যত গুণই মানুষের থাক না কেন একমাত্র সংযমের অভাবই তাকে মনুষ্যত্বহীন করে দিতে পারে। সুতরাং মানুষ হতেই হবে মানুষ যখন। অগ্রভাগে নিজকে নিজে জানার মধ্যেই সকল সমস্যার সমাধান নিহিত থাকে। এতে মানববিবেক আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে মনুষ্যত্বকে জাগরিত করে দেয়। মানবতার শীতল মলয় শান্ত করুক হিংসার উন্মাদনায় উন্মক্ত অবণীমণ্ডলকে।

লেখক : কবি ও প্রাবন্ধিক; অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষক, বলাখাল যোগেন্দ্র নারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয় ও কারিগরি কলেজ, হাজীগঞ্জ, চঁাদপুর।

 

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়