মঙ্গলবার, ০১ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ২৬ মার্চ ২০২৫, ১২:৩৯

লাইলাতুল ক্বদরের গুরুত্ব

মুফতি মুহা.আবু বকর বিন ফারুক
লাইলাতুল ক্বদরের গুরুত্ব

এক রাতে ইবাদত করলে যদি ৮৩ বছর ৪ মাস ইবাদত করার সমান সওয়াব পাওয়া যায়। তাহলে কে এই রাত্রের ইবাদতকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করবে বা অবহেলা করবে বরং সকলেই রাতের প্রতি গুরুত্ব প্রদান করবে। যে রাত্রিতে ইবাদত করলে হাজার মাসের চেয়েও বেশি নেকি পাওয়া যায়। হাজার মাসের চেয়েও কত বেশি নেকি পাওয়া যায়, এটা সুস্পষ্ট ভাবে না বলা গেলেও আল্লাহ সুবাহানাহু তা’আলা যে পরিমান দিতে ইচ্ছা করেন সে পরিমাণে বান্দাকে দিয়ে থাকেন।

একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পূর্ব যুগের একজন আবেদের কথা বর্ণনা করলেন। যিনি একাধারে ৫ শত বছর হায়াত পেয়ে ৫শত বছর আল্লাহ তায়ালার ইবাদতের মধ্যে কাটিয়ে দিয়েছেন। এ কথা শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ বললেন! ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহলে কাল হাশরের ময়দানে আপনার উম্মত অন্যান্য নবীদের উম্মতের তুলনায় কম নেকি নিয়ে কেয়ামতের ময়দানে উঠবে। কারণ! আপনার উম্মতের হায়াত কম, নেক আমল কম করার সুযোগ থাকে বরং পূর্ববর্তী জামানার মানুষের হায়াত বেশি এবং তারা অনেক বেশি নেক আমল করতে পারে। এ কথা শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চিন্তা মগ্ন হলেন আল্লাহ তাআলা তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর সূরা ক্বদর নাজিল করে জানিয়ে দিলেন। ক্বদরের রজনীতে আমি কোরআন নাজিল করেছি। আপনি জানেন কি! ক্বদরের রাত কি? কদরের রাত হল হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। এ রাত্রিতে রূহ ফেরেশতা নাযিল হয়। এ রজনীতে আল্লাহর সকল আদেশ নাযিল হয় এবং ফজর উদিত হওয়া পর্যন্ত এ রাত্রের সীমা থাকে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানে এ লাইলাতুল ক্বদর তালাশে রত ছিলেন। কারণ! এ রজনী অনেক বরকতময়। তাই এ রজনীর প্রতি গুরুপ্ত আরোপ করে এ রাত্রিতে ইবাদত বন্দেগীতে রাত্রি অতিবাহিত করে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লাইলাতুল ক্বদর তালাশের জন্য রমজানের প্রথম দশকে এতেকাফ করলেন। দ্বিতীয় দশকে এতেকাফ করলেন এবং শেষ দশকে এতেকাফ করলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানিয়ে দিলেন, আমি রমজানের প্রথম দশকে এতেকাফ করলাম, শবে ক্বদর পেলাম না, দ্বিতীয় দশকে এতেকাফ করলাম শবে ক্বদর পেলাম না। শেষ দশকে এতেকাফ করলাম শবে ক্বদর পেলাম। রমজানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের শেষ দশকের বি-জোড় রাত্রিতে শবে ক্বদর তালাশের জন্য বলেছেন। এজন্য শবে ক্বদর তালাশ করা প্রতিটি মুমিন মুসলমান নর-নারীর প্রতি আবশ্যক। সকলের পক্ষে এভাবে এতেকাফ করে শবে ক্বদর তালাশ করা সম্ভব নয়। এজন্য সমাজের কিছু মানুষ এতেকাফ করলে সকলের পক্ষ থেকে এতেকাফের হক আদায় হয়ে যায়। এ থেকেই বুঝা যায় লাইলাতুল ক্বদর কত গুরুত্বপূর্ণ একটি রাত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ রাতের গুরুত্বারোপ করেছেন। সাহাবায়ে কেরাম থেকে শুরু করে প্রতিটি মুমিন মুসলমানের জন্য এ রাত্রি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যাতে করে এক রাত্রিতে ইবাদত করলে ৮৩ বছর চার মাস থেকেও বেশি সওয়াব এর অধিকারী হওয়া যায়। কাল হাশরের ময়দানে প্রিয় নবী মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মতরা অনেক বেশি নেকি নিয়ে উঠতে পারে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল নবী এবং রাসূলদের সর্দার। এ নবীর উম্মতরাও শ্রেষ্ঠ উম্মত। শ্রেষ্ঠ উম্মতরা কাল হাশরের ময়দানে কম নেক নিয়ে উঠবেন এটা কিভাবে হয়। এজন্য লাইলাতুল ক্বদর আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া তা’আলা দিয়ে দিলেন যাতে করে এ নবীর উম্মতরা অনেক নেক নিয়ে কাল হাশরের ময়দানে উঠতে পারে।

লাইলাতুল ক্বদর রমজানের কবে:

লাইলাতুল ক্বদর মূলত রমজানের শেষ দশকের বি-জোড় রাত্রিতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তালাশ করতে বলেছেন। তবে অধিকাংশ ওলামায়ে কেরামের মতে ২৭ রমজান লাইলাতুল ক্বদর হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি, তাদের গবেষণার মাধ্যমে তারা এটাই অনুভব করতে পেরেছেন। এজন্য আমাদের দেশে ২৭ তারিখ লাইলাতুল ক্বদর হিসেবেই পরিচিত। তবে লাইলাতুল ক্বদর ২১-২৩-২৫-২৭-২৯ রমজান তালাশ করতে হবে।

লাইলাতুল ক্বদর কিভাবে অতিবাহিত করতে হবে :

লাইলাতুল ক্বদরে যেকোন ইবাদত বন্দেগী দ্বারাই অতিবাহিত করা যায়। নামাজ, দোয়া, তাসবীহ-তাহলিল, জিকির, মিলাদ-কিয়াম, দুরুদ সালাম, কোরআন তেলাওয়াত, মোরাকাবা মোশাহাদা করা। রাতের শুরুটা মাগরিব দিয়ে। মাগরিবের পর ছয় রাকাত আওয়াবিন নামাজ। এরপর কিছুক্ষণ জিকির আজকার। এশার নামাজ, তারাবি নামাজ, জিকির-আজকার, দোয়া-দরুদ তসবিহ। কিছু নফল নামাজ। রাত্রিতে তাহাজ্জুদ নামাজ। সালাতুত তসবি নামাজ, ভোররাত সাহারিসহ বিভিন্ন ইবাদতের মাধ্যমে এ রাত্রি অতিবাহিত করা যায়।

খতিব, মদিনা বাজার জামে মসজিদ

চাঁদপুর সদর, চাঁদপুর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়