সুইডেনে কোরআন অবমাননাকারী সালওয়ান মোমিকা গুলিতে নিহত

কোরআন অবমাননাকারী সালওয়ান মোমিকাকে গুলি করার মুহূর্তে তিনি টিকটকে লাইভ করছিলেন। সুইডিশ মিডিয়ার বরাতে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানায়, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরও তার টিকটক লাইভ চলতে থাকে। রয়টার্সের এক সাংবাদিক নিশ্চিত করেছেন, পুলিশের উপস্থিতিতে সেই লাইভ বন্ধ করা হয়।

গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা: সুইডেনের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এসভিটি জানিয়েছে, ৩৮ বছর বয়সী সালওয়ান মোমিকা স্টকহোমের নিকটবর্তী শহর সোদারতালজে-এর একটি বাড়িতে গুলিবিদ্ধ হন। তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হলে, সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে সুইডিশ পুলিশ। তবে হামলার পেছনে কারা জড়িত, তাদের উদ্দেশ্য কী—এসব বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।

কে এই সালওয়ান মোমিকা? সালওয়ান মোমিকা একজন ইরাকি নাগরিক, যিনি সুইডেনে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী ছিলেন। তিনি ২০২৩ সালে ঈদুল আজহার দিন স্টকহোমের একটি মসজিদের সামনে কোরআন পোড়ান, যা বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় তোলে। এরপর ডেনমার্কসহ বিভিন্ন দেশে তার মতো আরও কয়েকজন একই কাজ করে, যার ফলে মুসলিম দেশগুলোতে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়।

সুইডেনের সরকার বাক স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে প্রথমে মোমিকার কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করেনি, বরং কোরআন পোড়ানোর সময় তাকে পুলিশি নিরাপত্তা দেয়। তবে পরে বিশ্বব্যাপী সমালোচনার মুখে সুইডিশ সরকার তার রেসিডেন্স পারমিট বাতিল করে। কিন্তু তাকে নিজ দেশ ইরাকে ফেরত পাঠানোর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

উত্তেজনার সূত্রপাত ও পরিণতি: মোমিকার বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে ইউরোপজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ইসলামপন্থি গোষ্ঠীগুলো সুইডেনে সম্ভাব্য হামলার হুঁশিয়ারি দেয়, যা দেশটির নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করে। তার বিরুদ্ধে মামলা হলেও আইনি জটিলতার কারণে সুইডিশ কর্তৃপক্ষ তাকে বহিষ্কার করতে ব্যর্থ হয়।

হামলার কারণ স্পষ্ট নয়: সালওয়ান মোমিকার ওপর হামলা কে বা কারা চালিয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। এটি ব্যক্তিগত শত্রুতা, প্রতিশোধমূলক আক্রমণ, নাকি ইসলামপন্থিদের প্রতিক্রিয়া—তা নিয়ে তদন্ত চলছে। সুইডিশ পুলিশ ঘটনাটি সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে নাকি ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে সংঘটিত হয়েছে, সেটি নির্ধারণের চেষ্টা করছে।

এই ঘটনার পর সুইডেনের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। দেশটির সরকার ইতিমধ্যে বিদ্বেষমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে আরও কঠোর নীতিমালা প্রণয়নের পরিকল্পনা করছে বলে জানিয়েছে। তবে মোমিকার গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ইউরোপ ও মুসলিম বিশ্বে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

ডিসিকে/এমজেডএইচ