রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ১২ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

ইসলামে মানবাধিকার

নূর মোহাম্মদ
ইসলামে মানবাধিকার

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

আত্মহত্যা নিষিদ্ধ : মানুষের নিজ জীবন আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে এক বড় নেয়ামত। আত্মহত্যা একটি অমানবিক ও কাপুরুষোচিত প্রক্রিয়া ও আল্লাহর নেয়ামতের প্রতি অকৃতজ্ঞতা। আত্মহত্যাকারীরা নিজেরাই নিজেদেরকে আল্লাহর দেয়া জীবনের মূল্যবান অধিকার থেকে বঞ্চিত করে থাকে। আল কুরআনে এ প্রবণতাকে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বলা হয়েছে, “তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করো না। নিশ্চই আল্লাহ তোমাদের ওপর দয়ালু।” (আল কুরআন: সূরা আন নিসা-২৯) রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোন লোহার অস্ত্র দ্বারা আত্মহত্যা করে তাকে সে অস্ত্র দ্বারাই দোযখের মধ্যে শাস্তি দেয়া হবে।” (সহীহ আল বুখারী) তিনি আরো বলেছেন, “এক ব্যক্তি আহত হয়েছিল। সে আত্মহত্যা করলে আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, আমার বান্দা বড় তাড়াহুড়া করল। সে নিজেই নিজেকে আত্মহত্যা করল আমি তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিলাম।” (সহীহ আল বুখারী) সুতরাং আত্মহত্যা না করে বরং নিজের অসহনীয় অবস্থার পতিবর্তনের জন্য আল্লাহর অনুগ্রহের প্রত্যাশী হতে আল কুরআনে মানুষকে অনুপ্রেরণা যোগানো হয়েছে। শরী’আ আইনের দৃষ্টিতে আত্মহত্যাকারী আল্লাহর সকল পার্থিব ও অপার্থিব অনুদান থেকে বঞ্চিত হয়।

নিরাপদে জন্মলাভের অধিকার : পৃথিবীর সাধারণ আইনে ভূমিষ্ট হওয়ার পর থেকে প্রাণের নিরাপত্তার অধিকার কার্যকর হয়। কিন্তু আল্লাহর আইনে মাতৃ উদরে গর্ভ সঞ্চার হওয়ার পর থেকেই প্রাণের মর্যাদার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এ জন্য আগাম অভাব বা দরিদ্রতার ভয়ে মানবশিশু বা ভ্রূণ হত্যা ইসলামে হারাম। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, “তোমরা দরিদ্রতার ভয়ে তোমাদের সন্তানদের হত্যা করো না। তাদের এবং তোমাদের জীবিকা আমিই দিয়ে থাকি। নিশ্চই তাদেরকে হত্যা করা মারাত্মক অপরাধ।” (আল কুরআন: সূরা বনী ইসরাঈল-৩১) এ কারণে রাসূল (সাঃ) গামেদ গোত্রের এক নারীকে ব্যভিচারের সুস্পষ্ট স্বীকারোক্তি স্বত্ত্বেও হত্যার নির্দেশ প্রদান করেন নি। কেননা সে তার জবানবন্দীতে নিজেকে গর্ভবতী ব্যক্ত করে। অতঃপর সন্তান প্রসব ও দুগ্ধ পানের সময় সীমা অতিক্রান্ত হওয়ার পর তাকে মৃত্যুদন্ডের শাস্তি দেয়া হয়েছিল। তাৎক্ষণিকভাবে শাস্তি কার্যকর করলে সন্তানের প্রাণনাশের আশঙ্কা ছিল।

আমেরিকার সুপ্রীম কোর্ট রো বনাম ওয়েড এর বিখ্যাত মামলায় আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান বিষয়ক তথ্যের বরাতে রায় দিয়েছে যে, মাতৃগর্ভে ‘মানব অস্তিত্ব’ কে গর্ভে ধারণের তিন মাস পরে আইনত: স্বীকার করে নিতে হবে। (আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রীম কোর্টের প্রতিবেদন, অক্টোবর-১৯৭৪, পৃ.-১৪৭) যা আল কুরআন প্রায় ১৪৫০ বছর আগেই বলেছে। এমনি ভাবে মেয়ে শিশু হত্যাসহ সকল হত্যা ইসলামে হারাম করেছে। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, “ যখন জীবন্ত প্রোথিত কন্যাকে প্রশ্ন করা হবে, কী অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছিল?” (আল কুরআন: সূরা আত তাকবীর-৮ও ৯) নবজাতক বিশেষত মেয়ে শিশুদের রক্ষণাবেক্ষন সম্পর্কে রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “যদি কোন পরিবারে একের পর এক মেয়ে শিশু জন্মলাভ করে এবং তাদের পিতা-মাতা তাদেরকে যত্ন ও ভালোবাসা দিয়ে লালন-পালন করেন, তাহলে সে শিশুরা তাদের পিতা-মাতাকে নরকের অগ্নি থেকে রক্ষা করবে।” (মুসনাদে আহমদ)

সম্পদে মালিকানার অধিকার : মহানবি (সাঃ) মানুষের মালিকানাধীন সম্পদকে সম্মানার্হ ঘোষণা করেছেন। মানুষ হালাল পথে সম্পদ উপার্জন করে এর মালিক হতে পারে এবং স্বাধীনভাবে এ সম্পদ ভোগ করতে পারে। এটি সম্পূর্ণ তার খলিফা হওয়ার মর্যাদার সাথে সংগতিপূর্ণ। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, “পুরুষ যা উপার্জন করে তা তার প্রাপ্য আর নারী যা উপার্জন করে তা তার প্রাপ্য অংশ।” (আল কুরআন: সূরা আন নিসা-৩২) তবে মালিকানাধীন সম্পদে অধিকারের সাথে সাথে কর্তব্য যেমন যাকাত, দান-খয়রাত, মাতা-পিতা, স্ত্রী-পুত্র-সন্তান, ভাই-বোন ও আত্মীয়দের দায়িত্ব বহনের সাথে সাথে রাষ্ট্র কর্তৃক ধার্যকৃত স্থায়ী ও সাময়িক কর আদায় করতে হয়। এতে তার বাকী সম্পদ বিভিন্ন হস্তক্ষেপ থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন,“মুমিনগণ, তোমরা অন্যায়ভাবে একে অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ কর না। তবে পরস্পরের সম্মতিতে ব্যবসায়িক পদ্ধতিতে লেনদেন করতে পার।” (আল কুরআন: সূরা আন নিসা-২৯)

ইমাম আবু ইউসুফ (রাঃ) তাঁর কিতাবুল খারাজ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, “রাষ্ট্র নায়ক (ইমাম) কোন প্রতিষ্ঠিত আইনগত অধিকার ছাড়া কোন ব্যক্তির মালিকানা থেকে তার কোন বস্তু নিতে পারে না।”(ইসলামী রিয়াসাত-১৩) বিদায় হজ্জ্বের ঐতিহাসিক ভাষণে রাসূলে কারীম (সাঃ) প্রাণের মর্যাদার সাথে সাথে ধন-সম্পদের মর্যাদার বিষয়ে বলেছেন, “হে মানুষ! তোমাদের জীবন, তোমাদের সম্পদ কেয়ামত পর্যন্ত পরস্পরের জন্য সম্মানিত যেমনি করে এই দিন ও এই মাস তোমাদের নিকট সম্মানিত।” (মহানবীর (সাঃ) জীবন চরিত,ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ,পৃ-৬১২) মালিকানা স্বত্ব রক্ষার অধিকারের গুরুত্ব নি¤েœর হাদীস থেকে অনুমান করা যেতে পারে, “যে ব্যক্তি নিজের সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হয় সে শহীদ।” (সহীহ মুসলিম)

মান-সম্মান, ইজ্জত- আবরু বা সম্ভ্রমের নিরাপত্তা লাভের অধিকার : প্রত্যেক মানুষের কাছে জীবন ও সম্পদের চেয়েও বেশি প্রিয় এবং গুরুত্বপূর্ণ তার মান-সম্মান, ইজ্জত ও আবরুর। কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তি-সমষ্টি, রাষ্ট্র কিংবা রাষ্ট্রীয় কোন সংস্থার মানহানিকর হস্তক্ষেপ ও কর্মকাণ্ড থেকে রেহাই পাওয়া রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের মূল্যবান নাগরিক অধিকার। তাই, মানহানিকর আচরণের যত পন্থা হতে পারে, যেমন-অপপ্রচার, গুজব, নিন্দা, উপহাস, তিরস্কার, ভর্ৎসনা, গালাগাল, বিকৃত নামকরণ, মিথ্যা অপবাদ প্রভৃতি কর্মকাণ্ড ইসলামে নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, “হে ইমানদারগণ! কোন পুরুষ যেন অপর কোন পুরুষকে উপহাস না করে; কেননা যাকে উপহাস করা হয় সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোন নারী অপর নারীকেও যেন উপহাস না করে; কেননা যাকে উপহাস করা হয় উপহাসকারিণী অপেক্ষা সে উত্তম হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ কর না এবং তোমরা একে অপরকে মন্দ নামে ডেক না।” (আল কুরআন: সূরা আল হুজুরাত-১১) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেছেন, “হে মু’মিনগণ! তোমরা বহুবিধ ধারণা হতে বিরত থাকো; কারণ কোন কোন ধারণা পাপ এবং তোমরা একে অপরের গোপনীয় বিষয় অনুসন্ধান করো না এবং একে অপরের পশ্চাতে নিন্দা করো না।” (আল কুরআন: সূরা আল হুজুরাত-১২)

পারষ্পরিক বাক্য বিনিময়ে অশ্লীলভাষী হতে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, “আল্লাহ কারো অত্যাচারিত হওয়া ব্যতীত অশ্লীল বাক্য প্রকাশ করা ভালোবাসেন না।” (আল কুরআন: সূরা আন নিসা-১৪৮) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেছেন, “(হে নবী) মু’মিন পুরুষদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করে।” (আল কুরআন: সূরা আন নূর-৩০) তিনি আরো বলেছেন, “(হে নবী) মু’মিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে ও তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে।” (আল কুরআন: সূরা আন নূর-৩১) রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “কোন ব্যক্তি কোন মুসলমানকে অপমানিত, লাঞ্ছিত, অথবা সম্মানহানি হতে দেখেও যদি তার সাহায্য না করে তাহলে আল্লাহ এমন জায়গায় তার সাহায্য ত্যাগ করবেন যেখানে সে নিজে আল্লাহর সাহায্যপ্রার্থী হবে।” (আবু দাউদ)

রাসূল (সাঃ) মি’রাজ থেকে ফিরে এসে বললেন, “আমি এক শ্রেণির লোকদের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম যাদের নখগুলো ছিল পিতলের নখের মত। যা দ্বারা তারা নিজেদের চেহারা ও বক্ষ খামচাচ্ছিল। আমি তাদের সম্পর্কে জিবরাঈল আ. কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, এরা সেইসব ব্যক্তি যারা দুনিয়াতে মানুষের মান-সম¥ান ও ইজ্জত নিয়ে ছিনিমিনি খেলতো।” (দৈনন্দিন জীবনে ইসলামণ্ড৪৫৪) রাসূল (সাঃ) আরো বলেছেন, “মুসলমানদের পৃষ্ঠদেশ সম্মানিত।”(আবু দাউদ) সুতরাং মানুষের মান-সম্মান ইজ্জত সর্বদা মর্যদাময় ও পবিত্র আমানত। তাইতো আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, “ধ্বংস প্রত্যেক ঐ ব্যক্তির জন্য, যারা পশ্চাতে ও সম্মুখে লোকের নিন্দা করে।” (আল কুরআন: সূরা হুমাযাহ-১) রাসূল (সাঃ) বিদায় হজ্জ্বের ভাষণেও মানুষের মান-সাম্মান, ইজ্জত-আবরুর নিরাপত্তার কথা বলেছেন।

ব্যক্তিগত বাসস্থানের নিরাপত্তার অধিকার : ইসলামে নাগরিকদের পারিবারিক জীবনের পরিপূর্ণ নিরাপত্তার গ্যারান্টি দেয়া হয়েছে, আর ঘরের চার দেয়ালকে একটা সুরক্ষিত দূর্গের মর্যাদা দেয়া হয়েছে, যেখানে হস্তক্ষেপ করার অধিকার কারো নেই। কুরআনুল কারীমের নির্দেশ, “হে মু’মিনগণ! তোমরা নিজেদের ঘর ব্যতীত অন্যের ঘরে অনুমতি ব্যতীত ও সালাম না দিয়ে প্রবেশ কর না। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর ব্যবস্থা, হয়ত তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে। যদি তোমরা ঘরে কাউকে না পাও তাহলে তাতে প্রবেশ করবে না যতক্ষন তোমাদের প্রবেশের অনুমতি দেয়া না হয়। আর যদি তোমাদের বলা হয়, ফিরে যাও, তবে তোমরা ফিরে যাবে। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম এবং তোমাদের সৎকর্ম সম্পর্কে আল্লাহ সবিশেষ অবহিত।” (আল কুরআন: সূরা আন নূর-২৭ ও ২৮)

ব্যক্তি ও বাক স্বাধীনতা লাভের অধিকার : ইসলাম মানুষের ব্যক্তি স্বাধীনতা ও বাক স্বাধীনতার সর্বোচ্চ বিকাশ সাধন করেছে। ইসলামি রাষ্ট্রে ব্যক্তি হিসেবে নাগরিকদের অবাধ স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। এর আওতায় তারা আইনসঙ্গতভাবে জীবন-যাপন করবে। আইনের আওতায় ইচ্ছেমতো চলাফেরা করবে। কোনোভাবেই তাদের স্বাধীন জীবন-যাপন ও চলাফেরায় বাধা দেয়া যাবে না। সুনির্দিষ্ট অপরাধ ও প্রমাণিত অভিযোগ ছাড়া তাদেরকে বন্ধি করা যাবে না। কিন্তু বিশেষ কোন পরিস্থিতিতে, জাতীয় কোনো বিপর্যয়ে রাষ্ট্র যদি কারো বা সবার সর্বত্র চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, তাহলে তা অসঙ্গত হবে না। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, “যে কেউ সৎ পথে চলে, নিশ্চই সে সৎপথে চলে তার নিজের জন্য। আর যে পথভ্রষ্ট হয়, তার ভ্রষ্টতা নিশ্চিতভাবে তারই ওপর এবং কেউ কারো বোঝা বহন করবে না।” (আল কুরআন: সূরা বনী ইসরাঈল-১৫) রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “ন্যায়বিচার ও সঙ্গত কারণ ছাড়া ইসলামে কোনো ব্যক্তিকে আটক রাখা যাবে না।” (মুয়াত্তা ইমাম মালিক)

তেমনিভাবে, সাধারণ নাগরিক যে কোন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে দ্বীনি আবেগ ও অনুভূতি নিয়ে মত প্রকাশ করতে পারে। রাষ্ট্রপ্রধান, শাসন পদ্ধতি বা গৃহীত যে কোনো পদক্ষেপ সম্পর্কে সমালোচনা করতে পারে। কোনো নীতি বা পদক্ষেপ ইসলামের মূলনীতি বিরুদ্ধ হলে বা কোনো বিষয়ে জানা আবশ্যক হলে এ বিষয়ে নির্ভয়ে বিনা বাধায় স্বাধীন বক্তব্য পেশ করতে পারে। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “যালিম শাসকের সামনে হক কথা বলাই হচ্ছে সর্বোত্তম জিহাদ।” (তিরমিযি) হযরত আবু বকর (রাঃ) খলিফার দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম ভাষণে বলেছিলেন, ‘জেনে রেখো! যে ব্যক্তি তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল, আমি যতক্ষণ তার অধিকার আদায় করে দিতে না পারব, ততক্ষণ সে আমার কাছে সবচেয়ে শক্তিশালী। আর যে ব্যক্তি সবচেয়ে শক্তিশালী, তার কাছ থেকে যতক্ষণ অধিকার আদায় করতে না পারব, ততক্ষণ সে আমার কাছে সবচেয়ে দুর্বল।’

ইসলামের বাক স্বাধীনতার প্রসঙ্গে একটি প্রসিদ্ধ ঘটনার উদ্ধৃতি দেয়া যায়। হযরত উমর (রাঃ) এর খিলাফতকালে খলিফা জুমুআর খুতবা দিতে মিম্বরে দাঁড়ানোর সাথে সাথে এক মুসল্লি জানতে চাইলেন খলিফার জামা এত লম্বা হলো কীভাবে? কারণ বায়তুলমাল থেকে সকলকে যে কাপড় বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা দিয়ে এত লম্বা জামা বানানো যায় না। প্রশ্নকর্তা যখন জানলেন, খলীফার ছেলে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) এর ভাগে যে কাপড় পাওয়া গেছে সেটা খলীফাকে দেয়ার ফলেই তাঁর পক্ষে লম্বা জামা বানানো সম্ভব হয়েছে তখন প্রশ্নকর্তা সন্তুষ্ট হয়ে বললেন, হ্যাঁ এখন খুতবা শুরু করুন। আমরা শুনবো। খলীফা বললেন, যদি সন্তোষজনক জবাব না পেতে তাহলে কী করতে? তখন প্রশ্নকর্তা বললেন: তখন আমার এই তলোয়ারই এর সমাধান দিতো! এভাবে ইসলাম ব্যক্তি ও বাক স¦াধীনতা নিশ্চিত করেছে।

ধর্মীয় স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা লাভের অধিকার : ইসলাম আল্লাহ তা’আলা প্রদত্ত পরিপূর্ণ, সর্বজনীন ও একমাত্র গ্রহণীয় জীবনব্যবস্থা হওয়ার পরেও কেউ অন্য ধর্ম বা মত অনুসরণ করলে ইসলাম তাতেও বাধা প্রদান করে না। ইসলাম মুসলিম ও অমুসলিম নির্বিশেষে প্রতিটি ব্যক্তি ও ধর্মীয় সম্প্রদায়কে স্ব স্ব ধর্ম পালন, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান সম্পাদনের নিমিত্ত উপাসনালয় নির্মাণ এবং ধর্মীয় আদর্শ প্রচারার্থে কার্যক্রম পরিচালনা করার স্বাধীনতা প্রদান করেছে। এমনকি অন্য ধর্মের উপাস্যদের গালি দেয়াও ইসলাম সমর্থন করে না। আল্লাহ তা’আলার বিভিন্ন ঘোষণা থেকে বিষয়টির স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া যায়। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, “দীনের ব্যাপারে কোনো জোর প্রয়োগ নেই। মিথ্যা পথ হতে সত্য পথ আলাদা হয়ে গেছে।”(আল কুরআন: সূরা আল বাকারা-২৫৬) তিনি আরো বলেছেন, “আল্লাহকে বাদ দিয়ে তারা যাদেরকে উপাস্য হিসেবে গ্রহণ করেছে তোমরা তাদেরকে গালি দিও না। কেননা তাহলে তারা অজ্ঞতাবশত সীমালঙ্ঘন করে আল্লাহকেও গালি দেবে।” (আল কুরআন: সূরা আল আনআমণ্ড১০৮) তিনি আরো বলেছেন, “আপনার রব যদি ইচ্ছা করতেন, তাহলে পৃথিবীর সব লোকই ঈমান আনত। তাহলে কি আপনি মু’মিন হওয়ার জন্য মানুষের ওপর জোর প্রয়োগ করবেন?” (আল কুরআন: সূরা ইউনুস-১৯) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেছেন, “ (হে নবী! আপনি বলুন) তোমাদের জন্য তোমাদের দীন, আমার জন্য আমার দীন।” (আল কুরআন: সূরা কাফিরুন-৬)

এভাবে ইসলাম কারো ওপর বিশ্বাস চাপিয়ে না দেয়ার অনন্য নীতি অনুসরণ করে মানুষের বিবেক ও বিশ্বাসের স্বাধীনতা সুরক্ষিত করে তাদের অধিকার অক্ষুণ্ণ রাখার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। রাসূল (সাঃ) মদীনায় হিজরতের পর বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে পরমত, পরধর্মের প্রতি সহনশীলতা, সহানুভূতি, সম্প্রীতি ও ঐক্যের ওপর গুরুত্ব দিয়ে ‘মদীনা সনদ’ প্রণয়ন করেন। সনদের অন্যতম ধারা হলো-

১. মদীনা সনদে স্বাক্ষরকারী ইহুদী, খ্রিষ্টান, পৌত্তলিক ও মুসলমান সম্প্রদায়সমূহ সমান নাগরিক অধিকার ভোগ করবে এবং তারা একটি জাতি গঠন করবে।

২. পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা বজায় থাকবে। মুসলমান ও অমুসলমান সম্প্রদায়ের লোকেরা বিনা দ্বিধায় নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারবে। কেউ কারো ধর্মে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।

৩. রক্তপাত, হত্যা, ব্যভিচার এবং অপরাপর অপরাধমূলক কার্যকলাপ একেবারেই নিষিদ্ধ করা হলো।

৪. দুর্বল ও অসহায়কে সর্বতোভাবে সাহায্য ও রক্ষা করতে হবে। (চলবে)

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়