শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।
  •   রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করলেন না সমাজী।

প্রকাশ : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর ভূমিষ্ঠে বরকতময় ঘটনাবলি

মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর ভূমিষ্ঠে বরকতময় ঘটনাবলি
মুফতী মুহা.আবু বকর বিন ফারুক

মহান আল্লাহ তা’আলা যুগে যুগে বহু নবী এবং রাসূলগণকে পৃথিবীতে মানব জাতির হেদায়েতের জন্য প্রেরণ করেন। তন্মধ্যে আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সর্বশেষ নবী এবং রাসূল হিসেবে প্রেরণ করেন।

নি¤েœ আমাদের নবীর আগমন বার্তা সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো-

পূর্ববতী আসমানী কিতাবে আমাদের নবীর নাম উল্লেখ রয়েছে, পবিত্র কুরআনুল কারীমে মহান আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন -পূর্ববর্তী গ্রন্থসমূহে অবশ্যই এর উল্লেখ আছে। (২৬ সূরা শুয়ারা-১৯৬)

শেষ নবীর আগমন বার্তা ও তাঁর সুন্দর চারিত্রিক গুণাবলীর বর্ণনা পূর্বের ধর্মগ্রন্থসমূহে রয়েছে। অনুরূপ কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার সুসংবাদও পূর্বের কিতাবসমূহে দেওয়া হয়েছিলো। এর অন্য একটি অর্থ হল, সমস্ত শরীয়তের অভিন্ন বিধি-বিধানের দিক দিয়ে এই কুরআন মাজীদ পূর্বের কিতাবসমূহেও মওজুদ রয়েছে।

আমি যাদেরকে কিতাব দিয়েছি, তারা তাকে (মুহাম্মাদকে) তেমনই চেনে, যেমন তাদের পুত্রগণকে চেনে; কিন্তু তাদের একদল জেনেশুনে সত্য গোপন করে থাকে। (২, সূরা বাকারা-১৪৬)

সত্য তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে সমাগত। সুতরাং তুমি সংশয়ীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। (২ সূরা বাকারা-৪৭)

নবীর উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে যে বিধানই অবতীর্ণ হয়, তা অবশ্যই সত্য। সে ব্যাপারে সন্দেহ-সংশয়ের কোন অবকাশ নেই।

আর যখন আল্লাহ নবীদের নিকট থেকে অঙ্গীকার নিলেন যে, আমি তোমাদেরকে কিতাব ও প্রজ্ঞা দান করছি, অতঃপর তোমাদের কাছে যা আছে তার সমর্থকরূপে যখন একজন রসূল আসবে, তখন নিশ্চয় তোমরা তাকে বিশ্বাস ও সাহায্য করবে।তিনি বললেন, ‘তোমরা কি স্বীকার করলে এবং আমার অঙ্গীকার গ্রহণ করলে?’ তারা বলল, ‘আমরা স্বীকার করলাম।’ তিনি বললেন, ‘তবে তোমরা সাক্ষী থাক এবং আমিও তোমাদের সাথে সাক্ষী রইলাম।’(৩ সূরা আলে ইমরান-৮১)

আর স্মরণ করুন, যখন মারইয়ামণ্ডপুত্র ঈসা বলেছিলেন, হে বনী ইসরাঈল! নিশ্চয় আমি তোমাদের কাছে আল্লাহর রাসূল এবং আমার পূর্ব থেকে তোমাদের কাছে যে তাওরাত রয়েছে আমি তার সত্যায়নকারী এবং আমার পরে আহমাদ নামে যে রাসূল আসবেন আমি তার সুসংবাদদাতা।পরে তিনি যখন সুস্পষ্ট প্রমাণাদিসহ তাদের কাছে আসলেন তখন তারা বলতে লাগল, এটা তো স্পষ্ট জাদু। (৬১ সূরা আস সাফ-৬)

ঈসা আলাইহিস সালাম কর্তৃক সুসংবাদ প্রদত্ত সেই রাসূলের নাম বলা হয়েছে আহমদ। আমাদের প্রিয় শেষ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামণ্ডএর নাম মুহাম্মদ, আহমদ এবং আরও কয়েকটি নাম ছিল। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমার কয়েকটি নাম রয়েছে, আমি মুহাম্মাদ, আমি ‘আহমদ, আমি মাহী’ বা নিশ্চিহ্নকারী; যার মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ কুফারী নিশ্চিহ্ন করে দিবেন। আর আমি ‘হাশির’ বা একত্রিতকারী; আমার কদমের কাছে সমস্ত মানুষ জমা হবে। আর আমি ‘আকিব’ বা পরিসমাপ্তিকারী ৷ [বুখারী: ৩৫৩২, ৪৮৯৬, মুসলিম: ২৩৫৪, তিরমিযী: ২৮৪০, মুসনাদে আহমাদ: ৪/৮০, ইবনে হিব্বান: ৬৩১৩] তবে রাসূলের নাম এ কয়টিতে সীমাবদ্ধ নয়। অন্য হাদীসে আরও এসেছে, আবু মূসা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই আমাদেরকে তার নাম উল্লেখ করেছেন, তন্মধ্যে কিছু আমরা মুখস্ত করতে সক্ষম হয়েছিলাম। তিনি বলেছিলেন, আমি ‘মুহাম্মাদ’ ‘আহমাদ, হাশির, মুকাফফি (সর্বশেষে আগমনকারী), নাবিইউত তাওবাহ (তাওবাহর নবী), নাবীইউল মালহামাহ, (সংগ্রামের নবী)। [মুসলিম: ২৩৫৫, মুসনাদে আহমাদ: ৪/৩৯৫, ৪০৪, ৪০৭]

ঈসা আলাইহিস সালামণ্ডএর সুসংবাদ প্রদানের কথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামণ্ডএর হাদীসেও এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবীগণ তাকে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদেরকে আপনার নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন। জবাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘আমি আমার পিতা (পিতৃপুরুষ) ইবরাহীমণ্ডএর দোআ, ঈসা-এর সুসংবাদ এবং আমার মা যখন আমাকে গর্ভে ধারণ করেছিলেন তখন তিনি স্বপ্নে দেখেছিলেন যে, তার থেকে একটি আলো বের হয়ে সিরিয়ার বুসরা নগরীর প্রাসাদসমূহ আলোকিত হয়ে গেছে।” [মুস্তাদরাকে হাকিম: ২/৬০০, অনুরূপ বর্ণনা আরও দেখুন: মুসনাদে আহমাদ: ৫/২৬২] এমনকি এ সুসংবাদের কথা হাবশার বাদশাহ নাজাসীও স্বীকার করেছিলেন। [দেখুন: মুসনাদে আহমাদ: ১/৪৬১-৪৬২]

বল, হে মানুষ! আমি তোমাদের সকলের জন্য আল্লাহর রসূল, (সেই আল্লাহর) যিনি আকাশসমূহ আর পৃথিবীর রাজত্বের মালিক, তিনি ছাড়া সত্যিকারের কোন ইলাহ নেই, তিনিই জীবিত করেন আর মৃত্যু আনেন। কাজেই তোমরা ঈমান আন আল্লাহর প্রতি ও তাঁর প্রেরিত সেই উম্মী বার্তাবাহকের প্রতি যে নিজে আল্লাহর প্রতি ও তাঁর যাবতীয় বাণীর প্রতি বিশ্বাস করে, তোমরা তাঁর অনুসরণ কর যাতে তোমরা সঠিক পথ পেতে পার। (৭ সূরা আরাফ-১৫৮)

আমি তো তোমার পূর্বে অনেক রসূল প্রেরণ করেছিলাম; তাদের কারো কারো কথা তোমার নিকট বিবৃত করেছি এবং কারো কারো কথা তোমার নিকট বিবৃত করিনি। আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোন নিদর্শন উপস্থিত করা কোন রসূলের কাজ নয়। আল্লাহর আদেশ এলে ন্যায়সঙ্গতভাবে ফায়সালা হয়ে যাবে। আর তখন মিথ্যাশ্রয়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। (৪০ সূরা আল গাফির-৭৮)

মহান আল্লাহ তায়ালা নবীজি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লামকে জগৎবাসীদের জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছেন। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লামণ্ডএর ভূমিষ্ঠে জগৎবাসীর প্রতি আল্লাহ রাব্বুল আলামীন অসংখ্য-অগণিত রহমত, কল্যাণ, বরকত নাযিল করেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লামের ভূমিষ্ঠের রাতের বরকতময় আলোচনা করা হলো-

বায়হাকী এবং আবু নাঈম বর্ণনা করেছেন, হাসসান ইবনে ছাবেত (রাঃ) বলেন, আমি তখন সাত-আট বছরের বুঝমান বালক ছিলাম। ঐ সময় একদা এক ইয়াহুদী একটি টিলার উপর উঠে মদীনার ইয়াহুদী সম্প্রদায়কে আওয়াজ দিয়ে ডাকল। তাতে তারা ছুটে এসে তার কাছে জিজ্ঞেস করল, কি ব্যাপার? ইয়াহুদী বলল, আজ রাতে আহমদ ভূমিষ্ঠ হয়েছেন। তাঁর লক্ষণযুক্ত তারকা আসমানে উদিত হয়েছে। বায়হাকী, তিবরানী, আবু নাঈম এবং ইবনে আসাকির হযরত উসমান ইবনে আবুল আছ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন। আমার মাতা আমাকে বলেছেন, আমেনার গৃহে নবী করীম (সাঃ)-এর ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় আমি সেখানে উপস্থিত ছিলাম। আমেনার গৃহে চারদিক নূরের আলোকে উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছিল। আসমানের নক্ষত্ররাজি এভাবে নীচের দিকে ঝুঁকে পড়েছিল, মনে হচ্ছিল যেন তারকাগুলো আমার উপরই পতিত হবে। তাছাড়া নবী করীম (সাঃ)-এর জন্মগ্রহণকালে আমেনার দেহ থেকে একটি নূর বের হয়ে সারা ঘর আলোকময় হয়ে গিয়েছিল।

আহমদ বাযযার, তিবরানী, হাকেম, বায়হাকী এবং আবু নাঈম ইরবায় ইবনে সারিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, আমি আল্লাহর বান্দা। আমি সে সময় থেকেই শেষ নবী, যখন হযরত আদম (আঃ) -এর সত্তা মৃত্তিকার মধ্যে নিহিত ছিল। আমার জন্য হযরত ইব্রাহীম (আঃ) দোয়া করেছেন। হযরত ঈসা (আঃ) আমার আগমনের সুসংবাদ দিয়াছেন এবং আমার মাতা স্বপ্ন দেখেছেন। নবীদের মাতাগণ এরূপ স্বপ্ন দেখে থাকেন। নবী করীম (সাঃ)-এর মাতা তাঁর পুত্রের জন্মের সময় এমন একটি নূর দেখতে পান যার উজ্জ্বল আলোকে সুদূর সিরিয়ার রাজমহল পর্যন্ত তার চোখে ভেসে উঠে। হাকেম এবং বায়হাকী খালেদ ইবনে মে’দান থেকে বর্ণনা করেছেন, একদা সাহবাগণ আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (সাঃ)! আপনি আপনার নিজের সম্পর্কে আমাদেরকে কিছু কথা শুনান। তখন তিনি বললেন, আমি হযরত ইব্রাহীম (আঃ)-এর দোয়ার ফলশ্রুতি এবং হযরত ঈসা (আঃ)-এর সুসংবাদের বাস্তবায়ন। আমার মাতা আমি তার গর্ভে থাকাকালীন অবস্থায় স্বপ্ন দেখেছেন যেন তার দেহ থেকে একটি নূরের উদয় হয়েছে। যার আলোকে সিরিয়ার বুছরা এলাকা আলোকোজ্জ্বল হয়ে গিয়েছে। খালেদ বলেন, নবী করীম (সাঃ)-এর মাতা আমেনা তার গর্ভাবস্থায় যে নূর দেখেছিলেন, তা ছিল স্বপ্ন। পক্ষান্তরে নবী করীম (সাঃ)-এর জন্মের সময় যে নূর দেখেছিলেন, তা ছিল তাঁর জাগ্রত অবস্থার বাস্তব ঘটনা। ইবনে ইসহাক বর্ণনা করেছেন, হযরত আমেনা বলেন, গর্ভসঞ্চার হওয়ার পর কেউ তাকে বলল, হে আমেনা! তোমার গর্ভে মনুষ্যকুলের সরদার স্থান লাভ করেছেন। তার নিদর্শন হল, যখন তিনি জন্মগ্রহণ করবেন তখন একটি নূরের উদয় হবে। যার আলোকে সিরিয়ার বুছরা নগরীর রাজপ্রাসাদ পর্যন্ত চোখের সামনে ভেসে উঠবে। তোমার এ সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে মুহাম্মদ তার নাম রেখো।

ইবনে সা’দ এবং ইবনে আসাকির হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন, হযরত আমেনা বলেন, নবী করীম (সাঃ)কে গর্ভে ধারণ করার পর থেকে তার ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত আমার কোনরূপ ক্লেশ পেতে হয়নি। তার ভূমিষ্ঠ হওয়ার সাথে সাথে একটি নূরের উদয় হল। যাতে পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যবর্তী সমস্ত এলাকা আলোকোজ্জ্বল হয়ে গেল। জন্মের সময় তিনি তার হাত দিয়ে মাটিতে ভর দিলেন এবং একমুষ্টি মাটি নিয়ে হাত বন্ধ করে আসমানের দিকে দৃষ্টিপাত করলেন।

ইবনে সা’দ ছাওরর ইবনে ইয়াযিদ থেকে, তিনি আল আজফা থেকে বর্ণনা করেছেন, নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, আমার জন্মগ্রহণকালে আমার মাতা তার দেহ থেকে একটি নূর উদিত হতে দেখলেন যার জ্যোতির ছটা সিরিয়ার রাজধানী পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ল।

আবু নাজীম আতা ইবনে ইয়াসার থেকে বর্ণনা করেছেন, হযরত উম্মে সালামাহ (রাঃ), হযরত আমেনার এ কথা বর্ণনা করেছেন; যে রাতে নবী করীম (সাঃ) ভূমিষ্ঠ হলেন, আমি একটি নূর উদিত হতে দেখলাম। যার আলোকে সিরিয়ার রাজপ্রাসাদ পর্যন্ত এভাবে আলোকোদ্ভাাসিত হয়ে উঠল, তা আমিও দেখতে পেলাম ইবনে সা’দ আমর ইবনে আছেম থেকে, তিনি হুমাম ইবনে ইয়াহইয়া থেকে, তিনি ইসহাক ইবনে আব্দুল্লাহ থেকে নবী করীম (সাঃ)-এর মাতা আমেনার এ বর্ণনা উদ্ধৃত করেছেন, নবী করীম (সাঃ) ভূমিষ্ঠ হলে আমার দেহ থেকে একটি নূর বের হল। যাতে সিরিয়ার রাজপ্রাসাদ পর্যন্ত আলোকোজ্জ্বল হয়ে গেল। তিনি সম্পূর্ণ পাক-পবিত্র অবস্থায় ভূমিষ্ট হলেন। কোনরূপ অপরিচ্ছন্নতা বা অপবিত্রতা ছিল না। ভূমিষ্ঠ হয়েই তিনি মাটিতে তার হাত রাখলেন। ইবনে সা’দ মুআয় আমারী থেকে, তিনি ইবনে আওন থেকে, তিনি ইবনে কিবতিয়া থেকে বর্ণনা করেছেন, হযরত আমেনা নবী করীম (সাঃ)-এর জন্মের ব্যাপারে বলেছেন, আমি আমার দেহ থেকে একটি আলোকপি- উদিত হতে দেখলাম। যাতে সমগ্র জগত আলোময় হয়ে উঠল। ইবনে সা’দ হাসসান ইবনে আতিয়্যাহ থেকে বর্ণনা করেছেন, নবী করীম (সাঃ) জন্মগ্রহণ করেই নিজ হাতের তালু এবং হাটু দিয়ে মাটিতে ভর দিলেন। ওই সময় তিনি আসমানের দিকে তাকিয়েছিলেন।

ইবনে সা’দ মুসা ইবনে ওবায়দাহ থেকে এবং তিনি তার ভাই থেকে বর্ণনা করেছেন, নবী করীম (সাঃ) জন্মগ্রহণ করে হাত দিয়ে মাটিতে ভর দিলেন। মস্তক আসমানের দিকে উত্তোলন করলেন এবং হাতে একমুষ্টি মাটি তুলে নিলেন। বনু লাহাবের এক ব্যক্তি এ কথা শুনে এরূপ মন্তব্য করল, এটা সত্য হলে এ শিশু এককালে সারা জগতকে তার করায়ত্ত করে ফেলবে। আবু নাঈম, আব্দুর রহমান ইবনে আওফ থেকে, তিনি তার মাতা আশশিফা বিনতে আমর ইবনে আওফের এ ধরনের একটি বর্ণনার উল্লেখ করেছেন, নবী করীম (সাঃ) -এর জন্ম আমার হাতের উপর হয়েছে। তার মুখমণ্ডল তখনই উজ্জ্বল এবং দীপ্তিময় ছিল। ঐ সময় আমি কাউকে বলতে শুনলাম, তোমার প্রতি আল্লাহর রহমত। তোমার প্রতি তোমার প্রতিপালকের রহমত। এরপর আমার সামনে পূর্ব ও পশ্চিম দিক-দিগন্তু আলোকোজ্জ্বল হয়ে গেল এবং রোমের রাজপ্রাসাদ পর্যন্ত আমার চোখের সামনে ভেসে উঠল। অতঃপর আমি নবজাতককে কাপড়ে ঢেকে শয়ন করিয়ে দিলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার উপর যেন একটি অন্ধকার এবং ভীতির পর্দা পড়ে গেল। আমি কেঁদে উঠলাম। এ সময় আমি কাউকে বলতে শুনলাম, তুমি একে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ ? বলা হল, পশ্চিম দিকে। তারপরই আমার এ অবস্থা দূর হয়ে গেল ; কিন্তু একটু পরেই আবার ঐ অবস্থা আমাকে আচ্ছন্ন করে ফেলল। আমি আবার ভীতিগ্রস্ত হয়ে পড়লাম এবং কাঁপতে লাগলাম। আর সে অবস্থায় আমি কাউকে বলতে শুনলাম, একে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ? বলা হল পূর্বদিকে।

শিফা বিনতে আমর ইবনে আওফ বলেন, নবী করীম (সাঃ)-এর নবুয়ত লাভ পর্যন্ত আমার মনের মধ্যে এ কথাগুলো শুধু তোলপাড় করছিল। অতঃপর যখন তিনি নবুয়ত প্রাপ্ত হলেন, তখন আমি সর্বপ্রথম দীক্ষিত হলাম। আবু নাঈম আমর ইবনে কুতাইবাহ থেকে, তিনি তার পিতাকে বলতে শুনেছেন, হযরত আমেনার সন্তান প্রসবকাল উপস্থিত হলে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন ফেরেশতাদেরকে আদেশ করলেন, তোমরা সমস্ত আসমান এবং বেহেশতসমূহের দরজাগুলো খুলে দাও, অতঃপর তোমরা আমার সামনে উপস্থিত হও। তখন ফেরেশতাগণ তাদের একে অপরকে সুখবর বলতে বলতে আল্লাহর দরবারে হাজির হল। দুনিয়ার পাহাড়-পর্বতগুলো তাদের শির উচু করল। সাগরসমূহের জলরাশি স্ফীত হয়ে উঠল। পানিতে ও পর্বতে যারা বসবাস করে তারাও একে অপরকে সুসংবাদ জানাতে লাগল। শয়তানকে সত্তরটি শিকল দিয়ে আবদ্ধ করা হল এবং তাকে কাস্পিয়ান সাগর বক্ষে উপুড় করে ঝুলিয়ে রাখা হল। দুনিয়ার পাপীষ্ঠ ও অবাধ্য প্রাণীসমূহকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হল। সূর্যকে সেদিন এক অপূর্ব ও অসাধারণ আলো প্রদান করা হল এবং তার দরজার সামনে শূন্য জগতে সত্তর হাজার হুরকে দাড় করিয়ে দেয়া হল, যারা নবী করীম (সাঃ)-এর ভূমিষ্ঠ হওয়ার অপেক্ষা করতে লাগল।

নবী করীম (সাঃ)-এর সম্মান ও মর্যাদার কারণে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর জন্মের বছর দুনিয়ার সকল নারীর জন্য পুত্র সন্তান নির্ধারণ করে দিলেন এবং দুনিয়ার কোন একটি বৃক্ষকেও সেই বছর ফলবিহীন করে রাখলেন না। আর এটাও নির্ধারণ করে রাখলেন, ওই বছর দুনিয়ার কোন স্থানেই কোনরূপ অশান্তি এবং ফেতনা-ফাসাদের অস্তিত্ব থাকবে না। (চলবে)

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়