রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ০২ জুন ২০২৩, ০০:০০

মুমিন জীবনে হজ্বের গুরুত্ব

মুফতি মুহাঃ আবু বকর বিন ফারুক

মুমিন জীবনে হজ্বের গুরুত্ব
অনলাইন ডেস্ক

প্রতিটি মুমিন নর-নারীর হৃদয়ে হজ্বের আশা চিরদিন থাকে। এর মধ্যে যাদের ভাগ্য ভালো তাঁরা হজ্ব করতে পারে। সামর্থ্যরে অভাবে অনেকে আবার নয়নে অঝোর ধারায় অশ্রু প্রবাহিত করে।

পাগলপারা হৃদয়কে শান্ত করার ব্যর্থ প্রয়াস চালায়। সবারি মন ছুটে যায় বারবার মদিনায়, যেথায় প্রিয় নবি আছে নিরালায়। কাবা, হাজরে আসওয়াদ, মিনা, মুযদালিফাসহ প্রিয় নবীর স্মৃতি ঘেরা পবিত্র মক্কা। সামর্থ্যহীনদের হৃদয় শান্ত করা এবং সামর্থ্যবানদের হজ্বে অনুপ্রাণিত করার জন্য হজ্ব নিয়ে লেখা।

হজ্ব একটি আরবি শব্দ। এর শাব্দিক অর্থ হল- ইচ্ছা করা, দৃঢ় সংকল্প করা।

আর শরিয়তের পরিভাষায়- মহান আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জনের লক্ষ্যে নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট কার্যাবলী সম্পাদনের মাধ্যমে বাইতুল্লাহ শরীফ জিয়ারত করাকে হজ্ব বলে।

ইসলামি শরিয়াতের পঞ্চম স্তম্ভের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। প্রত্যেক সামর্থ্যবান প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমান নর-নারীর উপর এটা ফরজ। এই হজ্বের মাধ্যমেই মানুষের দৈহিক, আত্মিক ও আর্থিক ইবাদাতের সমাবেশ ঘটে। এজন্যে শরিয়তে এর গুরুত্বও অপরিসীম।

নিম্নে হজ্ব সম্পর্কে মাসায়িল পেশ করা হলো:

হজ্বের প্রকার :

হজ্ব তিন প্রকার।

১ . হজ্বে ইফরাদ

২. হজ্বে কিরান

৩, হজ্বে তামাত্তু।

এর মধ্যে সবচেয়ে উত্তমহলো- হজ্বে কিরান, তারপর হজ্বে তামাত্তু, তারপর হজ্বে ইফরাদ।

প্রত্যেকটির সংজ্ঞা আলাদা আলাদাভাবে নিম্নে পেশ করা হলো।

১. হজ্বে ইফতারের সংজ্ঞা :

‘ইফরাদ’ একটি আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হলো- একক, অদ্বিতীয়, আলাদা করণ, পৃথক হওয়া ইত্যাদি। আর শরিয়াতের পরিভাষায় হজ্বের মৌসুমে শুধুমাত্র হজ্বের নিয়ত করে ইহরাম বেঁধে হজ্বের কার্যাবলী সমাপন করাকে হজ্বে ইফরাদ বলে।

২. হজ্বে কিরানের সংজ্ঞা : কিরান ' এটি আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হলো- সংযুক্ত করা, সম্পৃক্ত করা, একত্র করা, মিলিয়ে নেয়া ইত্যাদি।

আর শরিয়তের পরিভাষায় - হজ্বের মৌসুমে এক সাথে উমরা ও হজ্বের নিয়ত করে ইহরাম বেঁধে প্রথমে উমরা এরপর (ইহরাম না খুলে) একই এহরামে হজ্বের কার্যাবলী সমাপন করাকে হজ্বে কিরান বলে।

৩. হজ্বে তামাতুর সংজ্ঞা : “ তামাত্তু ' এটি আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হলো- উপভোগ করা, আনন্দলাভ করা, শান্তি পাওয়া, উপকৃত হওয়া ইত্যাদি। আর শরীয়াতের পরিভাষায় হজ্বের মৌসুমে প্রথমে শুধু উমরার নিয়াত করে ইহরাম বেঁধে উমরা এরপর (ইহরাম খুলে) নতুনভাবে হজ্বের নিয়ত করে হজ্বের কার্যাবলী সমাপন করাকে হজ্বে তামাত্তু বলে।

উল্লেখ্য যে, হজ্বে তামাত্তুর মধ্যে যেহেতু উমরা পালন করার পর ইহরাম খুলার সুযােগ রয়েছে আর একারণে কিছুটা স্বস্তি ও শান্তি লাভ হয় এজন্য এর নাম হজ্বে তামাত্তু করা হয়েছে।

হজ্বের ফরয ৩ টি :

০১. মিকাত থেকে ইহরাম বাঁধা।

০২. ৯ ই যিলহজ্ব আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করা।

০৩. ১০ ই যিলহজ্ব সুবহে সাদিকের পর থেকে নিয়ে ১২ ই যিলহজ্ব সূর্যাস্তের পূর্বে (বাইতুল্লাহ শরীফ) তাওয়াফে যিয়ারত করা।

হজ্বের ওয়াজিব ৬টি :

০১. ৯ ই যিলহজ্ব সূর্যাস্তের পর থেকে পরবর্তী সূর্যোদয় পর্যন্ত মুযদালিফায় অবস্থান করা।

০২. সাফা এবং মারওয়া পাহাড়দ্বয় সায়ী করা।

০৩. মিনায় শয়তানকে কংকর (পাথর) নিক্ষেপ করা।

০৪. ইহরাম খােলার জন্য মাথা মুণ্ডানাে বা ছাটা।

০৫. বিদায়ী তাওয়াফ করা। (মীকাতের বাইরের লোকদের জন্য)।

০৬. কুরবানী করা (শুধুমাত্র হজ্বে তামাত্তু এবং কিরান আদায়কারীদের জন্য ওয়াজিব, অন্যদের জন্য নয়)।

হজ্বের সুন্নাত ও মুস্তাহাব ৯ টি :

০১. যারা হজ্বে ইফরাদ কিংবা হজ্বে কিরান করবে তাদের জন্য তাওয়াফে কুদূম করা।

০২. তাওয়াফে কুদূমের প্রথম তিন চক্করে রমল করা। তাওয়াফে কুদূমে রমল না করে থাকলে তাওয়াফে যিয়ারতে রমল করবে।

০৩. ৮ ই যিলহজ্ব মক্কা থেকে মিনায় গিয়ে যােহর, আসর, মাগরিব, ইশা ও ফজর এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা এবং রাতে মিনায় অবস্থান করা।

০৪. ৯ ই যিলহজ্ব সূর্যোদয়ের পর মিনা থেকে আরাফার ময়দানের দিকে রওয়ান হওয়া।

০৫. ৯ ই যিলহজ্ব সূর্যাস্তের পর আরাফার ময়দান থেকে মুযদালিফার দিকে রওয়ানা হওয়া।

০৬. উকূফে আরাফার জন্য সেদিন যােহরের পূর্বে গােসল করা।

০৭. ১০, ১১, ও ১২ ই যিলহজ্ব দিবাগত রাতগু লোতে মিনায় অবস্থান করা।

০৮. মিনা হতে বিদায় হয়ে মক্কায় আসার পথে মুহাসসার নামক স্থানে কিছু সময় অবস্থান করা।

৯. ইমামের জন্য তিন স্হানে খুৎবা দেয়া। ৭ ই জিলহজ্ব মক্কায়, ৯ই জিলহজ্ব আরাফায় এবং ১১ই জিলহজ্ব মিনায়। (ফাতওয়ায়ে শামী - ২/৪৬৭পৃ:ফাতওয়ায়ে আলমগীরী - ১ /২১৯ পৃ:)

মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনুল কারীমে এরশাদ করেন -আর মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহ্র উদ্দেশ্যে ঐ ঘরের হজ্ব¡ করা তার জন্য অবশ্য কর্তব্য। আর যে কেউ কুফরী করল সে জেনে রাখুক, নিশ্চয় আল্লাহ সৃষ্টিজগতের মুখাপেক্ষী নন।(ইমরান -৯৭)

হজ্ব¡ শব্দের অর্থ ইচ্ছা করা। শরীয়তের পরিভাষায় কা’বা গৃহ প্রদক্ষিণ, আরাফাত ও মুযদালফায় অবস্থান ইত্যাদি ক্রিয়াকর্মকে হজ্ব¡ বলা হয়। হজ্বের বিস্তারিত নিয়মপদ্ধতি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৌখিক উক্তি ও কর্মের মাধ্যমে ব্যক্ত করেছেন।

আয়াতে কা’বা গৃহের বৈশিষ্ট্যের বর্ণনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, আল্লাহ্ তাআলা মানব জাতির জন্য শর্তসাপেক্ষে কা’বা গৃহের হজ্ব¡ ফরয করেছেন। শর্ত এই যে, সে পর্যন্ত পৌছার সামর্থ্য থাকতে হবে। সামর্থ্যের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির হাতে সাংসারিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত এ পরিমাণ অর্থ থাকতে হবে, যা দ্বারা সে কা’বা গৃহ পর্যন্ত যাতায়াত ও সেখানে অবস্থানের ব্যয়ভার বহন করতে সক্ষম হয়।

এছাড়া গৃহে প্রত্যাবর্তন পর্যন্ত পরিবার-পরিজনের ভরণ-পোষণেরও ব্যবস্থা থাকতে হবে। দৈহিক দিক দিয়ে হাত পা ও চক্ষু কর্মক্ষম হতে হবে। কারণ, যাদের এসব অঙ্গ বিকল, তাদের পক্ষে স্বীয় বাড়ী ঘরে চলাফেরাই দুস্কর। এমতাবস্থায় সেখানে যাওয়া ও হজের অনুষ্ঠানাদি পালন করা তার পক্ষে কিরূপে সম্ভব হবে? মহিলাদের পক্ষে মাহরাম ব্যক্তি ছাড়া সফর করা শরীয়ত মতে নাজায়েয। কাজেই মহিলাদের সামর্থ্য তখনই হবে, যখন তার সাথে কোন মাহরাম পুরুষ হজে থাকবে; নিজ খরচে করুক অথবা মহিলাই তার খরচ বহন করুক। এমনিভাবে কা’বা গৃহে পৌঁছার জন্যে রাস্তা নিরাপদ হওয়াও সামর্থ্যের একটি অংশ। যদি রাস্তা বিপজ্জনক হয় এবং জানমালের ক্ষতির প্রবল আশঙ্কা থাকে, তবে হজের সামর্থ্য নাই বলে মনে করা হবে।

ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, আয়াতে সামর্থ্য বলতে, বান্দার শারীরিক সুস্থতা এবং নিজের উপর কোন প্রকার কমতি না করে পাথেয় ও বাহনের খরচ থাকা বুঝায়। [তাবারী]

ইবনে আব্বাস বলেন, আয়াতে কুফরী বলতে বোঝানো হয়েছে এমন ব্যক্তির কাজকে, যে হজ্ব করাকে নেককাজ হিসেবে নিল না আর হজ্ব ত্যাগ করাকে গোনাহের কাজ মনে করল না। [তাবারী] মুজাহিদ বলেন, কুফরী করার অর্থ, আল্লাহ ও আখেরাতকে অস্বীকার করল। [তাবারী]

মোটকথা: বান্দা বড়-ছোট যে ধরনের কুফরীই করুক না কেন তার জানা উচিত যে, আল্লাহ তার মুখাপেক্ষী নয়। এ আয়াতে স্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হয়েছে যে, আল্লাহ্ তা’আলা তার সৃষ্টির কোন কিছুর মুখাপেক্ষী নয়। যদি সমস্ত লোকই কাফের হয়ে যায় তবুও এতে তার রাজত্বে সামান্য হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটবে না। পবিত্র কুরআনে বিভিন্ন স্থানে এ ঘোষণা দেয়া হয়েছে। যেমন, “তোমরা এবং পৃথিবীর সবাই যদি অকৃতজ্ঞ হও তারপরও আল্লাহ অভাবমুক্ত ও প্রশংসার যোগ্য।” [সূরা ইবরাহীম: ৮]

আরও বলেন, “অতঃপর তারা কুফরী করল ও মুখ ফিরিয়ে নিল। আল্লাহও (তাদের ঈমানের ব্যাপারে) ভ্ৰক্ষেপহীন হলেন; আর আল্লাহ অভাবমুক্ত, সপ্রশংসিত” [সূরা আত-তাগাবুন: ৬] সুতরাং তাঁর বান্দাদেরকে আনুগত্য করা এবং অবাধ্যতা থেকে দূরে থাকার নির্দেশ বান্দাদের উপকারার্থেই দিয়ে থাকেন। এ জন্যে দেন না যে, বান্দার আনুগত্য বা অবাধ্যতা আল্লাহ্র কোন ক্ষতি বা উপকার করবে। [আদওয়াউল বায়ান]

আল্লাহ তায়ালা আরো এরশাদ করেন -

আর তোমরা হজ্ব ও ‘উমরা পূর্ণ কর।(বাকারা -১৯৬)

আল্লাহ তায়ালা আরো এরশাদ করেন -

হজ্ব¡ হয় সুবিদিত মাসগুলোতে। তারপর যে কেউ এ মাসগুলোতে হজ্ব¡ করা স্থির করে সে হজ্বের সময় স্ত্রী-সম্ভোগ, অন্যায় আচরণ, ও কলহ-বিবাদ করবে না। আর তোমরা উত্তম কাজ থেকে যা-ই কর আল্লাহ্ তা জানেন আর তোমরা পাথেয় সংগ্রহ কর। নিশ্চয় সবচেয়ে উত্তম পাথেয় হচ্ছে তাকওয়া। হে বোধসম্পন্ন ব্যক্তিগণ ! তোমরা আমারই তাকওয়া অবলম্বন কর। (বাকারা -১৯৭)

আল্লাহ তায়ালা আরো এরশাদ করেন -

নিশ্চয়ই সাফা ও মারওয়া আল্লাহ্র নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত। কাজেই যে কেউ (কা’বা) ঘরের হজ্ব বা “উমরা সম্পন্ন করে, এ দু'টির মধ্যে সাঈ করলে তার কোন পাপ নেই। আর যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কোন সৎকাজ করবে, তবে নিশ্চয় আল্লাহ্ উত্তম পুরস্কারদাতা, সর্বজ্ঞ। (বাকারা -১৫৮)

আল্লাহ তায়ালা আরো এরশাদ করেন -

আর মানুষের কাছে হজের ঘোষণা করে দিন, তারা আপনার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং সব ধরনের কৃশকায় উটের পিঠে করে, তারা আসবে দুর-দুরান্তের পথ অতিক্রম করে। (হজ্ব -২৭)

ইবরাহীম 'আলাইহিস সালামণ্ডএর প্রতি আদেশ এই যে, মানুষের মধ্যে ঘোষণা করে দিন যে, বায়তুল্লাহর হজ্ব তোমাদের উপর ফরয করা হয়েছে। ইবনে আবী হাতেমা ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণনা করেন যে, যখন ইবরাহীম 'আলাইহিস সালামণ্ডকে হজ্ব ফরয হওয়ার কথা ঘোষণা করার আদেশ দেয়া হয়, তখন তিনি আল্লাহর কাছে আরয করলেনঃ এখানে তো জনমানবহীন প্রান্তর। ঘোষণা শোনার মত কেউ নেই; যেখানে জনবসতি আছে সেখানে আমার আওয়াজ কিভাবে পৌঁছবে? জবাবে আল্লাহ তা'আলা বললেনঃ আপনার দায়িত্ব শুধু ঘোষণা করা। বিশ্বে পৌছানোর দায়িত্ব আমার। ইবরাহীম 'আলাইহিস সালাম মাকামে ইবরাহীমে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করলে আল্লাহ তা'আলা তা উচ্চ করে দেন। কোন কোন বর্ণনায় আছে, তিনি আবু কুবাইস পাহাড়ে আরোহণ করে দুই কানে আঙ্গুলি রেখে ডানে-বামে এবং পূর্ব-পশ্চিমে মুখ করে বললেনঃ “লোক সকল! তোমাদের পালনকর্তা গৃহ নির্মাণ করেছেন এবং তোমাদের উপর এই গৃহের হজ্ব ফরয করেছেন। তোমরা সবাই পালনকর্তার আদেশ পালন কর।” এই বর্ণনায় আরো বলা হয়েছে যে, ইবরাহীম আলাইহিস সালামণ্ডএর এই আওয়াজ আল্লাহ তা'আলা বিশ্বের কোণে কোণে পৌঁছে দেন এবং শুধু তখনকার জীবিত মানুষ পর্যন্তই নয়; বরং ভবিষ্যতে কেয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ আগমনকারী ছিল, তাদের প্রত্যেকের কান পর্যন্ত এ আওয়াজ পৌছে দেয়া হয়। যার যার ভাগ্যে আল্লাহ্ তা'আলা হজ্ব লিখে দিয়েছেন, তাদের প্রত্যেকেই এই আওয়াজের জবাবে

"লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক " বলেছে। অর্থাৎ হাজির হওয়ার কথা স্বীকার করেছে। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেনঃ ইবরাহিমী আওয়াজের জবাবই হচ্ছে হজ্বে ‘লাব্বাইকা' বলার আসল ভিত্তি। [দেখুন- তাবারীঃ ১৪/১৪৪, হাকীম মুস্তাদরাকঃ ২/৩৮৮]

এ আয়াতে সেই প্রতিক্রিয়া বর্ণনা করা হয়েছে, যা ইবরাহীম আলাইহিস সালামণ্ডএর ঘোষণাকে সব মানবমণ্ডলী পর্যন্ত পৌঁছানোর কারণে কেয়ামত পর্যন্তের জন্য কায়েম হয়ে গেছে। তা এই যে, বিশ্বের প্রতিটি প্রত্যন্ত এলাকা থেকেও মানুষ বায়তুল্লাহর দিকে চলে আসবে; কেউ পদব্রজে, কেউ সওয়ার হয়ে। যারা সওয়ার হয়ে আসবে, তারাও দূর-দূরান্ত দেশ থেকে আগমন করবে। ফলে তাদের সওয়ারীর জন্তুগুলো কৃশকায় হয়ে যাবে। পরবর্তী নবীগণ এবং তাদের উম্মতগণও এই আদেশের অনুসারী ছিলেন। ঈসা 'আলাইহিস সালামণ্ডএর পর যে সুদীর্ঘ জাহেলিয়াতের যুগ অতিবাহিত হয়েছে, তাতেও আরবের বাসিন্দারা মূর্তিপূজায় লিপ্ত থাকা সত্ত্বেও হজ্বের বিধান তেমনিভাবে পালন করেছে, যেমন ইবরাহীম ‘আলাইহিস সালাম থেকে বর্ণিত ছিল। যদিও পরবর্তীতে আরবরা বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক অবস্থায় হজ্বের সঠিক পদ্ধতি পরিবর্তন করে নিয়েছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সে সমস্ত ভুলের সংশোধন করে দিয়েছিলেন।

হাদীস শরীফে এসেছে -

হযরত আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত নবী (সাঃ) বলেন, যে ব্যাক্তি আল্লাহর ঘর পর্যন্ত পোঁছার জন্য সম্পদের মালিক হয়েছে এবং ব্যায়ভার বহনের ও মালিক হয়েছে অথচ সে হজ্ব করল না সে ইহুদী হয়ে মরুক আর খ্রিষ্টান হয়ে মরুক তাতে আল্লাহর কিছু আসে যায় না।

হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন -আল্লাহ তাআলা বলেন, আমি যে বান্দাহকে সুস্থ রাখলাম তার রিজিকে বরকত দিলাম এবং তাকে দীর্ঘ ৫ বছর এ সুযোগ দেয়ার পরও আমার দরবারে (খানায়ে কাবায়) হাজির হলো না নিশ্চয়ই সে অভাগা - বঞ্চিত।

হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি এ ঘরে (অর্থাৎ কাবা ঘরে হজ্ব করতে) এলো, স্ত্রী সঙ্গম এবং কোনো প্রকার অশ্লীলতা ও ফিসক ফুজরীতে নিমজ্জিত হয়নি, তবে সেখান থেকে (এমন পবিত্র হয়ে) ফিরে আসে, যেমন নিস্পাপ অবস্থায় তার মা তাকে ভূমিষ্ঠ করে ছিলো। (মুসলিম)

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে গিয়ে বলেন হেলোকেরা, আল্লাহ তােমাদের জন্যে হজ্ব ফরজ করেছেন। অতএব হজ্ব¡ কর। (মুনতাকী)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত রাসূলে করীম (সঃ) বলেছেন, তােমরা হজ্ব ও উমরা পর পর সঙ্গে সঙ্গে আদায় কর, কেননা এ দু’টি কাজ দারিদ্র্য ও গুনাহ খাতা নিশ্চিহ্ন করে দেয়। যেমন রেত লোহার মরিচা ও স্বর্ণ - রৌপ্যের জঞ্জাল দূর করে দেয়। আর কবুল হওয়া হজ্বের সওয়াব জান্নাত ব্যতীত আর কিছুই নয়। (তিরমিযী, আবু দাউদ, মুসনাদে আহমদ)

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) বলেছেন, হজ্বের ইচ্ছা পােষণকারী যেন তাড়াতাড়ি তা সমাপণ করে ফেলে। কেননা সে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে, তার উট হারিয়ে যেতে পারে বা তার ইচ্ছা বাধাগ্রস্থ হয়ে পড়তে পারে। (ইবনে মাজাহ)

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (সাঃ) কে জিজ্ঞেস করা হল কোন আমল অধিক উত্তম? তিনি বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান। জিজ্ঞেস করা হল অত:পর কি? তিনি বললেন আল্লাহর পথে জিহাদ। জিজ্ঞেস করা হল তারপর কোন আমলটি সর্বোত্তম ? বললেন কবুল হওয়া হজ্ব (বুখারী ও মুসলিম শরীফ)

পরিশেষে মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট ফরিয়াদ তিনি যেন আমাদেরকে হজ্বে বাইতুল্লাহ ও জিয়ারতে মদিনা নসীব করুক। আমিন।

লেখক : ইমাম ও খতিব, বিষ্ণুপুর মনোহরখাদী মদিনা বাজার বাইতুল আমিন জামে মসজিদ, চাঁদপুর সদর, চাঁদপুর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়