প্রকাশ : ২৭ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০
সোর্সদের বিষয়ে সতর্ক থাকা দরকার
পুলিশ, নৌ পুলিশ, র্যাব, কোস্টগার্ড সোর্স ছাড়া তাদের অনেক অভিযানে সফলতা খুঁজে পায় না। এদের গোয়েন্দা জাল বিস্তৃতির ক্ষেত্রেও সোর্সের ভূমিকা থাকে। মোদ্দাকথা, সোর্স-নির্ভরতা এসব বাহিনীর জন্যে অনিবার্য বিষয়। সে কারণে সোর্সদের মধ্যে পুরানো ও অভিজ্ঞদের কেউ কেউ বিশ্বাসঘাতকতা করে এবং কৌশলী অপকর্মে লিপ্ত হয়। এমন অপকর্মের কথা বা গুঞ্জন মুখে মুখে থাকলেও গণমাধ্যমে সাধারণত আসে না। তারপরও গত ২১ এপ্রিল চাঁদপুর কণ্ঠে এমন অপকর্ম সংক্রান্ত একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া আরো কিছু গণমাধ্যমে সংবাদটি এসেছে। এর ফলে জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
চাঁদপুর কণ্ঠের সংবাদটির শিরোনাম হয়েছে ‘জেলে নৌকার ২২টি নোঙ্গর চুরি ॥ ১৬টি উদ্ধার করলো পুলিশ’। সংবাদটিতে লেখা হয়েছে, চাঁদপুরে রাতের আঁধারে অসহায় জেলেদের নৌকার ২২টি নোঙ্গর চুরি করে এনে বিক্রি করার সময় ১৬টি উদ্ধার করেছে মডেল থানা পুলিশ। এছাড়া জেলেদের জাল ও রশি সোর্সের কাছ থেকে ক্রয় করে নিয়ে যাওয়ার সময় হাতেনাতে আটক হয়েছে এক ক্রেতা।
চাঁদপুর সদরে জাটকা নিধন প্রতিরোধ অভিযানের নামে মৎস্য অধিদপ্তরের কিছু অসাধু কর্মকর্তা সোর্সের মাধ্যমে জাল নৌকা ও মাছ অন্যত্রে বিক্রি করার অভিযোগ করেছে ক্ষতিগ্রস্ত জেলেরা। চাঁদপুর-রায়পুর সড়কে গাছতলা ব্রিজের নিচে ডাঙ্গায় ছয়টি নৌকা উঠিয়ে রাখার পর সেখানে কোস্টগার্ডের সহযোগিতায় সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তানজিমুল ইসলাম ও জামিল অভিযান চালায়। জেলেরা নদীতে অভিযান মেনে নৌকাগুলো উপরে উঠিয়ে রেখে বাড়িতে চলে যায়। কিন্তু নদীতে চলমান অভিযানের সময় জেলে নৌকাগুলো থেকে ২২টি নোঙ্গর ও জালের রশি নিয়ে আসা হয়। নোঙ্গরগুলো তিন নদীর মিলনস্থলে ফেলে দেয়ার কথা থাকলেও সেগুলো কোস্টগার্ডের সোর্স নাসির, সোহেল ও স্পীডবোটের ড্রাইভার আলী আহমেদের মাধ্যমে বিক্রি করে ফেলে। চাঁদপুর রকেট স্টিমার ঘাট এলাকার ভাঙ্গারি ব্যবসায়ী তাজুর কাছে নোঙ্গরগুলো বিক্রি করে টাকা ভাগাভাগি করে নেয়। এই ঘটনা ক্ষতিগ্রস্ত জেলেরা জানতে পেরে চাঁদপুর মডেল থানা পুলিশকে অবগত করে। তারপর মডেল থানার এসআই শাহজাহান চাঁদপুর রকেট স্টিমার ঘাট এলাকায় রেলওয়ের পাম্প হাউজের পাশ থেকে ১৬টি জেলে নৌকার নোঙ্গর উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। পরবর্তীতে জেলেদের খোয়া যাওয়া জাল নোঙ্গর ও রশি রণাগোয়াল এলাকায় বিক্রি করেছে এমন তথ্য পুলিশকে জানালে একজনকে মালামালসহ আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়।
জেলেরা অভিযোগ করে বলেন, নদীতে অভিযানের নামে মৎস্য কর্মকর্তারা সোর্সদের মাধ্যমে জেলেদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে নৌকা থেকে সবকিছু ছিনিয়ে নিচ্ছে। গত দুদিন পূর্বে অভিযানের নামে নৌকার সবকিছু নিয়ে গিয়ে সোর্সদের মাধ্যমে বিক্রি করার পর পুলিশ সেগুলো উদ্ধার করে। কোস্টগার্ড সোর্স পরিচয়ে দক্ষিণ গুণরাজদীর নাসির, পুরাণবাজারের সোহেল ও স্পীডবোটের ড্রাইভার আলী আহাম্মদ অভিযান চলাকালীন সময়ে লক্ষ লক্ষ টাকার মাছ ধরে বিক্রি করেছে। এই সোর্সদের মাধ্যমে জেলেদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে নদীতে মাছ ধরার সুযোগ করে দেয় বলে এমন অভিযোগও উঠেছে। এই ঘটনায় যারা অপরাধী তিনি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
কোস্টগার্ড গণমাধ্যমকে জানায়, গাছতলা এলাকায় ডাকাতিয়া নদীতে মৎস্য কর্মকর্তা তানজিমুল ইসলাম ও জামিল কোস্টগার্ডের সহযোগিতায় অভিযান চালায়। সেখান থেকে জাল ও নোঙ্গর উদ্ধার করে মৎস্য কর্মকর্তাকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে তারা সেগুলো কী করেছে সেটি তাদের জানা নেই। এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট মৎস্য কর্মকর্তাকে মুঠোফোনে বেশ ক’বার ফোন করলে তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
আমরা কোস্টগার্ড ও মৎস্য বিভাগের জাটকা রক্ষা কার্যক্রমের সাফল্যের সংবাদ প্রায়শই প্রচার করি। তাদের ঝুঁকি ও সাহসিকতায় মুগ্ধ হতে হয়। কিন্তু নিয়োজিত সোর্সদের কার্যক্রম যদি আপত্তিকর হয়, তাহলে জনমনে নানা প্রশ্ন উত্থাপিত হওয়া এবং মুখরোচক আলোচনা হওয়া স্বাভাবিক। কাজেই সোর্সদের ব্যাপারে সতর্ক থাকা এবং তাদের ওপর নজরদারির বিষয়টিতে কোনোভাবেই হেলা করা যাবে না।