প্রকাশ : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩:৩১
মুক্তচিন্তা সংকুচিত: আজকের বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী হত্যার সেই বর্বর দর্শনই কি ভিন্নরূপে হাজির?
১৪ ডিসেম্বর: চিন্তা নিধনের উত্তরাধিকার বনাম গণতন্ত্রের পথে জাতীয়তাবাদী প্রত্যয়!

|আরো খবর
শিক্ষক, চিকিৎসক, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, গবেষক ও চিন্তাবিদদের নির্মমভাবে হত্যা করে তারা একটি সদ্যজন্ম নিতে যাওয়া স্বাধীন রাষ্ট্রকে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে পঙ্গু করে দেওয়ার চেষ্টা চালায়।
এই হত্যাকাণ্ড ছিল কেবল মানবতাবিরোধী অপরাধ নয়; এটি ছিল গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও মুক্তচিন্তার বিরুদ্ধে এক সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের রাজনৈতিক দর্শন অনুযায়ী, একটি রাষ্ট্রের প্রকৃত শক্তি তার জনগণের স্বাধীন চিন্তা, বহুমাত্রিক মত এবং নৈতিক বিবেকের বিকাশে নিহিত।
পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী জানত, সামরিকভাবে পরাজিত হলেও যদি বাঙালি জাতির বুদ্ধিবৃত্তিক নেতৃত্ব অক্ষুণ্ণ থাকে, তবে শোষণ ও আধিপত্যের রাজনীতি দীর্ঘস্থায়ী হবে না।
রায়েরবাজার, মিরপুর ও মোহাম্মদপুরের বধ্যভূমি আজও সাক্ষ্য দেয়—কর্তৃত্ববাদী রাজনীতি কিভাবে প্রথমে চিন্তাকে হত্যা করে।
স্বাধীনতার পর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের পূর্ণাঙ্গ ও নিরপেক্ষ বিচার নিশ্চিত হয়নি—এটি জাতির জন্য এক গভীর ব্যর্থতা।
ইতিহাস বিকৃতি, ভিন্নমত দমন এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান দলীয়করণ—এসবই বুদ্ধিবৃত্তিক নিধনের আধুনিক রূপ।
আজকের বাংলাদেশে যখন আমরা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সীমাবদ্ধতা, গণমাধ্যমের ওপর চাপ এবং শিক্ষাঙ্গনে দলীয় আধিপত্য লক্ষ্য করি, তখন ১৪ ডিসেম্বরের শিক্ষা আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে।
বুদ্ধিজীবীরা রাষ্ট্রের বিবেক। তাঁদের দায়িত্ব ক্ষমতার প্রশংসা করা নয়, বরং ক্ষমতার জবাবদিহি নিশ্চিত করা।
একটি সত্যিকারের জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র গড়ে ওঠে তখনই, যখন নাগরিক অধিকার নিশ্চিত হয় এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সম্মানিত হয়।
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা জানাতে হলে আমাদের রাজনৈতিক অঙ্গীকার হতে হবে—গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, বহুদলীয় ব্যবস্থার সুরক্ষা এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা।
শহীদ বুদ্ধিজীবীরা আমাদের কাছে কেবল স্মৃতি নন; তাঁরা গণতান্ত্রিক, জাতীয়তাবাদী ও মানবিক বাংলাদেশের পথনির্দেশক।
লেখক:
মোঃ জাকির হোসেন
তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক
চাঁদপুর জেলা বিএনপি
ডিসিকে / এমজেডএইচ








