মঙ্গলবার, ২০ মে, ২০২৫  |   ২৬ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে নেতাকর্মীদের ঢল

প্রকাশ : ১৯ মে ২০২৫, ১৯:৩৬

"দোস্ত, চোখের সামনে সব শেষ!" - ছেঁড়া খাতার আর্তনাদ, সিস্টেমের বধির কান

আব্দুল মান্নান সিদ্দিকী, মুন্সিগঞ্জ

২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার আবশ্যিক অংশ ১৩ মে শেষ হলেও ১৫ মে থেকে শুরু হয়েছে ব্যবহারিক পরীক্ষা, যা চলবে ২৫ মে পর্যন্ত। এই সময়ে দেশের নানা কেন্দ্রে ছড়িয়ে থাকা পরীক্ষার্থীদের মাঝে দেখা গেছে ভিন্নরকম এক অনুভূতি।

মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগরের একটি পরীক্ষাকেন্দ্রে আজ ১৯ মে ব্যবহারিক পরীক্ষা দিয়ে কেন্দ্র থেকে বের হয় দুই শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যকার কথোপকথন ছিল কষ্টের হলেও বাস্তবমুখী।

“দোস্ত, সারা বছর কত কষ্ট করে খাতায় ছবি আঁকলাম, লিখলাম... আর পিয়ন সাহেব এক টানে ছিঁড়ে ফেললেন খাতাটা!”

এই কথায় সহপাঠী কেবল হেসে মাথা নাড়ায়। আর পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা অভিভাবকরা মুচকি হাসলেও অনেকেই দুঃখ লুকাতে পারেননি।

পিয়ন কর্তৃক খাতা ছেঁড়ার দৃশ্য যেন প্রতীক হয়ে দাঁড়ায় পরীক্ষার্থীর মনোজগতে

স্থানীয় এক অভিভাবক বললেন, “এই খাতাগুলোই তো ওদের বছরের পরিশ্রমের স্মৃতি। কেউ কেউ রঙ করে আঁকে, কেউ আবার সুন্দরভাবে সাজিয়ে রাখে। সেটা এভাবে ছিঁড়ে ফেলা কষ্টদায়ক।”

একজন অভিজ্ঞ শিক্ষক জানালেন, “ব্যবহারিক খাতা সংরক্ষণ না করে এভাবে ছেঁড়া অবশ্যই অনুচিত। প্রয়োজনে সংরক্ষণাগারে জমা রাখা যেত।”

শ্রীনগর উপজেলার এক স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, “এটা দীর্ঘদিনের অভ্যাস, কিন্তু শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপের বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া উচিত।”

শিক্ষার্থীদের মানসিক উন্নয়নে প্রয়োজন সংবেদনশীলতা

একজন মনোবিজ্ঞানী বলেন, “এসএসসি পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীরা চরম মানসিক চাপে থাকে। পরীক্ষার পরে তাদের আবেগের মূল্য দেওয়া জরুরি। খাতা ছিঁড়ে ফেলার মতো দৃশ্য অনেক সময় মনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।”

শিক্ষা প্রশাসনের করণীয়

মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের এক কর্মকর্তার মতে, “ব্যবহারিক খাতা ছেঁড়ার নিয়ম নেই। এটি বিদ্যালয়ভেদে প্রচলিত অভ্যাস মাত্র। চাইলে বোর্ড থেকে নির্দেশনা দিয়ে এ ধরনের আচরণ বন্ধ করা যেতে পারে।”


এসএসসি পরীক্ষার্থীদের হৃদয়ের কষ্ট কখনো পরীক্ষার নম্বরের কাঠামোতে ধরা পড়ে না। তাদের মেধা ও পরিশ্রমের প্রতিচ্ছবি যদি এমনই অবহেলার শিকার হয়, তাহলে আগামী প্রজন্মের আবেগ, মনোবল ও মূল্যবোধ ক্ষতিগ্রস্ত হতে বাধ্য। শিক্ষা ব্যবস্থায় মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজনীয়তা আজ আরও বেশি।

ডিসিকে / এমজেডএইচ

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়