রবিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৭ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ২২:০৪

কৃষি উদ্যোক্তার বসতভিটা জবরদখলে ২ বছর কারাদণ্ড

চাঁদপুরে নতুন ভূমি আইন প্রয়োগে প্রথম রায়

চাঁদপুরে নতুন ভূমি আইন প্রয়োগে প্রথম রায়
অনলাইন ডেস্ক

মতলব দক্ষিণ উপজেলার বাড়ৈগাঁওয়ে জোরপূর্বক দখল করে ভবন নির্মাণের অভিযোগ আমলে নিয়ে নতুন প্রণীত ভূমি অপরাধ প্রতিকার ও প্রতিরোধ আইন, ২০২৩-এর আওতায় প্রথম দৃষ্টান্তমূলক রায় দিয়েছেন চাঁদপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট-০১-এর বিচারক ত্বন্ময় কুমার দে। গত ২০ এপ্রিল সি. আর. মামলা নং ৩৫/২০২৪-এ এই রায় দেন।

মামলাটি দায়ের করেন বাড়ৈগাঁও গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা মো. হাবিবুর রহমান। রায়ে আসামি তাজু পাটোয়ারীকে নতুন আইনের ৭(২) ও ১০ ধারায় এক বছর করে দু বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। তবে তাজুর স্ত্রী জেসমিনকে মামলার সকল অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়া হয়।

অভিযোগের বিবরণে জানা যায়, হাবিবুর রহমানের নিজস্ব বসতভিটার মধ্যে তাজু পাটোয়ারী জোর করে প্রবেশ করে ভবনের তিনটি পিলার নির্মাণ করেন এবং দুটি জানালা সম্পূর্ণরূপে অবরুদ্ধ করে দেন। ঘটনার সময় আদালতের ১৪৫ ধারায় নিষেধাজ্ঞা বলবৎ ছিলো, তবুও তা উপেক্ষা করে নির্মাণকাজ চালানো হয়।

আদালতের নির্দেশনা লঙ্ঘনের অভিযোগে পুলিশ দণ্ডবিধির ১৮৮ ধারায় মামলা রুজু করে এবং পরবর্তীতে বাদী ভূমি অপরাধ প্রতিকার ও প্রতিরোধ আইন, ২০২৩ অনুযায়ী সি.আর. ৩৫/২০২৪ মামলাটি দায়ের করেন। বাদী পক্ষ আদালতে স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত একাধিক প্রতিবেদনও দাখিল করেন, যাতে ঘটনাটি পরিষ্কারভাবে উপস্থাপিত হয়।

এই মামলায় চাঁদপুরের ম্যাজিস্ট্রেট মিথিলা রানীর নির্দেশে পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) সরেজমিন তদন্ত করে এবং বাদীর পক্ষে সঠিক প্রতিবেদন বিজ্ঞ আদালতে দাখিল করে, যেখানে আসামির জোরপূর্বক প্রবেশ ও নির্মাণ কার্যক্রম প্রমাণিত হয়। এতে আদালত আসামিকে ৪(১)(ক), ৭(১)(২), ৮ ও ১০ ধারাতে অভিযুক্ত করেন। তবে শাস্তি নির্ধারণ করা হয় ৭(২) ও ১০ ধারা অনুযায়ী—এক বছর করে দু বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা (অনাদায়ে এক মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড)। অপর

আসামিকে ৪(১)(ক), ৭(১) ও ৮ ধারায় খালাস দেওয়া হয় এই মর্মে যে, এসব ধারায় বিচার করার এখতিয়ার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নয়।

বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবুল বাশার বলেন, আসামি তাজু পাটোয়ারী হাবিবুর রহমানের বাড়িতে জোর করে প্রবেশ করে তিনটি পিলার নির্মাণ করেন, যার ফলে দুটি জানালা অবরুদ্ধ হয়। এটি শুধু জমি দখল নয়, বরং তার বসবাসের পরিবেশ, আলো-বাতাস, নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনায় সরাসরি হস্তক্ষেপ।

তিনি আরও বলেন, “আইনের ভাষায় ‘ব্যবস্থাপনা’ বলতে বোঝায়—বাড়ির আলো-বাতাস প্রবাহ, চলাচল সুবিধা, গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা। আসামির নির্মাণে সেই বাসযোগ্যতা ভেঙ্গে পড়ে, যা ৪(১)(ক) ধারা অনুযায়ী অপরাধ হিসেবে প্রমাণিত হওয়া উচিত ছিল। আমরা রায়ের এই অংশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবো।”

কৃষি উদ্যোক্তা মো. হাবিবুর রহমান ২০১৪ সাল থেকে ভার্মি কম্পোস্ট/জৈব সার উৎপাদন ও নিরাপদ খাদ্য সরবরাহে সক্রিয়। তিনি বলেন, আমি দেশপ্রেমিক একজন কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে দেশের মাটি ও মানুষের জন্যে কাজ করছি। অথচ নিজের ঘরের মধ্যেই জবরদখলের শিকার হয়েছি। আদালতের এই রায় প্রাথমিক ন্যায়ের প্রতীক, তবে আমি চাই এই অবৈধ নির্মাণ দ্রুত উচ্ছেদ হোক এবং প্রশাসন কঠোর ভূমিকা নেক।

এই রায়কে চাঁদপুর জেলার ইতিহাসে ভূমি অপরাধ আইনের প্রথম কার্যকর রায় হিসেবে মনে করছেন সচেতন ও পর্যবেক্ষক মহল।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়