প্রকাশ : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩:৪৩
ফাঁসির আসামির কারাগার থেকে পলায়ন
ছয় মাস পর জানলো দেশ

বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ(বামে), মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মুনতাসির আল জেমি(ডানে) (ছবি সংগৃহীত)
বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মুনতাসির আল জেমি ছয় মাস আগে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পালিয়ে গেলেও এ তথ্য এতদিন চাপা ছিল। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে আজ আদালতে শুনানির সময়।
|আরো খবর
শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পরদিন, গত ৬ আগস্ট, জেমি কাশিমপুর কারাগার থেকে পালিয়ে যায় বলে জানিয়েছেন আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জসীম উদ্দিন।
বরকত উল্লাহ বলেন, "আজ শুনানির শেষ পর্যায়ে বিচারপতি জানতে চান, কোন আসামির পক্ষে কোন আইনজীবী আছেন। তখনই আদালতে জানানো হয় যে মুনতাসির আল জেমি ছয় মাস আগে পালিয়েছে। অথচ এতদিন এ নিয়ে কোনো তথ্য জানানো হয়নি।"
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জসীম উদ্দিন জানান, আদালতে শুনানির সময় কারা কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে যে জেমি ৬ আগস্ট পালিয়ে গেছে। একই সময়ে আসামিপক্ষের আইনজীবীও অনুপস্থিত ছিলেন।
ফাঁসির আসামি পালালো, কিন্তু কেউ জানলো না!
জেল থেকে একজন ফাঁসির আসামির পালানো যেমন চাঞ্চল্যকর, তেমনি ছয় মাস ধরে বিষয়টি গোপন রাখা আরও রহস্যজনক। আবরার ফাহাদের ছোট ভাই ও বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাইয়াজ ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, "ফাঁসির আসামি তো কনডেম সেলে থাকার কথা ছিল, সে পালায় কীভাবে?" তিনি আরও বলেন, "পালানোর পরও তথ্য গোপন রাখা প্রমাণ করে, তাকে ধরতে কোনো চেষ্টা করা হয়নি।"
কারা কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা নাকি গভীর ষড়যন্ত্র?
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ঘটনা কারা ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা এবং দায়িত্বপ্রাপ্তদের ব্যর্থতা স্পষ্ট করে। সাধারণত ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের কড়া নিরাপত্তায় রাখা হয়। তাহলে কীভাবে জেমি পালাতে পারলো? এ ঘটনায় কারা কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
এ মামলায় আরও তিনজন আসামি আগেই পলাতক ছিল। এখন মুনতাসির আল জেমির পালানো পুরো বিষয়টিকে নতুন মোড় দিয়েছে। বিচারপ্রক্রিয়ায় এমন ফাঁকফোকর থাকলে ন্যায়বিচার কীভাবে সম্ভব, সে প্রশ্ন এখন দেশের মানুষের মনে।
সরকারের নীরবতা এবং ভুক্তভোগী পরিবারের হতাশা
আবরার ফাহাদের পরিবার বিচারের জন্য দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করছে। অথচ ছয় মাস ধরে একজন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির পলায়নের ঘটনা তারা জানতে পারেননি। বরকত উল্লাহ বলেন, "এটা কীভাবে সম্ভব যে এত বড় ঘটনা ঘটে গেল, অথচ আমাদের কিছুই জানানো হলো না?" তিনি দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে আদালতের নির্দেশে এ ঘটনায় তদন্তের দাবি উঠেছে।
প্রশ্নের মুখে বিচার ব্যবস্থা
এই ঘটনায় দেশের বিচার ব্যবস্থা ও কারাগারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কীভাবে এতদিন বিষয়টি গোপন রাখল, সেটাও তদন্তের দাবি রাখে।
এখন দেখার বিষয়, সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো কী ব্যবস্থা নেয় এবং দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হয় কিনা। নইলে ন্যায়বিচারের প্রশ্নে সাধারণ মানুষের আস্থা আরও কমে যাবে।
ডিসিকে/এমজেডএইচ