বুধবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৪  |   ২৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   সৌদি প্রবাসীদের অনলাইন প্রতারণা থেকে সতর্ক করলো বাংলাদেশ দূতাবাস
  •   বরিশালে কৃষক দলের হামলায় জাতীয় নাগরিক কমিটির কর্মসূচি পণ্ড
  •   শ্রীনগরে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস উদযাপন
  •   গুমের ভয়াবহ চিত্র: তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে চাঞ্চল্যকর তথ্য
  •   চাঁপাইনবাবগঞ্জে দেয়ালে ‘জয় বাংলা’ লেখা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা গ্রেপ্তা

প্রকাশ : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭:০৮

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল ও পঞ্চদশ সংশোধনীর কয়েকটি ধারা বাতিল:

হাইকোর্টের ঐতিহাসিক রায়

প্রতিবেদক: মোঃ জাহিদুল ইসলাম সুমন খন্দকার
হাইকোর্টের ঐতিহাসিক রায়

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্তির পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে আদালত গণভোটের বিধান পুনর্বহাল করেছেন এবং সংবিধানের ৭ক, ৭খ ও ৪৪(২) অনুচ্ছেদ বাতিল ঘোষণা করেছেন। আদালত বলেন, এই ধারাগুলো সংবিধানের মৌলিক কাঠামো ও গণতন্ত্রকে নষ্ট করেছে।

আজ মঙ্গলবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ ঐতিহাসিক রায় দেন। দীর্ঘ শুনানি শেষে আদালত পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের বেশ কয়েকটি ধারা বাতিল ঘোষণা করলেও পুরো সংশোধনী আইনকে বাতিল করেননি।

রায়ের মূল বিষয়বস্তু

হাইকোর্টের রায়ে গণতন্ত্র, মৌলিক অধিকার ও সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। রায়ে আদালত উল্লেখ করেন:

১. তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্তি:

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্ত করা হয়েছিল। আদালত বলেছেন, এই বিলোপ সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং তা গণতন্ত্রের পরিপন্থী।

২. গণভোটের বিধান পুনর্বহাল:

পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে গণভোটের বিধান বিলুপ্ত করা হয়েছিল। আদালত বলেছেন, গণভোট একটি গণতান্ত্রিক অধিকার এবং তা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর অংশ। তাই এই বিধান পুনর্বহাল করা হলো।

৩. ৭ক, ৭খ এবং ৪৪(২) অনুচ্ছেদ বাতিল:

৭ক অনুচ্ছেদে বলা ছিল, সংবিধান বাতিল, স্থগিত বা পরিবর্তনের যে কোনো প্রচেষ্টা অপরাধ।

৭খ অনুচ্ছেদে সংবিধানের মৌলিক বিধানাবলি সংশোধন অযোগ্য বলে উল্লেখ করা হয়েছিল।

৪৪(২) অনুচ্ছেদে সংসদের ক্ষমতায় অন্য কোনো আদালতকে নির্দিষ্ট ক্ষমতা দেওয়ার বিধান ছিল।

আদালত বলেছেন, এই তিনটি অনুচ্ছেদ সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তাই এগুলো বাতিল করা হলো।

রিট আবেদন ও শুনানির প্রেক্ষাপট

২০১১ সালের ৩০ জুন আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পাস হয় এবং ৩ জুলাই গেজেট প্রকাশিত হয়। এই সংশোধনীতে সংবিধানের ৫৪টি অনুচ্ছেদে সংযোজন, পরিমার্জন ও পরিবর্তন আনা হয়েছিল।

পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ‘সুশাসনের জন্য নাগরিক’ (সুজন) এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি ২০১১ সালের ১৮ আগস্ট হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। আদালত প্রাথমিক শুনানি শেষে রুল জারি করেন এবং সংশোধনী আইন কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চান।

পরে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, গণফোরামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তি আদালতে ইন্টারভেনার হিসেবে যুক্ত হয়ে তাদের যুক্তি উপস্থাপন করেন। অন্যদিকে, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেনও পঞ্চদশ সংশোধনীর ১৬টি ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আরেকটি রিট করেন।

দীর্ঘ শুনানি শেষে আদালত আজ এই ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করেন।

আদালতের পর্যবেক্ষণ

রায়ে আদালত বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনীতে আনা কিছু পরিবর্তন গণতন্ত্রকে সীমাবদ্ধ করেছে এবং সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর ক্ষতি করেছে। বিশেষ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপের বিষয়টি দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

আদালত আরও বলেন, ভবিষ্যৎ জাতীয় সংসদ জনগণের মতামত গ্রহণ করে গণভোটের মাধ্যমে সংবিধানের সংশোধনীগুলো পর্যালোচনা করতে পারবে।

গণতান্ত্রিক চর্চায় নতুন দিগন্ত

বিশ্লেষকদের মতে, এই রায়ের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র চর্চার একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন হলো। রায়ে গণভোটের বিধান পুনর্বহাল এবং সংবিধানের মৌলিক কাঠামো রক্ষার গুরুত্ব নতুন করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

সংক্ষিপ্ত মন্তব্য

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল ও গণভোটের বিধান সংবিধানে ফিরে আসায় রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার সূত্রপাত হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আদালতের এই রায় দেশের গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকার সুরক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়